রাজনৈতিক সচেতনতা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি । মুসা আল হাফিজ

প্রবন্ধ-কলাম সময় চিন্তা
শেয়ার করুন

‘মানুষমাত্রই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীব’। কথাটি বলেছিলেন এরিস্টটল। রাজনীতি বা রাষ্ট্রের বাইরে কেবল থাকতে পারেন মানবেতর মানুষ কিংবা দেবতা। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো পরিবার ও সমাজে বসবাস করা। যেখানে তারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীলতা ও সহায়তার বন্ধনে যুক্ত। এ বন্ধন ও যৌথতার দাবিতে এক সেট নিয়ম-কানুন ও প্রথা-ঐতিহ্য মেনে চলতে হয়। এ নিয়ম ও বিধির সুনিয়ন্ত্রিত ও সংগঠিত উন্নত, ক্রিয়াশীল ও গতিমান স্থাপনা হচ্ছে রাষ্ট্র। সামাজিক জীবন যেভাবে সামাজিক সচেতনতার বোধ ও এষণায় সচল হয়, তেমনি রাজনৈতিক জীবন Political Consciousness বা রাজনৈতিক সচেতনতার দ্বারা উদ্দীপিত ও বিকশিত। মানুষের বৃহত্তর প্রয়োজন তৈরি করে রাজনৈতিক আয়োজন। সেই প্রয়োজন দাবি করে রাজনৈতিক ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকে আকার দেয় আদর্শ। কেননা যেকোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও সাফল্য নির্ভর করে নাগরিকদের জন্য এর অনুকূলে রাজনৈতিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও চিন্তাধারার ওপর। তাদের মধ্যে যদি এ আদর্শের আনুকূল্যের বদলে প্রতিরোধের মনোভাব বা সক্রিয় বিরোধিতার মানসিকতা থাকে, তাহলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কোনো আদর্শ বা রাজনেতিক ব্যবস্থার দীর্ঘস্থায়িত্ব বা সফলতা সম্ভব হবে না। এ যে রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও সাফল্য, সেটা নাগরিকদের রাজনৈতিক সচেতনতার পথ ধরেই অগ্রসর হবে। ফলে আদর্শের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠা আপনি চান, কিন্তু এর অনুকূলে জনগণের রাজনীতিসচেতনতা নিশ্চিত করছেন না, তাহলে আপনি আদর্শের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠা চান বটে, তবে সেটা নিষ্ক্রিয় অভিপ্রায়। এর ফলাফল হতাশা হয়ে আপনাকে আচ্ছন্ন করবে একসময়।

রাজনীতিসচেতন হবার মানে এই নয় যে, আপনাকে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে হবে। রাজনীতি সম্পর্কে মৌলিক পড়াশোনা, ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অধ্যয়ন এবং সমসাময়িক ঘটনা বিশ্লেষণ করে নিজের মধ্যে একটি রাজনৈতিক মতামত সৃষ্টি করা এ সচেতনতার প্রধান দিক। জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছাকে আপনি চালিত ও প্রণোদিত করবেন। তৈরি করবেন, সংগঠিত করবেন এবং বিকশিত করবেন। তাদের আশা ও ভয়ের উপাদানগুলোকে ব্যাখ্যা করবেন, দেখবেন ও দেখাবেন। তাদের মিত্রতা ও শত্রুতার বোধকে করে তুলবেন যথাযথ ও পরিপক্ব। তাদের অধিকারবোধ ও সামর্থ্যরে প্রয়োগকে উদ্বোধিত করবেন। এটি রাজনৈতিক কাজ। কোনো দলের সভ্য না হয়েও কাজটি আপনি করতে পারেন। রাজনীতিকে উপেক্ষা বা এড়িয়ে চলা কোনো ইতিবাচক লক্ষণ নয়। কারণ রাজনীতি হলো মানবকল্যাণ সাধনের পরীক্ষিত পদ্ধতি। এ হচ্ছে ‘আর্ট অব কম্প্রোমাইজ’ বা সমঝোতায় পৌঁছার কলাকৌশল। রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নীতিনির্ধারণী ও নীতি বাস্তবায়নসংক্রান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত জীবন-জীবিকা ও নিরাপত্তাসহ নাগরিকের জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। ফলে নাগরিক নিজের প্রতি যত্নবান হলে রাজনীতির প্রতিও নজর দেবেন। এটি কেবল তার ব্যক্তিগত ইচ্ছের বিষয় নয়, নাগরিক দায়িত্বও বটে! একটি স্বাধীন দেশে নাগরিকের শুধু অধিকারই থাকে না, তার দায়িত্ব-কর্তব্যও থাকে। দেশকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কার্যকর ও জনকল্যাণমুখী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করে অবদান রাখা নাগরিক দায়িত্বের অন্যতম এক দিক।

রাজনৈতিক সচেতনতার সাথে সম্পর্ক রাজনৈতিক সংস্কৃতির। রাজনীতির প্রতি কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত লোকদের মনোভাব কী ও দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, তার চিত্র ও চরিত্র থেকে জন্ম নেয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি। অর্থাৎ কোনো মতাদর্শীদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে রাজনীতিপ্রশ্নে তাদের ভাবধারার প্রতিফলিত রূপ। রাজনৈতিক সংস্কৃতি দাঁড়ায় পরীক্ষালব্ধ বিশ্বাস, প্রকাশযোগ্য প্রতীক এবং মূল্যবোধের সমবায়ে। এসব বিশ্বাস, প্রতীক ও মূল্যবোধ রাজনৈতিক সক্রিয়তার ব্যাখ্যা করে। দল বা মতাদর্শীদের রাজনৈতিক আচারে সেই বিশ্বাস ও অনুভূতির সুশৃঙ্খল প্রকাশ ঘটবে। সেই প্রতীক ও মূল্যবোধ তার আচার ও বিচারকে করবে অর্থপূর্ণ এবং তার মধ্যকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ায় সেই অভিব্যক্তিগুলোর সুশৃঙ্খল অভিপ্রকাশ ঘটবে। এর মানে হলো, রাজনৈতিক সক্রিয়তার মূলীভূত বিষয় হচ্ছে অন্তর্নিহিত ও মনস্তাত্ত্বিক। রাজনৈতিক আচরণ তার প্রকাশ ঘটায় মাত্র। এ প্রকাশের সার্বিক ধরন গড়ে দেয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ফলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজের সেসব মনোভাব, আবেগ, বিশ্বাস ও মূল্যবোধ নিয়ে গঠিত হয়, যার সাথে সম্পর্ক রয়েছে রাজনৈতিক ব্যবস্থার, রাজনৈতিক প্রশ্নাদির। এ মনোভাব ও আবেগ সবসময় সচেতনভাবে কাজ করবে তা নয়। সেগুলো জনগোষ্ঠীর অবচেতনে থাকলেও তা রাজনীতির অন্তর্নিহিত চরিত্র স্থির করে দেবে। কারণ এসব মূল্যবোধ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সম্পর্কের মধ্যে নিহিত থাকে। এসব সম্পর্কের দুনিয়া হচ্ছে রাজনীতির দুনিয়া। এর মানে হলো, আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কোনো হাওয়াই ভাবনাকে বুঝাচ্ছি না। বরং তা হচ্ছে মনোভাব, বিশ্বাস ও অনুভূতির এমন সমাহার, যা কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল ও তাৎপর্য দান করে এবং যা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার মূল্যবোধ ও বিধি-বিধান সৃষ্টি করে। কোনো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাবধারা ও রীতি-নীতি, সব কিছুই রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। আবার অন্য বিবেচনায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো রাজনৈতিক বিষয়াদির প্রতি নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গির এক সামগ্রিক বন্ধন-ব্যবস্থা।

এর অর্থ পরিষ্কার। মুসলিম প্রধান একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির যথাযথ বিকাশ যে হয়নি, এর কারণ অন্তরে ও বাইরে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য এখানকার জনগোষ্ঠীর যে মূল্যবোধ ও ভাব-বিশ্বাস, রাজনৈতিক দলগুলো তাকে ধারণ করতে পারেনি। জনগণ নিজেদের একান্ত আত্মপরিচয় ও আত্মবোধের জায়গা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের পরিচয় ও বিশ্বাসের সাথে একাত্ম হিসেবে কখনো ভাবেনি। ফলে রাজনীতি ও রাজনৈতিকতা এ দেশে সচেতনতার যে পরিসর তৈরি করতে পারত, তা পারার পথে ভেতরের দিক থেকে প্রস্তুত হয়নি মোটেও। যদি এ পথে এগোতে পারত, তাহলে এখানকার রাজনীতি হতো জাতি গঠন ও জাতীয় বিকাশের রাজনীতি। যা রাষ্ট্রের অন্তর্গত প্রতিটি ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধধারী মানুষের নিজ নিজ সত্তাকে পাহারা দিয়েও অধিকাংশের বোধ-বিশ্বাসকে প্রাপ্য মূল্য প্রদান করবে। যার ফলে জনগণ রাষ্ট্রের মধ্যে নিজেকে ও নিজেদেরকে খুঁজে পাবে এবং রাষ্ট্র জনতার মধ্যে নিজের প্রকৃত শক্তি ও অভিপ্রকাশ লাভ করবে।

কিন্তু আভ্যন্তরীণ সামর্থ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির সবটুকু নয়। এ যে আমাদের রাজনীতি জনগণহীন হয়ে পড়া, কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার উপায় হয়ে ওঠা, একে তো জনগণের রাজনীতি বলা যায় না। এটি শাসকবর্গের রাজনীতি; তাদের আচার-আচরণ, কথা-বার্তা চরম অরাজনৈতিক। বিভিন্ন মন্ত্রীর কথা ও কাজ রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও মানসিকতার অনুপস্থিতিরই জানান দেয়। সরকারের দোষত্রুটি ও তাদের গণবৈরী আচরণের সমালোচনা এখানে এক ধরনের অপরাধ। বিগত প্রায় ৫০ বছর যে দলই শাসনের কর্তৃত্ব হাতে পেয়েছে, তাদের মধ্যে কম-বেশি এসব প্রবণতা বিদ্যমান ছিল, যার মাত্রা আরো বেড়েছে কেবল। রাজনৈতিক চরিত্রের এ স্ট্যাটিক পরিণতি যে একটি উন্নয়নকামী দেশের রাজনৈতিক চরিত্র হতে পারে না, সেই বোধটুকু থাকে না শাসকমহলে। কারণ তাদের লক্ষ্য হয় ক্ষমতার মসনদ। যা ইতোমধ্যে চলে এসেছে হাতে। আর তাকে পাহারা দেবার জন্য আছে পেশিশক্তি। ফলে আমরা জনগণের সরকার পাচ্ছি, তা বলা যাচ্ছে না। আমরা পাচ্ছি টাইরান্ট বা কর্তৃত্ববাদী সরকার।

অনুন্নত দেশগুলোতে এবং সনাতন সমাজব্যবস্থায় যেখানে জনসাধারণের মধ্যে চেতনা ও আগ্রহের অভাব বা ব্যাপক উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়, সেখানে এ ধরনের বাস্তবতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজ করে। রাজনৈতিক জীবনধারা ও জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের প্রবল অনীহার কারণে সঙ্কীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়। এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জনসাধারণের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের ব্যাপারেও সচেতনতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। কায়েমি স্বার্থবাদী মহল চায় এমন সংস্কৃতি টিকে থাকুক। কিংবা তারা চায় বড়জোর নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি জারি থাকুক। যেখানে রাজনৈতিক বিষয়াদিতে জনগণের ভূমিকা তাৎপর্য হারায়। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে এবং তাদের জীবনধারার ওপর রাষ্ট্রীয় কাজকর্মের প্রভাব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণ থাকে নিষ্ক্রিয়। রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে উৎসাহ থাকলেও জনগণ সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার কোনো চেষ্টা করে না। বরং সরকারের অধিকাংশ সিদ্ধান্তকেই বিনা প্রতিরোধে মেনে নেয় কর্তৃত্বের ভয়ে।

এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আইন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা বা নাগরিক অধিকারের মতো ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা যায় না। মার খাওয়া বা বঞ্চনার কারণে কান্নাকাটি থাকে কিন্তু প্রতিরোধমূলক সক্রিয়তা থাকে না। কর্তৃত্ববাদ চায় রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে এমনই এক বাস্তবতায় হাঁকিয়ে নিতে। এ জন্য গণমনকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও ভয় দিয়ে ঢেকে রাখতে চায়।

অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তার ভয়। কারণ অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হলে প্রত্যেক নাগরিক রাজনৈতিক বিষয়ে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করবে। ব্যক্তিমাত্রই নিজেকে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার একজন সক্রিয় সদস্য মনে করবে। প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির অংশগ্রহণ ও মূল্যায়ন বাড়বে। নাগরিকমাত্রই তার অধিকার, কর্তব্য ও ক্ষমতা সম্পর্কে সদা সচেতন থাকবে। ফলে কর্তৃত্ববাদকে গণশক্তির মুখোমুখি হতে হবে। যা তার আসল ভয়ের জায়গা।

এ কারণে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বিকশিত হতে না দেয়া স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের গুরুত্বপূর্ণ এক খেলা। কিন্তু গঠনমূলক ও গতিশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি না থাকলে রাজনীতি ও রাজনৈতিকতা থাকে কী করে? কেননা রাজনৈতিক আদর্শ ও রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম পরিচালনা সংক্রান্ত নীতি-রীতি রাজনৈতিক সংস্কৃতির অঙ্গীভূত থাকে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ব্যক্তিভিত্তিক ও সমষ্টিভিত্তিক বিচার বিশ্লেষণের মধ্যে সংযোগ সাধন করে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা এবং তার প্রকৃতি পরিধি ও প্রক্রিয়া অনুধাবন করা যায়।

বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ থেকে তাদের সচেতনতা ও সক্রিয়তার মান অনুধাবন করা যায়। মূলত ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সমগ্র সমাজের রাজনৈতিক সচেতনতার মাত্রা রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিচার-বিশ্লেষণ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে জনতার মনোভাব, মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যদি একই খাতে প্রবাহিত না হয়, আদৌ কোনো সত্যিকার উন্নয়ন সম্পাদিত হবে না। কারণ অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা ও বাইরের চলমানতার দ্বন্দ্ব স্থবিরতাকে নিশ্চিত করে। জাতিগোষ্ঠী হয়ে ওঠার পথে তৈরি করে বিকাশজনিত সমস্যা। এর মধ্যেই নিজের সুদিন দেখতে পায় গণবৈরী শাসনব্যবস্থা। সে দমন-পীড়ন, শোষণ-চোষণ ও দুর্বৃত্তায়নকে নিয়ে আসে রাজনৈতিক দৃশ্যপটের কেন্দ্রে এবং জাতিগত স্বার্থ বিকাশের বিষয়টিকে করে তোলে গুরুত্বহীন। নিজেকে রাষ্ট্র এবং নিজের স্বার্থকে জাতিগত স্বার্থ হিসেবে উপস্থাপনের প্রয়াস চালায়। অসুস্থ সংস্কৃতিকে করে আরো অসুস্থ। বস্তুত অসুস্থতাকেই সংস্কৃতি হিসেবে চালিয়ে দেয়।

এ পরিস্থিতিতে জনগণ যদি নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতা আবিষ্কার না করে এবং একে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা প্রদর্শন না করে, তাহলে তাদের ভবিতব্য হয় নিকৃষ্ট শাসনে পিষ্ট হতে থাকা। প্লেটো অকারণে বলেননি, ‘রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করার একটি শাস্তি হলো, আপনি আপনার চেয়ে অযোগ্য-নিকৃষ্টদের দ্বারা শাসিত হবেন।’

লেখক : কবি, গবেষক
71.alhafij@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *