তারুণ্যের শক্তিকে উজ্জীবিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইস্ট লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সমবেত হয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী। মতবিনিময় সভা ও ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে সেখানে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে সমৃদ্ধ জাতি গঠনে প্রবাসীদের আরো সক্রিয় অংশ গ্রহনের।
২০২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র–তরুণদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি কর্তৃক বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত নতুন ধারার রাজনৈতিক দলে সরাসরি যুক্ত হয়ে কাজ করতে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
মতবিনিময় সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ। অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে বসবাসরত এনসিপি’র আন্তর্জাতিক ডায়াস্পোরা শাখার সদস্যবৃন্দ-সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রবাসী তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। ইফতার পূর্ব মতবিনিময়ে বক্তারা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ২০২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা তুলে ধরেন। তারা ভোটাধিকার-সহ প্রবাসীদের ন্যায্য দাবি পূরণের মাধ্যমে জাতিগঠনে আরো সক্রিয় অংশ গ্রহনের সুযোগ তৈরীর জন্য এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আহবান জানান।
জি এস রাসেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত জাতীয় নাগরিক কমিটির ইন্টারন্যাশনাল ডায়াস্পারা শাখার কেন্দ্রীয় সদস্য আবু সলমন মুরাদ, মাকসুদুল হক, ফারিয়া ফাহি, হ্যাপি শারমিন। অনুষ্ঠানে লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর কবির হুসেইন, উদীয়মান ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাহবুব হাসান কাওসার, আবু বকর নিহাজ প্রমুখ যুক্তরাজ্য-সহ ইউরোপে সংগঠনের প্রচার ও বিকাশে সার্বিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে এনসিপি নেতৃবৃন্দ প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও মতবিনিময় চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
সভায় দলের কেন্দ্র ঘোষিত আকাঙ্ক্ষা উপস্থাপন করে বলা হয়,“জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র-জনতা বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্যই ঘটেনি। জনগণ বরং রাষ্ট্রের আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছিল, যেন জনগণের অধিকারভিত্তিক একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠিত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।”
ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ তার সমাপনী বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নেওয়া প্রবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের মতবিনিময় অব্যাহত থাকবে। প্রবাসীদের মতামত ও পরামর্শ লিখিত আকারে দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন করা হবে, যাতে প্রবাসীদের মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং অংশগ্রহণমূলক ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ গঠনে প্রবাসীরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন।
মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন যে, এনসিপি শীঘ্রই ইউরোপের অন্যান্য শহরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে অনুরূপ সভা ও সম্মেলন আয়োজন করবে। রমজান মাসজুড়ে এবং পরবর্তী সময়ে প্রবাসী কমিউনিটির সঙ্গে দলের সম্পৃক্ততা বাড়াতে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মেও আলোচনা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।