লন্ডনে ‘বাংলাদেশ হেরিটেজ মাস’ উদযাপন করবে হাইকমিশন ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল

প্রবাসী বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

লন্ডনে ‘বাংলাদেশ হেরিটেজ মাস’ উদযাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে শীঘ্রই একটি কোর গ্রুপ গঠন করা হবে।

ভিডিও: https://youtu.be/zMIyhBYqC28?si=xDatLY3WSxYd1ZDT

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের সঙ্গে সোমবার (৩০ জুন ২০২৫) এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন। আবিদা ইসলামকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান মেয়র ও তার কেবিনেট মেম্বারগণ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মাইয়ুম তালুকদার, কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর মুসতাক আহমদ, কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর আবু তালহা চৌধুরী,
কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর কামরুল হোসেন, কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর বদরুল চৌধুরী, কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর সাবিনা আখতার, কাউন্সিলর আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

বৈঠকে আবিদা ইসলাম টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের যৌথ সহযোগিতায় “বাংলাদেশ হেরিটেজ মাস” উদযাপনের প্রস্তাব দেন। মেয়র লুৎফুর রহমান হাইকমিশনারের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে এটি উদযাপনের প্রতি সমর্থন জানান। আলোচনাকালে আবিদা ইসলাম সংস্কৃতি, রন্ধনশৈলী ও শিল্পের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক মতবিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের যৌথ সমন্বয়ে একটি কোর গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেন, যারা এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করবে।

এছাড়াও জিসিএসই (GCSE- General Certificate of Secondary Education) পরীক্ষায় বাংলা ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম। তিনি বলেন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা জরুরি, যাতে তারা নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে পারে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।

আবিদা ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণরা যুক্তরাজ্যের মূলধারার বিভিন্ন ক্ষেত্রে খুব ভালো করছে এবং তারা বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে।

মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস একটি বহুসাংস্কৃতিক ও বহুধর্মীয় জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “আমি একজন বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ চাই।”

মেয়র আরো বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস যুক্তরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র, যার বার্ষিক অর্থনৈতিক বাজেট ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড— যা বার্মিংহাম বা ম্যানচেস্টারের তুলনায় বেশি এবং মাল্টা, মোনাকো-সহ অনেক দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি। এটি লন্ডনের মাত্র ১% জমি জুড়ে অবস্থিত হলেও, পুরো লন্ডনের মোট অর্থনৈতিক আউটপুটের ৭% এবং যুক্তরাজ্যের ২% উৎপাদন করে। এই বরোতে রয়েছে কানারি ওয়ার্ফ, যা যুক্তরাজ্যের প্রধান ব্যবসা ও আর্থিক জেলা। এখানে অবস্থিত কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি- একটি বিশ্বখ্যাত গবেষণা কেন্দ্র এবং রয়েল লন্ডন হাসপাতাল — যা ইউরোপের বৃহত্তম হাসপাতাল।

উল্লেখ্য, ইউরোপে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম ও অশ্বেতাঙ্গ মেয়র হিসেবে লুৎফুর রহমান ৬ বিলিয়ন পাউন্ড বাজেট এবং ১২,৫০০জন কর্মকর্তা-কর্মচারির একটি বিশাল জনশক্তি পরিচালনার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সামগ্রীক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। আর টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্ছে যুক্তরাজ্যের এমন একটি বরো যেখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (৩৫%) এবং মুসলিম জনসংখ্যাও সর্বাধিক (৪০%)। লুৎফুর রহমান ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এবং ২০২২ সালের মে মাস থেকে পুনরায় টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার পার্টির নেতা ছিলেন এবং বর্তমানে লন্ডনের ছয়জন নির্বাহী মেয়রের একজন।

মূলত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে ১ম বাংলাদেশি নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র হিসেবে ইতিহাসের খাতায় নাম লেখান লুৎফুর রহমান। তিনি ছিলেন একমাত্র অশ্বেতাঙ্গ এবং প্রথম মুসলিম ও প্রথম বাংলাদেশি মেয়র। তখন বৃটেনের শীর্ষ পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফে সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন মেয়র লুতফুর রহমান। টানা ৩য় বারের মতো তিনি এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। আগের বারের চেয়ে পরের বার তিনি ১৫ ধাপ এগিয়ে ৫৩ নম্বরে স্থান করে নেন। টপ হান্ড্রেডস মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ব্যক্তিদের মধ্যে লুৎফুর রহমান ২০১১ সালে ৭৮তম স্থান লাভ করেন। ২০১২ সালে তিনি ১০ জনকে টপকে যান। এভাবে দু বছরে ২৫ জনকে ছাড়িয়ে ৭৮ থেকে ৫৩তে স্থান করে নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *