সৈয়দ আবদাল আহমদ
‘লোকে বলে বলেরে ঘরবাড়ি ভালা না আমার’। হাসন রাজার এই বিখ্যাত গান শুনে কিছু কৌতুহলী মানুষ তার ঘরবাড়ি দেখতে গেলেন। হাসন রাজা নিজেই আগ্রহী হয়ে তার ঘরবাড়ি তাদের দেখাতে নিয়ে গেলেন। নিজের কবরের জায়গা দেখিয়ে বললেন, ‘এই দেখুন আমার বাড়ি।’
প্রভাতকুমার শর্মার লেখায় ‘মরমী কবি হাসন রাজা’ এ রকম বর্ণনা আছে। হাসন রাজার খুব ভক্ত ছিলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ । হাসান রাজার প্রতি হুমায়ূনের প্রবল আগ্রহের শুরুটা হয়েছিল তার লেখা গান শুনে। হবিগঞ্জের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। রাতে ১৩-১৪ বছরের এক কিশোরী হারমোনিয়াম বাজিয়ে তাকে গেয়ে শুনিয়েছিলেন হাসন রাজার ‘নিশা লাগিলোরে বাঁকা দুই নয়নে নিশা লাগিলোরে।’ গানের সুন্দর বাণী ও সরল সুরে সেদিন তিনি বিমোহিত হয়েছিলেন। এরপর মহসীন হল থেকে সেলিম চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে প্রায়ই তিনি শুনতেন হাসন রাজার গান। সেলিম চৌধুরী তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মহসীন হলে থাকেন। শিল্পী হিসেবে তখনো বিখ্যাত হননি।
হাসান রাজাকে জীবিতাবস্থায় হুমায়ূন আহমেদ দেখেননি এবং দেখার কথাও নয়। কিন্তু সুনামগঞ্জে গিয়ে তিনি তার বিখ্যাত ‘ঘর’ দেখে আসেন। না, শুধু ‘ঘর’ দেখাই নয়, হাসন রাজার ব্যবহৃত তরবারি, কাঠের বউলাওয়ালা খড়ম এবং আচকানও দেখেন। হাসন রাজার প্রপৌত্র কবি দেওয়ান মমিনুল মউজউদ্দিন তাকে সব ঘুরে ঘুরে দেখান। হুমায়ূন আহমেদ লিখেন, ‘আমার ছেলেমানুষি আগ্রহ দেখে মমিনুল বললেন, ‘হাসন রাজা সাহেবের আচকানটা কি একটু পরে দেখবেন?’ আমি আচকান পরে ওনার খড়ম পায়ে দিয়ে কিছুক্ষণ গম্ভীর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলাম, শুধু তলোয়ারটা হাতে নিলাম না।’
‘হাসন রাজার বাড়ি’ শিরোনামে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অদ্ভুত সুন্দর একটি কবিতা আছে।
‘এখন শুধু মুখোমুখি বসে রব আমি আর
হাসন রাজা কও তো হাসন রাজা কি বৃত্তান্তে বানাইলে হে মনোহর বাড়ি?
শিওরে সমন, তুমি ছয় ঘরে বসাইলে জানালা
চৌখুপ্নি বাগানে এক বাঞ্ছাকল্পতরুর
কেরারি। দুনিয়া আন্ধার তবু তোমার নিবাসে কত
পিদিমের মালা।’
হাসন রাজার বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল সংবাদপত্রের পাতায় চোখ বুলাতে গিয়ে। আমাদের সংবাদপত্রে আজকাল নানা ধরনের বাড়ির খবর প্রকাশ করছে। না, দেশী বাড়ি নয়। বিদেশী বাড়ি। সুদূর কানাডায় ‘বেগমপাড়া’, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, দুবাইয়ের বাড়ির-ফ্ল্যাট। অতি সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে আমেরিকায় কারা কারা বাড়ি করেছেন। খবরে পড়লাম ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিলাসবহুল ১৪টি বাড়ির মালিক। এমডি সাহেব অবশ্য খবরটি ছাপা হওয়ার পরদিনই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ১৪টি বাড়ির খবর সঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রে তার একটিমাত্র বাড়ি আছে। তাও সেটি তার নামে নয়, স্ত্রীর নামে। তাকসিন সাহেবের ১৪ বাড়ির খবরের রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি টাটকা খবর পড়ার সৌভাগ্য হলো। সরকারি দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো: আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাজার মূল্যে ৪২ কোটি টাকায় ৯টি বাড়ি ফ্ল্যাট কিনেছেন। আমরা যে আর গরিব নেই, উন্নত হচ্ছি বিদেশে আমাদের নাগরিকদের বাড়ি কেনা ও বাড়ির মালিক হওয়ার খবরগুলো সে কথা জানিয়ে তৃপ্তি অনুভব করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
গত ৬ অক্টোবর ২০২২ বণিক বার্তায় প্রকাশিত খবর থেকে আমরা জানতে পারি- মালয়েশিয়া ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পে বাংলাদেশীরা উপরের দিকে আছে। এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী সেকেন্ড হোম নিয়ে সেখানে বসবাস এবং আনন্দ সময় কাটাচ্ছেন। স্ত্রীরা সেখানে স্থায়ীভাবে আছেন। সাহেবরা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন।
কানাডার ‘বেগমপাড়া’য় যেসব বাংলাদেশীর বাড়ি রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের তালিকা চেয়েছিল দুদক। কারণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, তার কাছে কানাডার বেগমপাড়ার ২৮ জন বাংলাদেশী বাড়ির মালিকের তালিকা আছে। সেই তালিকা দুদক এখনো পায়নি। কানাডায় অর্থ পাচারকারীদের তালিকা ও তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট দু’বছর আগে একটি রুলও জারি করেছিলেন। কিন্তু তারও কোনো সুরাহা হয়নি। তবে বেগমপাড়ায় বাড়ি কেনা বন্ধ হয়নি। সংবাদপত্রে এ নিয়ে নানা খবরও বের হয়। এতে বলা হয়, কানাডার টরন্টোতে কয়েক শ’ বাংলাদেশ বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। এসব বাড়ির মালিকানা সংশ্লিষ্ট পরিবারের নারী সদস্যদের নামে। সহজ কথায় অর্থ পাচারকারী রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ীরা তাদের স্ত্রীদের নামে এসব বাড়ি কিনেছেন। এ জন্যই বেগমপাড়া নাম হয়েছে। তবে কয়েক দিন আগে একটি দুঃসংবাদ বের হয়। সেটি হচ্ছে আপাতত কানাডায় আর বাড়ি কেনা যাবে না। কারণ সে দেশের সরকার আগামী দু’বছর বিদেশীদের জন্য কানাডায় বাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এবার আসি দুবাইয়ে। গত ১১ জানুয়ারি ২০২৩ প্রথম আলোর এক খবরে বলা হয়, কানাডার বেগমপাড়ার পর এবার দুবাইয়ে বাড়ি কেনায় হিড়িক পড়েছে। সেখানে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশীরা। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ১২ কোটি ২৩ লাখ দিরহাম বা ৩৪৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বাড়ি ফ্ল্যাট কিনেছেন বাংলাদেশীরা। হাইকোর্টে গত বৃহস্পতিবার দেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশীর সম্পদ কেনার অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে এক রিট দায়ের হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক কোটি দিরহাম বা ২৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে ‘গোল্ডেন ভিসা’ পাওয়া যায়। এ সুযোগ নিতে অর্থ পাচারকারীরা দুবাইয়ের বাড়ির মালিক হচ্ছেন।
সমকালের এক খবরে বলা হয়, লন্ডনের অভিজাত এলাকাতেও জমি-বাড়ির ক্রেতা এখন বাংলাদেশীরা। সেখানে ক্রেতাদের ৪১ শতাংশ বিদেশী। এর মধ্যে বাংলাদেশীদের স্থান নবম। বাড়ি কেনায় জাপানিদের চেয়েও এগিয়ে আছে বাংলাদেশীরা। যুক্তরাজ্যের আবাসন খাতে ২০১০ সালে বাংলাদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল ১৫টি, ছয় বছরে তা বেড়ে ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ৫২টিতে। পরবর্তী পাঁচ বছরে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২০২১ সালে জমি-বাড়ি কেনার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৭টিতে। এবার নতুন শিরোনাম আমেরিকায় বাংলাদেশীরা বাড়ি কিনছেন।
আমেরিকায় গোলাপের বাড়ি সমাচার
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ (ওসিসিআরপি) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো: আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের আমেরিকায় বাড়ি কেনা নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে। প্রতিবেদনটি তাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে। ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ দৈনিক প্রথম আলো এ নিয়ে রিপোর্ট করেছে। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের এমপি আবদুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন।
বিষয়টি তিনি নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করেননি। তিনি ২০১৪ সাল থেকে নিউ ইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউ ইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তি (ফ্ল্যাট ও বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি বা বাংলাদেশী টাকায় বর্তমানে ৪২ কোটি টাকা।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুরের-৩ আসন থেকে এমপি হন গোলাপ। তিনি গত ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। এর আগের কমিটিতে ছিলেন দলের দফতর সম্পাদক। ওসিসিআরপির করা প্রতিবেদন সম্পর্কে এমপি গোলাপ পূর্ণ প্রতিক্রিয়া এখনো জানাননি। তবে মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তিনি মাদারীপুর-৩ আসনের নিজ নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত রয়েছেন। বিষয়টি ভালোভাবে জেনে পরে প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
ওসিসিআরপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পাঁচ কনডোমিনিয়াম কিনেছিলেন এমপি গোলাপ। সে সময় সম্পত্তির মূল্য ছিল ১৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া আশপাশের ভবনগুলোতে ছয় লাখ ৮০ হাজার ডলার মূল্যের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন তিনি। নিউ ইয়র্কে কেনা এসব সম্পত্তির নথিপত্র বলছে, সম্পত্তিগুলো নগদ অর্থে কেনা হয়েছে। এগুলোর মালিকানায় রয়েছেন এমপি গোলপের স্ত্রী গুলশান আরা খুকুও। আওয়ামী লীগের এমপি হওয়ার পর গোলাপ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে আরো একটি বাড়ি কিনেছিলেন। ওই সম্পত্তির মূল্য ১২ লাখ ডলার। তিনি দ্বৈত নাগরিক ছিলেন। বাংলাদেশ ও আমেরিকার। তবে ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন বলে খবরে বলা হয়।
বাংলাদেশ ও আমেরিকায় বিশেষ করে নিউইয়র্কে এখন এমপি গোলাপ আলোচনায়। আমেরিকার বাড়ি, নির্বাচনী হলফনামায় ওই সম্পত্তি না দেখানো, দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং টাকা পাচার নিয়ে চলছে এসব আলোচনা। এ নিয়ে সাংবাদিকরা নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীরকে প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে ইসি কমিশনার আলমগীর বলেন, এমপি গোলাপের বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ইসির কাজ প্রার্থী যে হলফনামা দেবেন, সেটি প্রকাশ করা। যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা ইসিকে দেয়া হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুদক এ ব্যাপারে প্রমাণ পেলে তারা যদি ব্যবস্থা নিয়ে জানায় তাহলে ইসি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। এমপি গোলাপ যদি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে থাকেন, সম্পদ বিবরণীতে না দেখান তাহলে তা তদন্ত করে দুদক ও এনবিআর মামলা করতে পারে।
এমপি গোলাপের আমেরিকায় বাড়ি কেনা, বিদেশে এমপি-কর্মকর্তাদের বাড়ি-গাড়ির খবরের তদন্ত দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুর হক। এ বিষয়ে প্রথম আলোর জরিপে ৯৬ শতাংশ নাগরিক মনে করেন বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।
তাকসিমের বাড়ি নিয়ে অনুসন্ধানে দুদক
ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি-গাড়ি ক্রয়সহ মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুদক। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনার পরই দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়। দুদকের অফিস আদেশে বলা হয়, তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে গত ১৩ বছরে বিদেশী ঋণে করা বড় বড় প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্নভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জলেসসহ বিভিন্ন শহরে বিলাসবহুল বাড়ি ও ১৪টি গাড়ি ক্রয় করেছেন বলেও অভিযোগ এসেছে। তবে তাকসিম এ খান বলেছেন নিউ ইয়র্কে শুধু তার স্ত্রীর নামে একটি বাড়ি রয়েছে।
হুন্ডি ও টাকা পাচার
টাকা পাচার এখন বাংলাদেশের একটি আলোচিত বিষয়। নানা কায়দায় বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতির হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিকভিত্তিক পাচার ওভার ইনভয়েসিং-আন্ডার ইনভয়েসিং ও ভুয়া ইনভয়েসিং, হুন্ডিভিত্তিক পাচার, কুরিয়ার-ক্যারিয়ারভিত্তিক পাচার, বিনিময়ভিত্তিক পাচার, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড প্রিপেইড কার্ড ও অন্যান্য বাহকপত্র এবং অনুমোদিত প্রবাসী আয় কর্মসূচির আওতায় শিক্ষা ও চিকিৎসার নামেও অর্থ পাচার হচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হচ্ছে। দুর্নীতিবাজরা দুবাই বা অন্যান্য দেশে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। তাদের বলেছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে টাকাটা এখানে আমাদের দিয়ে দিন। আমরা আপনার বাড়ি কিংবা যেখানে বলবেন সেখানে টাকা পৌঁছে দেবো। এ কায়দায়ও টাকা পাচার হচ্ছে।
স্ত্রীদের কত কদর!
একসময় বাংলাদেশে স্ত্রীরা খুবই অবহেলিত ছিলেন স্বামীদের কাছে। স্বামীর নির্যাতনের শিকার হতেন তারা। মোহরানার টাকা স্ত্রীদের পরিশোধের কথা বেমালুম ভুলে যেতেন স্বামীরা। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। স্ত্রীদের এখন খুব কদর। স্বামীরা বাড়ি-গাড়ি তাদের নামেই করেছেন। সম্পত্তির বেশিরভাগই তাদের নামে করা হচ্ছে। যেমন দেশে, তেমনি বিদেশে। কানাডার বেগম পাড়া, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম, দুবাইয়ের বাড়ি ফ্ল্যাট, আমেরিকা-যুক্তরাজ্যে স্ত্রীদের জয়জয়কার। স্বামীরা তাদের নামে করছেন এসব সম্পদ। তার বিনিময়ে এসব বেগমপাড়ায় সাহেবরা মাঝে মধ্যে গিয়ে আরাম আয়েশ করে আসছেন। স্ত্রীরাও বেশ আনন্দেই জীবন কাটাচ্ছেন। মোহরানার টাকা তাদের কাছে তুচ্ছ! কারণ স্বামীর সম্পদের মূল পাহারাদারই এখন তারা!
হাসন রাজার ‘ঘর’
লেখার শুরুতে হাসন রাজার বাড়ি দিয়ে শুরু করেছিলাম। হাসন রাজার বাড়ি আসলে কবর। মানুষের প্রকৃত ঠিকানা সেটাই। যত সম্পদের মালিকই হন না কেন সাড়ে তিন হাত জায়গাই আসল ঠিকানা। এই যে বিদেশে এত এত বাড়ি, কে থাকবে সেখানে? চোখ বুঝলে কী আছে এর মূল্য? অথচ এর জন্য কত পেরেশান। একদল মানুষ এক কেজি চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই শীতে একটা কম্বল কিংবা একটা চাদরের জন্য কী আহাজারি! অথচ আরেক দল মানুষের দেখুন কী শান-সওকত? দেশে অংখ্য বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়ার পরও বিদেশে একের পর এক বাড়ি কিনছেন। থাকার জন্য একজন মানুষের কত বাড়ির দরকার? হে বিদেশের বাড়ির মালিকরা! আপনাদেরকে কি একদিন এর জবাব দিতে হবে না?
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব
abdal62@gmail.com