স্বাধীকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা ।। ডাঃ মনোয়ার হোসেন

প্রবন্ধ-কলাম বাংলাদেশ
শেয়ার করুন

১৯৪৭ সালে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল- একটি পাকিস্তান এবং আরেকটি ভারত। মুসলমান এবং হিন্দু জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে এ দুটি রাষ্ট্রের জন্ম। স্বাধীন পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান।

ভারতের দুই প্রান্তের দুটি অংশ নিয়ে কিভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের অধীনে কোন পরাধীন রাষ্ট্র ছিল না। এটি স্বাধীন পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। গুরুত্বপূর্ণ এজন্য বলছি, কারণ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই অংশের নেতৃবৃন্দই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করেছিলেন।

জানিয়ে রাখা ভালো, পাকিস্তানের মূল রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠিত কোন দল নয়, বরং এটি ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানের তিনজন গভর্নরের মধ্যে প্রথমজন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পশ্চিম পাকিস্তানের, তারপরের খাজা নাজিম উদ্দিন পূর্ব পাকিস্তানের এবং স্যার ইস্কান্দার মির্জা পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা বাঙালী। খাজা নাজিম উদ্দিন ছাড়াও বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, নুরুল আমিন এরা সকলেই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী হিসেবে সমগ্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ৮ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৫জনই ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি।

৪৭ থেকে ৬৯ পর্যন্ত পাকিস্তানের ২২ বছরের পুরো সময় ধরেই গণপরিষদের স্পিকার ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী। গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১ বছর স্পিকার ছিলেন। তার পর থেকে ৬৯ পর্যন্ত তমিজউদদীন খান, আব্দুল ওয়াহাব খান, ফজলুল কাদের চৌধুরী, আব্দুল জাব্বার খান ক্রমান্বয়ে স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যারা সবাই ছিলেন বাঙালি। গভর্নরশীপ পরবর্তী এবং ১৯৬৫ সালের সামরিক শাসনের আগ পর্যন্ত স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম এবং একমাত্র প্রেসিডেন্ট ছিলেন বাঙালি স্যার ইসকান্দার মির্জা।

১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তান মারাত্মকভাবে অধিকার হারায়। এর মধ্যে ৭০ এর নির্বাচনে জনগন ভোট দিয়ে শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করে। কিন্তু পাক সামরিক জান্তা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ জনগণের উপর সামরিক হামলা চালায়।

তখন পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু করে, যেটি পরবর্তীতে স্বাধীকার আন্দোলনে রূপ নেয়। সেই স্বাধিকার আন্দোলন থেকে জন্ম নেয় স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব পাকিস্তান নিজেদের জন্যে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। যার নাম স্বাধীন বাংলাদেশ।

বাংগালীর স্বাধীকার আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ফিরে আসে বারবার। স্বৈরশাসন ও জনগণের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে লড়তে হয় আামাদের। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে থেকে ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে সংগ্রামী জনতা বিজয় ছিনিয়ে এনছে। বর্তমানে খুন, গুম আর জনগণের ভোটাধিকার হরনের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। ২০০৯ থেকে এই দূঃশাসনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন গণঅভ্যুত্থান ছাড়া পরিসমাপ্তি আশা করা যায় না। প্রয়োজন আরেকটি স্বাধীকার আন্দোলন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *