নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশে সংগীত প্রণেতাগণের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, মেধাস্বত্বের বিপরীতে সারা বিশ্ব থেকে রয়্যালটি আদায় ও বিতরণ বিষয়ে সরকার অনুমোদিত দেশের একমাত্র সিএমও হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ লিরিসিস্ট, কম্পোজার্স অ্যান্ড পারফর্মারস সোসাইটি বা বিএলসিপিএস। ব্যাবহারিক কাজে আন্তর্জাতিক মানের সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের ও দেশের বাইরের নানা সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিএলসিপিএস।
এরই ধারাবাহিকতায় ৪ জুন, মঙ্গলবার বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস ও বিএলসিপিএস যৌথভাবে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে দিনব্যাপী আয়োজন করে ‘কপিরাইট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সংস্থাসমূহের পরিচালনার নিমিত্তে ওয়াইপো মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম’ শীর্ষক এক মেন্টরশীপ প্রোগ্রাম। আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল ডব্লিওআইপিও এবং জাপান কপিরাইট অফিস।

এই মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে ডব্লিওআইপিও (ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন), সিসাক (বিশ্বব্যাপী সিএমওগুলোর আন্তর্জাতিক কনফেডারেশন), এবং আইপিআরএস (ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটি)-এর প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ প্রদান ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএলসিপিএস সিইও হামিন আহমেদ, ওয়াইপো’র কপিরাইট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মিইউকি মোনরোয়িং এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়-এর অতিরিক্ত সচিব নাফরিজা শ্যামা। কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলাদেশ কপিরাইট রেজিস্ট্রার মোঃ দাউদ মিয়া, এনডিসি (অতিরিক্ত সচিব)।

দিনব্যাপী আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ মোট ৫টি সেশনে অনুষ্ঠিত হয় এ মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম। সেশনগুলো হলো- স্থানীয় সিএমও’র প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে কালেকটিভ ম্যানেজমেন্ট ও নতুন প্রকল্প গ্রহণে ডব্লিউআইপিও’র কার্যক্রম, বিশ্বজুড়ে সংগীত প্রণেতাদের নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতিনিধিত্ব করা এবং কার্যকরভাবে তাদের কাছে রয়্যালটি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য সিসাক এর ভূমিকা ও উদ্যোগ সমূহ, সংগীত প্রণেতা ও সংগীত শ্রোতা/ভোক্তাদের জন্য সৃজনশীল ইকোসিস্টেম তৈরিতে স্থানীয় সিএমওগুলোর ভূমিকা এবং সিএমওগুলো কি অবদান রাখতে পারে, বাংলাদেশে কপিরাইট ও রিলেটেড রাইটসের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতে সংগীত প্রণেতা এবং সৃজনশীল শিল্পকে সমর্থন করার জন্য বিএলসিপিএস যে সকল সহযোগিতা দিতে পারে। এবং সর্বশেষ সেশনে বিএলসিপিএসের বর্তমান কার্যক্রম, ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন হামিন আহমেদ। প্রতিটি সেশনে ছিল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর পর্ব।
প্রতিটি সেশন পরবর্তী সময়ে মেধাস্বত্ব, রয়্যালটি কালেকশন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন সিসাক এর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক বেঞ্জামিন এনজি, ওয়াইপো’র কপিরাইট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মিইউকি মোনরোয়িং, সিসাক উপদেষ্টা সাতোশি ওয়াতানাবে, আইপিআরএস (ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটি)-এর সিইও রিকেশ নিগম, আইপিআরএস (ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটি)-এর চিফ ইনফরমেশন অফিসার সুহৃত ভট্টাচার্য এবং বাংলাদেশ কপিরাইট রেজিস্ট্রার মোঃ দাউদ মিয়া, এনডিসি।

আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন- নকীব খান, শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, হামিন আহমেদ, ফোয়াদ নাসের বাবু, মাকসুদুল হক, সুজিত মোস্তফা, মানাম আহমেদ, প্রিন্স মাহমুদ, হাসান, শেখ মনিরুল ইসলাম টিপু, বালাম, অর্ণব, আলিফ আলাউদ্দিন, লাবিক কামাল গৌরব, শওকত আলি ইমন, আলি সুমন, ফাহিম ফয়সাল, গুঞ্জন রহমান, জুয়েল মোর্শেদ, হৃদয় খান, রাহুল আনন্দ, জুনায়েদ ইভান প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইট মো. মনজুরুর রহমান এবং বর্তমান কপিরাইট ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক।

এছাড়াও বাংলাদেশের সংগীত প্রণেতাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিনিধিগণ; রেডিও, টেলিভিশন, ক্যাসেট-সিডি, বিভিন্ন প্রকার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, টেলকো, কনসার্ট ও মিউজিক্যাল ইভেন্ট আয়োজক সংস্থাসহ সংগীতের প্রকাশ, প্রচার ও বিপণন কার্যক্রমে জড়িত বিভিন্ন মাধ্যমের প্রতিনিধিগণ, গীতিকবি, সুরকার ও শিল্পীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিগণ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে আগত বিশিষ্ট সাংবাদিকবৃন্দ দিনব্যাপী এই মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন।
▶️ দেখুন কপিরাইট সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি-পার্ট ১ (নির্মাণ, ফাহিম ফয়সাল)
সময়ের পরিক্রমায় সারা পৃথিবীতেই এখন কপিরাইট একটি বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ২৭-এ দেয়া হয়েছে এর স্বীকৃতি। এ বিষয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ সচেতনতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছে; প্রণয়ন করেছে আইন ও বিধি; প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের দেখভাল এবং সুরক্ষার প্রেক্ষিতে কাজ করা সময়বান্ধব উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বব্যাপী ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মানুষের Intellectual Property (IP) তথা বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিসমূহ সংরক্ষণ এবং এই সংক্রান্ত তথ্য এবং নীতিমালা প্রণয়ন/সংরক্ষণের জন্য কাজ করে আসছে। বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের অধ্যায় ৯ এর ধারা ৩৮ থেকে ৪৪-এ ব্যক্তির মেধাস্বত্ব সুরক্ষার জন্য করণীয় সম্পর্কে বিধান রাখা হয়েছে।
‘বিএলসিপিএস’ (BLCPS)?
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সিএমও (CMO) তথা যৌথ ব্যবস্থাপনা সংস্থা হিসেবে ‘বাংলাদেশ লিরিসিস্ট, কম্পোজার্স এন্ড পারফর্মারস সোসাইটি’-বিএলসিপিএস (BLCPS-Bangladesh Lyricist Composers & Performers Society) বিগত ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কাজ করে আসছে।

বিএলসিপিএস তার ব্যবহারিক কাজে আন্তর্জাতিক মানের সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের ও দেশের বাইরের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। BLCPS বাংলাদেশের সংগীত শিল্পের জন্য প্রথম CMO তথা যৌথ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি বাংলাদেশের গীতিকার, সুরকার, গায়ক এবং পরিবেশকদের অধিকার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালে সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়। BLCPS এর মাধ্যমে Lyricists, Composers এবং Performers দেশে ও দেশের বাইরে থেকে তাদের প্রাপ্য রয়্যালটি বুঝে পাবেন।

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে একাত্ম হয়ে BLCPS বাংলাদেশের সংগীতসংশ্লিষ্টদের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে দৃঢ় ভূমিকা পালন করে যেতে বদ্ধপরিকর। বর্তমানে BLCPS-এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একটি অলাভজনক ট্রাস্ট্রি বোর্ডের অধীনে, যার চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও ভাইস চেয়ারম্যান সুরকার শেখ সাদী খান।
‘সিএমও’ (CMO)?
CMO (Collective Management Organization) হলো সরকার অনুমোদিত সেই কর্তৃপক্ষ, যারা এর নিবন্ধিত সদস্যদের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে এবং মেধাস্বত্বের বিপরীতে প্রাপ্য রয়্যালটি আদায় করে থাকে। এই সংস্থা মেধাস্বত্বের অপব্যবহার প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রথম সিএমও হিসেবে বিএলসিপিএস’কে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশের সংগীত প্রণেতাদের যথাযথ অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং প্রাপ্য সম্মানী/রয়ালটি আদায় ও বিতরণে বিএলসিপিএস-এর সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস সর্বদা কার্যকর ও দিকনির্দেশনাধর্মী ভূমিকা পালন করে আসছে।
▶️ দেখুন কপিরাইট সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি-পার্ট ২ (নির্মাণ, ফাহিম ফয়সাল)
‘সিসাক’ (CISAC)?
CISAC (The International Confederation of Societies of Authors and Composers) হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত বিষয়াদি ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত সংস্থাসমূহের আন্তর্জাতিক কনফেডারেশন। যা ১৯২৬ সালে গঠিত হয়। এই আন্তর্জাতিক কনফেডারেশনটি লেখক-সুরকারদের জন্য কাজ করা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কনফেডারেশন। পৃথিবী জুড়ে ১১৬টি দেশে, ২২৫টি CMO এবং ৫০ লক্ষেরও বেশি নির্মাতাদের সাথে নিয়ে CISAC বর্তমানে সংগীত, অডিওভিজ্যুয়াল, নাটক, সাহিত্য এবং ভিজ্যুয়াল আর্টের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে।

বিশ্বজুড়ে মেধাভিত্তিক স্বার্থ সুরক্ষার জন্য এবং এই সংক্রান্ত স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য আজ থেকে প্রায় ২৪৭ বছর আগে ১৭৭৭ সালে, পশ্চিমের দেশ ফ্রান্সে গঠিত হয়েছিলো এমন এক সংস্থা, যা বর্তমানে Collective Management Organization বা CMO নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ব্যক্তিবর্গ এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যোগাযোগ, স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রযুক্তি বিনিময়ের লক্ষ্যে ১৯২৬ সালে একটি সম্মিলিত কনফেডারেশন গঠন করেন; যা International Confederation of Societies of Authors and Composers বা CISAC নামে পরিচিত। লেখক ও সুরকারদের এই আন্তর্জাতিক কনফেডারেশনটিকে বলা হয় লেখক-সুরকারদের জন্য কাজ করা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কনফেডারেশন। পৃথিবী জুড়ে ১১৬টি দেশে, ২২৫টি CMO এবং ৫০ লক্ষেরও বেশি নির্মাতাদের সাথে নিয়ে CISAC বর্তমানে সংগীত, অডিও-ভিজ্যুয়াল, নাটক, সাহিত্য এবং ভিজ্যুয়াল আর্টস এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে।
‘ওয়াইপো’ (WIPO)?
জাতিসংঘের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা WIPO (World Intellectual Property Organization), বিশ্বব্যাপী ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মানুষের Intellectual Property (IP) তথা বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিসমূহ সংরক্ষণ এবং এই সংক্রান্ত তথ্য এবং নীতিমালা সংরক্ষণের জন্য কাজ করে আসছে।