পরিবারের প্রায় সবাইকে হাসপাতালে রেখেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব আল হাসান। দলের হয়ে সাকিব অবদান রেখেছেন ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজ জয়ে। খেলার প্রতি সাকিবের এমন নিবেদন দেখে তাকে প্রাণ খোলা অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা।
গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানান সাবেক পেসার। মাশরাফি বলেন, ‘সাকিবের যেটা হয়েছে, বাসার ৪-৫ জন অসুস্থ ছিল। আমাদের অবশ্যই সাকিবের ত্যাগটা দেখতে হবে। সে চাইলে চলে আসতে পারতো। সে থেকে গিয়ে দলকে সাপোর্ট দিয়েছে। এটা অবিশ্বাস্য, কারণ এক-দ্ইুজন না, সবাই অসুস্থ ছিল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার সে সিরিজটা জিততে চেয়েছিল। এটা কিছুটা স্বার্থপরের মতো বলা হয়ে যাবে, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে। কারণ দিন শেষে তার পরিবারের সবাই অসুস্থ ছিল। দিন শেষে এটা সাকিবের সিদ্ধান্ত ছিল। সাকিব দুই দিক সামলে দারুণভাবে নিতে পেরেছে, এটা আমি মনে করি হ্যাটস অফ টু সাকিব।’
সিরিজ জয়ের পর সাকিব ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন। সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচে তিনি বল হাতে ২ উইকেট ও ব্যাট হাতে ১৮ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন। এ ছাড়া প্রথম ওয়ানডেতে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। ৩১ মার্চ থেকে টেস্ট সিরিজ শুরু হলেও প্রথম ম্যাচে সাকিবের খেলা অনিশ্চিত। তবে পরিবারের সদস্যরা সুস্থ হলে দ্বিতীয় টেস্টের আগে আবার দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে পারেন। মাশরাফি কথা বলেছেন তাসকিনকে নিয়েও। আইপিএলে তাসকিন আহমেদকে চেয়েছিল লখনউ সুপার জায়ান্টস। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ থাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অনাপত্তিপত্র দেয়নি, তাসকিন নিজেও দেশের হয়ে খেলতে চেয়েছিলেন এই সময়টাতে। এমন ত্যাগ স্বীকারে তাকে পুরস্কৃত করা উচিত বলে মনে করেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
মাশরাফি বলেছেন, ‘অবশ্যই (পুরস্কার দেয়া উচিত)। আপনি যদি অ্যান্ডারসন এবং ব্রডের দিকে তাকান, ইসিবি কিন্তু তাদেরকে সবসময় ক্ষতিপূরণ ঠিক না এই পুরস্কারটা দেয়। যেহেতু তারা আইপিএল না খেলে দেশকে সার্ভিস দিচ্ছে, তাদেরকে ন্যূনতম পুরস্কার দেয়া। তখন আসলে ক্রিকেটারদের ভালোলাগা কাজ করে। তাহলে আমরা টেস্ট ক্রিকেট কেন, যে কোনও ক্রিকেট খেলার জন্য প্রস্তুত।’
এর আগে নিজের ফেসবুক পোস্টেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে মাশরাফি মনে করিয়ে বলেছিলেন, নিয়ম যেন সবার জন্য প্রযোজ্য হয়, ‘শুধু একটাই খটকা, নিয়ম যাই হোক, তা যেন সবার জন্যই প্রযোজ্য হয়। তাহলে দলের সবার মানসিকতা সুন্দর ও সুস্থ থাকবে, যা বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে জরুরি।’
৩১ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ, তাসকিনকে আইপিএলের ছাড়পত্র দিলে তিনি এই টেস্ট সিরিজ খেলতে পারতেন না। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দেও আছেন তিনি। আইপিএলে যেতে না পারার বিষয়টি জেনেই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে নেমেছিলেন। বিদেশের মাটিতে প্রথমবার ৫ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচ ও সিরিজসেরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর দলের ওপর যে প্রত্যাশা বাড়ছে। এজন্য পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সতর্ক উপায়ে এগোনোর পরামর্শ দিলেন মাশরাফি মুর্তজা।
প্রত্যাশার চাপে ক্ষতি হতে পারে কি না প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক অধিনায়ক বলেছেন, ‘এটা নির্ভর করছে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় যত থাকবে, সে তত চাপ নিবে। ভালো খেললে মানুষ ভালো কথা বলবে, খারাপ খেললে সমালোচনা করবে এটাই স্বাভাবিক। ওই খেলোয়াড় কীভাবে নিচ্ছে বিষয়গুলোকে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় খেলোয়াড়রা সবাই পরিণত। তারা জানে দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজটা সহজ ছিল না আর সামনের সিরিজও সহজ হবে না। প্রত্যাশা থাকবেই। নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে হবে- আমার চলাফেরা বা কথাবার্তা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমি যেন প্রত্যাশার বাইরে চলে না যাই।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্ক হয়ে থাকা উচিত মনে করেন মাশরাফি, ‘সোশ্যাল মিডিয়া সবসময় ডেঞ্জারাস। যেকোনো মানুষের জন্যই, আর খেলোয়াড়দের জন্য তো অবশ্যই। সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই রকমের কথা আসে। এমন না এটা ভুল জায়গা। তবে কোন কথা কীভাবে প্রভাব ফেলছে সেটা খেলোয়াড়দের বুঝতে হবে। খেলোয়াড় যদি সবকিছু সামলাতে পারে তাহলে তো ভালোই। না পারলে বুঝতে হবে এখানে থামা উচিৎ নাকি তার সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকতে হবে।’
আগামী ৩১ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। সাকিবের প্রথম টেস্ট খেলা হচ্ছে না। তবে পারিবারের সদস্যদের সুস্থ হওয়া সাপেক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে পারেন তিনি।