অনুবাদ মাসুম খলিলী :
এক. পিছনে ফিরে দেখুন এবং সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানান। সামনে তাকান এবং তাঁকে বিশ্বাস করুন। এটি এমন একটি পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সর্বোত্তম উপায় যা তার নৈতিক কম্পাস হারিয়েছে।
দুই. আপনি হয়তো জানেন না সামনে কি আছে কিন্তু আপনি এর রচয়িতাকে জানেন। তাকে বিশ্বাস করুন এবং দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যান।
তিন. যখন আপনার উপর খারাপ কিছু এবং অবিচার আপতিত হয়, তখন পরাভুত হবেন না। ধৈর্য ধারণ করুন। আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া কোন কিছুই এলোমেলো নয়। সর্বশক্তিমান সবকিছু জানেন এবং দেখেন। তিনি অবশ্যই এসব বিষয়ে যত্ন নেবেন।
চার. আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ আমরা আমাদের ফোন বন্ধ রাখতে পারি না। পিতামাতা ও শিশুরা মোবাইল ডিভাইসে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে। তাই মুখোমুখি কথাবার্তার সময় তাদের কমে যায়। আপনার ডিভাইসের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করুন এবং সুস্থ পারিবারিক বন্ধন তৈরি করতে শুরু করুন।
পাঁচ. আপনি যখন লোকদের কাছ থেকে খুব অল্প প্রত্যাশা করেন অথবা কিছুই আশা করেন না, তখন আপনি সহজে হতাশ হবেন না। অন্যের কাছ থেকে আপনি যত বেশি প্রত্যাশা করবেন ও চাহিদা রাখবেন ততই আপনি হতাশ হবেন। অন্যকে দান ও সহায়তা করার দিকেই মনোনিবেশ করুন। এটি হবে অধিকতর সন্তুষ্টির এক অভিজ্ঞতা। সর্বশক্তিমান আপনাকে এর প্রচুর প্রতিদান দেবেন।
পূনশ্চঃ
এক. এই দিন ও এই যুগে কে সত্যিকারের বন্ধু কে আর নকল কে তা বলা কঠিন। এমনকি সবচেয়ে ‘ভালো’ মানুষও আপনাকে বোকা বানাতে পারেন। তাই আপনি জীবনের মধ্য দিয়ে যান এই আশায় যে লোকেরা আন্তরিক ও প্রকৃত হবেন। তবে হতাশ হওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকুন। এটা জীবনেরই অংশ। মানুষ আপনাকে কষ্ট দেবে। শুধুমাত্র সর্বশক্তিমানই আপনাকে সুস্থ ও স্বস্তিতে রাখতে পারেন।
দুই. আপনার নিজের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে খারাপ বা দোষী মনে করবেন না নিজেকে। এটি মোটেই স্বার্থপরতার কাজ নয়। আসলে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি আপনাকে আরও ইতিবাচক জীবনযাপনে সহায়তা করবে। আপনাকে নিজের যত্ন নিতে হবে, নয়তো অন্যকে দেওয়ার মতো কিছুই আপনার হাতে থাকবে না। মনে রাখবেন, এই প্রচেষ্টায় আপনি বেশ মূল্যবান।
তিন. যারা আপনাকে ভিলেনের মতো দেখানোর জন্য বাইরে রয়েছেন তাদের কথা মনে রাখুন। তারা কখনই পুরো ঘটনাটি বলে না। কেবল সেই অংশটি চয়ন করে যা আপনাকে খারাপ দেখায়। তাদের একটি এজেন্ডা রয়েছে এবং তারা এর শেষ পর্যন্ত যাবে। তাদের ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা বন্ধ করুন। তাদের নাটকের অংশ হবেন না। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে মিথ্যা তা সর্বশক্তিমান প্রমাণ করবেন।
চার. সর্বশক্তিমান, আমাদের সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। এটি হতে পারে,আমাদের মুখের মিথ্যার আকারে, অথবা আমাদের পিছনে, ক্ষতিকারক কথা ও কাজ, অথবা হতে পারে লোকদের খারাপ উদ্দেশ্যের আকারে।
পাঁচ. সর্বশক্তিমান। আপনি আমাদের জন্য যা আদেশ করেছেন তা নিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট করুন। আপনি সবকিছুর উপর পুরো নিয়ন্ত্রণে আছেন তা জেনে আমরা যেন ভালোভাবে ধৈর্য ধারণ করতে পারি। আমাদের অব্যাহতভাবে মনে করিয়ে দিন যে এই পৃথিবীতে কোন কিছুই চিরস্থায়ী হয় না। আমাদের সেরা আচরণের দিকে পরিচালিত করুন, আমাদের পাপসমূহকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের অন্তরকে পবিত্র করুন।
দ্রষ্টব্যঃ
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর রাসুল (সা.)–কে স্বপ্নটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে
নিরাপদে—তোমাদের কেউ কেউ মস্তক মুণ্ডন করবে আর কেউ কেউ কেশ কর্তন করবে। তোমাদের কোনো ভয় থাকবে না। আল্লাহ জানেন, তোমরা যা জানো না। এ ছাড়া তিনি তোমাদিগকে দিয়েছেন এক সদ্য বিজয়। তিনি তাঁর রাসুল (সা.)–কে পথ নির্দেশ ও সত্য-দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, অপর সমস্ত দ্বীনের ওপর একে বিজয়ী করার জন্য। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সুরা ফাতহ ২৭-২৯)
* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট