জাতীয় সীরাত সেমিনারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেছেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামের কিছুই নেই। ইসলামী শিক্ষা ব্যতিত যতই শিক্ষা গ্রহন করা হোক না কেন, প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যাবে না। জাগতিক ও পরকালীন জীবনের জন্য কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা অর্জন করতে হবে। এজন্য কুরআনের বিশেষ বিশেষ আয়াত ও বিশেষ বিশেষ হাদিসগুলো পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
জাতীয় সীরাত উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মাল্টিপারপাস হলে সিরাতুন্নবী (সা:) উপলক্ষে সেমিনার ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখছিলেন।
বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অসারতা বনাম মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারী ড. খলিলুর রহমান মাদানী, হেফাজতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আহমদ আলী কাসেমী, সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল ড. গোলাম রহমান ভূইয়া, টেকেরহাটের পীর মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, তালিমুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মুফতি মোহাম্মদ আবু ইফসুফ, শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, আবু তাহের জিহাদী, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) মুফতি ফখরুল ইসলাম, বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ আলী হাসান উসামা, অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল হামিদ বলেন, প্রকৃত ইসলামী শিক্ষার অভাবে এদেশে একদল আলেম নামের ভন্ড মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। তারা সরকারের হালুয়া-রুটি খেয়ে অন্যায়ের কোন প্রতিবাদ করেনি। শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়নি। একবারও সরকারের কাছে জানতে চায়নি কেন শাপলা চত্বরে আলেমদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কেন দাড়ি-টুপিওয়ালাদের জঙ্গি বানিয়ে ইসলাম কে ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি আলেমদের রক্তে রঞ্জিত শাপলা চত্বরের নাম পরিবর্তন করে শহিদ চত্বর করার দাবি জানান।
প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষাব্যবস্থার উপর জাতির অস্তিত্ব নির্ভর করে। যে জাতির শিক্ষা যত উন্নত সে জাতি তত উন্নত। অনেক কাটাছেঁড়া ও পরিবর্তনের পরও বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা গলদ রয়ে গেছে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা সমাজের পদে পদে অসারতা প্রমাণ করেছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাহলেই শিক্ষা সর্বতোভাবে দেশ, জাতি ও উম্মাহর জন্য কল্যাণকর হবে। বিশ্বনবী (সা.) প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থা সর্বাঙ্গীন কল্যাণকর প্রমাণিত হয়েছে। মুসলিম জাতি হিসেবে রাসূল (সা.) প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাবে। সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ যতদ্রুত অনুধাবন করতে পারবে ততই আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে।
সেমিনারে দেশবরেণ্য উলামায়ে-মাশায়েখ, শিক্ষাবিদ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলেন, ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে, ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের প্রণীত নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মবিমুখ শিক্ষানীতি এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও ছাত্র সমাজকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিবে। জাতি হিসেবে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়বো। বক্তরা আরো বলেন, এদেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করা হয়েছে এখন পাওয়া না পাওয়ার হিসাব না করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে গড়তে হবে। এজন্য ছাত্র-জনতার ঐক্যের মত ইসলামি শক্তিসহ দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
সেমিনার শেষে সিরাতুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে রচনায় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী দুই গ্রুপের ২০ জন বিজয়ীর মধ্যে আলাদা-আলাদা ভাবে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরষ্কারের মধ্যে রয়েছে ক্রেস্ট, ইসলামিক বই ও নগ অর্থ।