বাংলাদেশে গত কয়েকদিনের মতো মঙ্গলবার বিক্ষোভ সমাবেশ করছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। অনেক স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে চার শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-সহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করতে শুরু করে। ফলে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বগুড়া-সহ অনেক শহরের প্রধান সড়কগুলো অচল হয়ে যায় এবং মহাসড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাও সড়কে অবস্থান নেয়ায় কয়েকটি স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটে। রংপুরে লাঠিচার্জ ও গুলি করে পুলিশ । এসব সহিংসতায় ঢাকায় দুইজন, রংপুরে একজন, চট্টগ্রামে তিনজনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে।

গতকাল সোমবার সারা দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের হামলা, কোটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার এবং কোটা প্রথার যৌক্তিক সমাধানের দাবিতে মঙ্গলবার নতুন করে বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের হামলায় ঢাকায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে সোমবারে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। এর আগে, রবিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর করা এক মন্তব্যের পর ওই রাতেই নতুন করে ছাত্রদের বিক্ষোভ শুরু হয় ঢাকা-সহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এরপর সোমবার ঢাকাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং অ্যামনেষ্টির নিন্দা
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান শিক্ষার্থী বিক্ষোভের ঘটনা তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানান তিনি।
“আমরা ঢাকা ও বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থী বিক্ষোভের বিষয়ে সচেতন ও পর্যবেক্ষণ করছি, যেখানে দুজন নিহত হয়েছে এবং শত শত আহত হয়েছে,” বলছিলেন তিনি। তবে মি. মিলার দুইজন নিহত হবার যে তথ্য দিয়েছেন, তা বিবিসি নিশ্চিত করতে পারেনি। এদিকে, মি. মিলারের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মি. মিলার বলেছেন, “মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা যেকোনো ক্রমবিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য বিষয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতার নিন্দা জানাই।” যারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনাও জানান মি. মিলার।
এদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন মঙ্গলবার দুপুরে এক বিবৃতিতে বলেছেন, “মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুইজনের মৃত্যুর যে দাবি করেছেন, তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।” “যাচাই না করে ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্য সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে,” বলেন মিজ সাবরিন।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সারাদেশে কোটা বিরোধী বিক্ষোভে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি ‘বিক্ষোভকারীদের পূর্ণ নিরাপত্তা এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য’ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা
কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের স্কুল কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। স্থগিত করা হয়েছে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষাও। মঙ্গলবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এম খায়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। একই সময় বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য সকল শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা।
বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত ঐ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানান হয়েছে, বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও আগামী ২১ তারিখ থেকে আগের রুটিনেই চলবে পরীক্ষা। – বিবিসি বাংলা