সাঈদ চৌধুরী :
কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির ইংরেজি ও নাটক বিভাগের অংশীদারিত্বে এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সহায়তায় সফলভাবে প্রদর্শিত হল ছায়া নাটক ‘SHADE’। ম্যাসেজ কালচারাল গ্রুপ কর্তৃক সঞ্চালিত নাটকটি বেশ দর্শকপ্রিয় হয়েছে। জনপ্রিয় সংগঠক কাউন্সিলার মুহিব চৌধুরীর লেখা ও পরিচালনায় ‘শ্যাড’ নাটকে শিল্পীরা দ্যুতি ছড়িয়েছেন। নাটকে পারফর্মেন্স করেন ম্যাসেজ কালচারাল গ্রুপের গোলজার আহমদ, নওশাদ মাহফুজ, শহিদুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, মাহফুজ এলাহী তারেক, আজিজুল হাকিম, সাঈদুল ইসলাম, জাহিদুল আলম মাসুদ, জুবায়দা মুনিম, আনোয়ার হুসাইন অনু, জাহাঙ্গীর আলম, আবু তাহের সাইফুল্লাহ, আহমাদুল আলম প্রমুখ।
বাংলা নাটক ২০২৪ উৎসবে সফলভাবে প্রদর্শিত হয়েছে মেসেজ কালচারাল গ্রুপের ছায়া নাটকটি। ২০ বছর ধরে বাংলা থিয়েটার বার্ষিক নাটক অনুষ্ঠান উদযাপন করে আসছে। উৎসবটি ইংল্যান্ড জুড়ে বিভিন্ন থিয়েটার গ্রুপ দ্বারা পরিবেশিত হয়। ২০১৮ সাল থেকে ম্যাসেজ কালচারাল গ্রুপ লন্ডন ধারাবাহিকভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। ‘শ্যাড’ হল এই উৎসবে তাদের ষষ্ঠ প্রযোজনা।
নাটকে অ্যাবসার্ড রূপকল্প এবং বাংলার মেটাফর চমৎকার ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। জীবনের বিভিন্ন দিকের ছায়াপথ ভাবনার জগৎকে বিকশিত করেছে। অভিনয়ের পারঙ্গমতা উপস্থিত সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। অভিজ্ঞদের মত বেশ কয়েকজন তরুণ শিল্পীও অভিনয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন।
সফল নাটক মঞ্চায়নের পর ম্যাসেজ কালচারাল গ্রুপের শিল্পীদের সম্মাননা ও সার্টিফিকেট প্রদান করেছে মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এমসিএ)। সোমবার সন্ধ্যায় ইস্ট লন্ডনের বারাকা ইটারিতে সংগঠনের কালচারাল ডিপার্টমেন্টের ডাইরেক্টর ডা. মনোয়ার হোসাইন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং শিল্পীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন।
এর আগে, সাউথ এশিয়ান কালচার এন্ড হেরিটেজ তথা দক্ষিণ এশীয় ঐতিহ্য উদযাপনের অংশ হিসেবে লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা‘র আয়োজনে ইস্ট লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে ১৭ আগস্ট সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল চমৎকার নাশীদ সন্ধ্যা ‘নাইট অব ডিভোশন’। সেখানেও ম্যাসেজ কালচারাল গ্রুপের শিল্পীদের পরিবেশিত গানে ‘সুরের ছোঁয়া’য় মুগ্ধ হয়েছেন শ্রোতারা। একটি অসাধারণ নাতে রসুল ছিল ‘চাঁদের চেয়ে সুন্দর তুমি’। “চাঁদের চেয়ে সুন্দর তুমি – নবী আমার সাল্লেআলা / সুখে দুখে রাসূল তোমার – প্রিয় হাবীব আল্লাহ তায়ালা। / তোমার নূরের রওশানিতে – ধূসর ধরা উঠলো মেতে / উঠলো মেতে থেকে থেকে – সাগর বুকে উর্মিমালা। / তোমার নামের মোহন বাঁশি – করে আমার মন উদাসী / ওগো নবী কামলিওয়ালা – তোমার নামে মিটাই জ্বালা। / রাসূল নামের গজল গেয়ে – সারা জাহান ব্যাকুল হয়ে / তোমার প্রেমের আলপনাতে – সুধায় ভরে গানের মালা।’
সেদিন অপূর্ব এই গানটি একঝাক শিল্পী এমন সুন্দর করে গেয়েছেন, উপস্থিত সকলে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তা শুনছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ গানের ভিডিও আপলোড করেছেন অনেকে। নেটিজেনদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে গানটি। জনপ্রিয় শিল্পী নওশাদ মাহফুজের সাথে জাহিদুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন আনু, সাঈদুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, জাহাঙ্গির আলম, গোলজার আহমদ, আবু তাহের সাইফুল্লাহ, আজিজুল হাকিম তানবীর, মাহফুজ এলাহী তারেক প্রমুখ একসাথে দারুণ কন্ঠে গেয়েছেন। মুগ্ধ হয়েছেন ভক্তরা। অনুষ্ঠানে সিলেটি ভাষার একটি গান দর্শকদের মাঝে তরঙ্গ সৃষ্টি করে। ‘বিয়ে শাদী দেখলে আমার অন্তর কান্দে লুকাইয়া – সময় কালে অইল না আমার বিয়া’। দর্শকদের অনেকেই জানালেন, ‘হুনিয়া যে ভালা লাগছে’। “ফুটপাতে পড়ে থাকা জীর্ণ বস্ত্র পড়া অনাহারী অসহায়া দুখিনি – সে যদি তোমার প্রিয় মা হতো’ এই গাণে অশ্রু ঝরেছে বহুজনের চোখে। এমন শিক্ষনীয় গান অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যকে পূর্ণতা দিয়েছে।” আর মায়ের গান, আধ্যাত্মিক গান ইত্যাদি ছিল বাড়তি পাওনা। টিকেট করে হলে ঢুকা সার্থক হয়েছে বলে দর্শকমন্ডলির প্রতিক্রিয়ায় জানা গেছে।
মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন-এমসিএ’র কালচারাল ডিপার্টমেন্টের ডাইরেক্টর ডা. মনোয়ার হোসাইনের সার্বিক তত্বাবধানে শহীদুল ইসলাম ও সাঈদুল ইসলামের উপস্থাপনায় বাংলা, উর্দু ও ইংরেজিতে প্রতিটি গান দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছে। অনুষ্ঠানে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা রোকশানা বেগম, আব্দুল্লাহ আল মুনিম, জাহিদুল আলম মাসুদ প্রমুখ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মনোজ্ঞ নাশীদ সন্ধ্যা উপভোগ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সময়ের আগেই অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছেন নবীন-প্রবীণ শিল্পী ও সংগীত প্রেমিরা। শিল্পীদের কন্ঠ লহরিতে মুগ্ধ-আপ্লুত হয়েছেন তারা। তরঙ্গায়িত হয়েছেন সাউথ এশিয়ান সৃষ্টি সৌকর্ষে। আর এভাবেই ম্যাসেজ কালচারাল গ্রুপ বিলেতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে।
* সাঈদ চৌধুরী দৈনিক সময় ও মানব টিভি সম্পাদক, কবি ও কথা সাহিত্যিক