সিলেটবাসীর ভালোবাসায় মুগ্ধ সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত

সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে, শরীরও আর আগের মতো চলে না। যেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রয়াত বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের সেই গানের মতোই- চলিতে চরণ চলে না, দিনে দিনে অবশ হই’। এরপরও যখন মঞ্চে উঠে হুইলচেয়ারে বসে কথা বলতে শুরু করলেন, সবাই তন্ময় হয়ে কেবল তাঁর কথাই শুনলেন। সিলেটের মানুষের প্রিয় এই ব্যক্তিত্ব দুবারের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সাংসদ আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বুধবার রাত আটটায় সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আবুল মাল আবদুল মুহিতকে গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা দেওয়া হয়। নগরের কিনব্রিজ চাঁদনীঘাট এলাকায় এ অনুষ্ঠান হয়। সেখানেই ৮৮ বছর বয়সী এই খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতায় শোনান তাঁর জীবন ও পরিবারের গল্প। যদিও মাঝেমধ্যে কথায় খেই হারিয়েছেন। তবে সেটাও বুঝতে পেরে নিজেই বক্তব্যে বলেছেন, মাঝে মাঝে শব্দ পেতে ভুল হয়ে যায়, বয়স হয়তো তার জন্য যথেষ্ট দায়ী।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বক্তৃতায় নিজের জীবনকে মহাতৃপ্তি আর মহাপ্রাপ্তির’ বলে উল্লেখ করেছেন। বক্তব্যে তিনি সিলেটের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রসঙ্গও এনেছেন। মুহিত বলেন, আমি একান্তভাবে সিলেটের সন্তান। নিজের পিতৃভূমিতে আমি অতিথি, এটা গর্বের বিষয়। নিজের অরিজিনে এসে এমন সম্মান পাওয়া, এমন স্বীকৃতি পাওয়া আমার জন্য আনন্দের।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত করোনা পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকার বাসা থেকে বাইরে খুব একটা বেরোননি। প্রায় আড়াই বছর ধরে তাঁর সিলেটেও আসা হয়নি। কয়েক দিন আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর সুস্থ হয়েই সিলেটে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এই অবস্থায় তাঁকে গত সোমবার সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা বিমানে করে সিলেটে নিয়ে আসেন। এরপর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে সাবেক অর্থমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতে আজীবন সুকীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষও উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রতি ভালোবাসা জানিয়েছে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়রের কণ্ঠের অসুস্থতার কারণে তাঁর পক্ষে লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী। মেয়রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের একজন আলোকিত ব্যক্তিত্ব। একজন রাষ্ট্রচিন্তক। সফল অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের অগ্রযাত্রায় বিপুল অবদান রেখেছেন। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপই সিটি করপোরেশন সম্মাননা প্রদান করেছে।

শুরুতেই আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলী আমজাদের ঘড়ির স্বর্ণখচিত রেপ্লিকা তুলে দেন মেয়র ও কাউন্সিলররা। এরপর তাঁরা সাবেক অর্থমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে নগরবাসীর পক্ষে নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সিলেটের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক-পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সাধারণ নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ২৫ জানুয়ারি ছিল তাঁর ৮৮তম জন্মদিন। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া আবদুল মুহিত বরাবরই একজন মেধাবী মানুষ। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। পরের বছর একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার আগে অংশ নেন ভাষা আন্দোলনে। ছাত্রজীবনে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

১৯৫৬ সালে আবদুল মুহিত যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। সিএসপিতে যোগ দিয়ে তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্ব নেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন। ওই সময়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *