পুরো নাম তাঁর শামসুদ্দিন মোহাম্মদ হাফিজ শিরাজি। জন্ম ইরানে, চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে (আনুমানিক)। মৃত্যু ৭৯১ হিজরি বা ১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ (আনুমানিক)। ফার্সি ভাষার এই কবিকে বুলবুল-ই-শিরাজ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। শিরাজ শহরকে মনে করা হয় ইরানের মদিনা, পারস্যের তীর্থভূমি। এই শিরাজেরই মোসল্লা নামক স্থানে বিশ্বনন্দিত কবি হাফেজ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইরানিরা তাকে ‘লিসান-উল-গায়েব’ (অজ্ঞাতের বাণী),‘তর্জমান-উল-আসরার’ (রহস্যের মর্মসন্ধানি) বলেও সম্বোধন করে থাকেন। হাফেজের সমাধিস্থল ইরানের জ্ঞানী-গুণীজনের শ্রদ্ধার জায়গাই নয় শুধু, সর্বসাধারণের কাছে দরগাহ হিসেবে সম্মানিত।
হাফেজের মৃত্যুর একশ’ বছরের মধ্যে তাঁর কোনো জীবনী রচিত হয়নি। সে কারণে তাঁর জীবনের অধিকাংশ ঘটনা তাঁর জন্ম-মৃত্যুর দিন নিয়ে ইরানেও তাই নানা মুনির নানা মত। হাফেজের বন্ধু ও তাঁর কবিতাসমূহের (দীওয়ানের) মালাকর গুল-আন্দামের মতে হাফেজের মৃত্যু-সাল ৭৯১ হিজরি বা ১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু তিনিও কবির সঠিক জন্ম-সাল দিতে পারেননি।
হাফেজের পিতার নাম বাহাউদ্দীন। তিনি ইসপাহান নগরী থেকে ব্যবসা করার উদ্দেশে শিরাজে বসবাস শুরু করেন। ব্যবসায়ে আয় উন্নতিও হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মৃত্যুর আগে ব্যবসায়ে জটিলতা তৈরি হয়। সংসারে নেমে আসে দারিদ্র্যের কালো ছায়া। তখন হাফেজকে অনেক কষ্টেসৃষ্টে অর্থোপার্জন করতে হয়। কোনো কোনো জীবনী-লেখকের মতে, দারিদ্র্যের নিষ্পেষণে হাফেজকে তাঁর জননী অন্য একজন সঙ্গতিসম্পন্ন বণিকের হাতে সমর্পণ করেন। সেখানে থেকেই হাফেজ পড়াশোনা করার অবকাশ পান। যেভাবেই হোক, হাফেজ যে কবি-খ্যাতি লাভ করার আগে বিশেষরূপে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন, সেটা তাঁর কবিতা পাঠ করলে খুব সহজেই বোঝা যায়।
‘হাফেজ’ তাঁর ‘তখল্লুস’ অর্থাৎ কবিতার ভণিতায় ব্যবহৃত উপ-নাম। যারা সম্পূর্ণ কুরআন মজীদ কণ্ঠস্থ করতে পারেন, তাঁদেরকে আরবি ভাষায় ‘হাফিজ’ এবং ফার্সি ভাষায় ‘হাফেজ’ বলা হয়। তাঁর জীবনী-লেখকগণও বলেন, হাফেজ পবিত্র কুরআন মুখস্থ করেছিলেন।
ছাত্রাবস্থায়ই তিনি স্বভাবসুলভ দক্ষতায় কবিতা রচনা করতে আরম্ভ করেন, কিন্তু বিষয়টি সেরকম সমাদর পায়নি। কিছুদিন পরে ‘বাবা-কুহী’ নামে শিরাজের উত্তরে পর্বতের উপরকার এক দরগায় ইমাম আলি নামক এক দরবেশের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। সেদিন ‘বাবা-কুহী’তে রাতভর ধর্মোৎসব চলছিল। হাফেজও ঐ উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। ইমাম আলি হাফেজকে তখন রহস্যময় কোনো ঐশী খাবার খেতে দেন এবং বলেন, এরপরই হাফেজ কাব্য রহস্যপুরীর সব ঐশ্বর্যের অধিকারী হবে। এই বিবরণে কতটা কল্পনারস মিশে আছে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। তবে বলা না গেলেও এটা সত্য যে হাফেজের সব জীবনীকারই এই ঘটনাটির কথা উল্লেখ করেছেন। শুধু উল্লেখ করাই নয়, এসব তারা বিশ্বাসও করেছেন।
হাফেজ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর কবিতাসমূহ (দীওয়ান) সংগ্রহ করে যাননি। তাঁর বন্ধু গুল-আন্দামই সর্বপ্রথম তাঁর মৃত্যুর পর ‘দীওয়ান’ আকারে হাফেজের সমস্ত কবিতা সংগ্রহ ও গ্রন্থিত করেন। উদাসীন সুফী ধরনের মানুষ ছিলেন এই কবিপুরুষ। তাঁর নিজের কবিতার প্রতি তাঁর মমতাও তেমন ছিল না। কবিতা লেখার পর তাঁর বন্ধুবান্ধবদের কেউ সংগ্রহ না করে রাখলে তা হারিয়ে যেত। তাঁর লেখা কবিতাসমূহের অধিকাংশই গজল-গান বলে, লেখা হওয়ার পরপরই মুখে মুখে গীত হতো। ধর্মালয় থেকে শুরু করে পানশালাÑ সবখানেই তাঁর গান আদরের সঙ্গে গীত হতো।
কবিদের কবি ছিলেন তিনি
মহাকবি হাফেজ। কবিদের কবি বলা হয় তাঁকে। জার্মানির প্রখ্যাত কবি গ্যেটে মহাকালের মহাকবি হাফেজের রচনা পাঠ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন। কবির উদ্দেশে তিনি বলেছেন- Hafiz! Lets share all joy and woe, as true twin brothers, one from. দেশ-কালের ব্যবধান ঘুচিয়ে গেটে তাকে নিজের জোড়ভাই বলে সানন্দ সম্ভাষণ জানিয়েছেন। হাফেজের সাহিত্যকর্ম ওরিয়েন্টালিস্ট জোসেফ ভন হ্যামার কর্তৃক ১৮১২ সালে জার্মান ভাষায় প্রথম অনূদিত হয়েছিল। ৬৫ বছর বয়সে হাফেজের অনূদিত লেখা পড়ে অভিভূত ও মোহাবিষ্ট হন জার্মান এই মনীষী লেখক। হাফেজের দিওয়ান (Divan) তাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। উদ্দীপিত উজ্জীবিত হয়ে সে আলোকে তিনি লিখে ফেললেন ১২ খ-ের অনন্য সাহিত্যকর্ম Eastern Divan (The Parliament of East and West) শুধু তা-ই নয়, হাফিজের অসাধারণত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন- Hafiz has no peer.
তাঁর কবিতা, গজল, রুবাইয়াতের ছত্রে ছত্রে পবিত্র কুরআনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাইা তিনি নিজেই তাঁর ব্যাপারে বলেছেন-হে হাফেজ, তোমার বক্ষে ধারণকৃত এ কুরআনের চেয়ে সুন্দর ও সুমিষ্ট বাণী আর কিছুই দেখি না। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ। তার মধ্যে ঐশীপ্রেমের যে অস্তিত্ব তিনি অনুভব করেছেন, সেটাকে আল্লাহর বিশেষ তোহফা হিসাবেই বিবেচনা করেছেন। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার প্রতি অবিচল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ছাড়া কোনো ভালোবাসাই পূর্ণতা পায় না, আর এ কথা তিনি বলেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্নভাবে।
নারীর প্রতি প্রেম ভালোবাসা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে তাঁর কবিতায়। প্রেয়সীকে কাছে পাওয়ার জন্য তিনি বলছেন, ‘প্রাণ যদি মোর দেয় ফিরিয়ে সেই তুর্কি সওয়ার মনচোরা, একটি কালো তিলের লাগি বিলিয়ে দেব সমরখন্দ ও বোখারা’। মনে করা হয়, তিনি হয়তো কোনো সুন্দরীর প্রেমে পড়েছিলেন, আদর করে নামও দিয়েছিলেন শাখ-ই-নবাৎ। কিন্তু কখনো তাঁর কোনো লেখায় সে রমণীর পরিচয় জানা যায়নি। প্রশ্ন ওঠা সঙ্গত যে, বাস্তবে এ ধরনের কেউ কি ছিলেন? নাকি পুরোটাই তাঁর কবিকল্পনা? তাঁর বক্তব্য, ভাবনা, ঊপলব্ধি প্রকাশে তিনি এত বেশি রূপক ও প্রতীকের ব্যবহার করেছেন, যা বুঝতে মনস্ক পাঠককেও অনেক মনোযোগী হতে হয়। তিনি বলেছেন- Am I a sinner or a saint, which one shall it be? Hafiz holds the secret of his own mystery.
হাফেজের অনেক রুবাইয়াত, গজল, কবিতাই হারিয়ে গেছে, তাঁর বন্ধু গুল আন্দামের সংগ্রহ করা কবিতাগুলোই Divan-e-Hafiz নামে পরিচিতি লাভ করে। ইরানী জনগণের চিন্তা চেতনার ভুবনে তাঁর প্রভাব এতই প্রবল যে, এই মনস্বী কবির তিরোধানের ৭০০ বছর পরও ইরানের প্রায় প্রতিটি ঘরে হাফেজের কবিতার বই সংরক্ষিত ও পঠিত হয়। ওরা তাকে ভালোবেসে শিরাজের ‘বুলবুলি’ বলে ডেকে থাকেন।
কবি নজরুল ও হাফেজ
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন হাফেজের প্রতিভায় দারুণ মুগ্ধ, আলোড়িত। তিনি সরাসরি ফার্সি ভাষা থেকে তাঁর (হাফেজ) কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। তিনি যখন রুবাইয়াত-ই-হাফিজ অনুবাদ করছিলেন, তখন তাঁর সন্তান মৃত্যুশয্যায়। কাজী নজরুল হাফিজের কাব্য অনুবাদে অসামান্য দক্ষতা ও মুনশিয়ানার ছাপ রেখেছেন। নজরুলের অনুবাদকর্ম সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। তাই তো মনের অজান্তে সেসব কবিতার সুর গুনগুনিয়ে বাজতে থাকে, তেমনি একটি এরকমÑ ‘হায় বধুয়া! দাও পেয়ালা ঢালো শারাব মধুক্ষরা/সহজ ছিল পথটি প্রেমের দেখছি এখন কাঁটাভরা/ভেবেছিলাম ভোর বাতাসে কস্তুরি বাস আসবে ভেসে/বধূর চিকন চিকুর হতে কলজে হলো ঘায়েল শেষে।’ কাজী নজরুল ইসলাম হাফেজের ৩০-৩৫টি গজল অনুবাদ করেছিলেন।
‘রুবাইয়াৎ ই হাফিজ’ গ্রন্থের ভূমিকায় কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন:
“আমি তখন স্কুল পালিয়ে যুদ্ধে গেছি। সে ইংরেজি ১৯১৭ সালের কথা। সেইখানে প্রথম আমার হাফিজের সাথে পরিচয় হয়। আমাদের বাঙালি পল্টনে একজন পাঞ্জাবি মৌলবী সাহেব থাকতেন। একদিন তিনি দীওয়ান ই হাফিজ থেকে কতগুলি কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। শুনে আমি এমনি মুগ্ধ হয়ে যাই, যে সেদিন থেকেই তার কাছে ফারসি ভাষা শিখতে আরম্ভ করি। তাঁরই কাছে ক্রমে ফার্সি কবিদের প্রায় সমস্ত বিখ্যাত কাব্যই প’ড়ে ফেলি। তখন থেকেই আমার হাফিজের ‘দীওয়ান’ অনুবাদের ইচ্ছা হয়। কিন্তু তখনো কবিতা লিখবার মত যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারিনি। এর বৎসর কয়েক পরে হাফিজের দীওয়ান অনুবাদ করতে আরম্ভ করি। অবশ্য তার রুবাইয়াৎ নয়Ñগজল। বিভিন্ন মাসিক পত্রিকায় তা প্রকাশিতও হয়েছিল। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশটি গজল অনুবাদের পর আরি আমার ধৈর্যে কুলোল না, এবং ঐখানেই ওর ইতি হয়ে গেল। তারপর এস.সি.চক্রবর্তী এন্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মহাশয়ের জোর তাগিদে এর অনুবাদ শেষ করি।
যেদিন অনুবাদ শেষ হল, সেদিন আমার খোকা বুলবুল চলে গেছে! আমার জীবনে যে ছিল প্রিয়তম, যা ছিল শ্রেয়তম তারই নজরানা দিয়ে শিরাজের বুলবুল কবিকে বাংলায় আমন্ত্রণ করে আনলাম।
বাংলার শাসনকর্তা গিয়াসুদ্দিনের আমন্ত্রণকে ইরানের কবি স¤্রাট হাফিজ উপেক্ষা করেছিলেন। আমার আহ্বান উপেক্ষিত হয়নি। যে পথ দিয়ে আমার পুত্রের “জানাজা”(শবযান) চলে গেল, সেই পথ দিয়ে আমার বন্ধু, আমার প্রিয়তম ইরানি কবি আমার দারে এলেন। আমার চোখের জলে তাঁর চরণ অভিষিক্ত হল…।
সত্যকার হাফিজকে চিনতে হলে তাঁর গজল-গান প্রায় পঞ্চাশতাধিক-পড়তে হয়। তাঁর রুবাইয়াৎ বা চতুষ্পদী কবিতাগুলি পড়ে মনে হয়, এ যেন তাঁর অবসর সময় কাটানোর জন্যই লেখা। অবশ্য এতেও তাঁর সেই দর্শন, সেই প্রেম,সেই শারাব-সাকি তেমনিভাবেই জড়িয়ে আছে!
এ যেন তাঁর অতল সমুদ্রের বুদ্বুদ-কণা। তবে এ ক্ষুদ্র বিম্ব হলেও এতে সারা আকাশের গ্রহ তারার প্রতিবিম্ব পড়ে একে রামধনুর কণার মতো রাঙিয়ে তুলছে। হয়তো ছোট বলেই এ এতো সুন্দর।
আমি অরিজিন্যাল (মূল) ফার্সি হতেই এর অনুবাদ করেছি। আমার কাছে যে কয়টি ফার্সি ‘দিওয়ান ই হাফিজ’ আছে, তার প্রায় সব কটাতেই পঁচাত্তরটি রুবাইয়াত দেখতে পাই। অথচ ফার্সি সাহিত্যের বিশ্ববিখ্যাত সমালোচক ব্রাউন সাহেব তার History of Persian Literature- এ এবং মৌলানা শিবলী নোমানী তাঁর“শেয়রুল আজম”-এ মাত্র ঊনসত্তরটি রুবাইয়াতের উল্লেখ করেছেন; এবং এই দুজনই ফার্সি কবি ও কাব্য সম্বন্ধে authority বিশেষজ্ঞ।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাকবি হাফেজ
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনকালের শেষ অধ্যায়ে পারস্য অধিপতির আমন্ত্রণে ইরান সফরে গিয়েছিলেন। তাঁর ভ্রমণলব্ধ অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ হয়েছে ‘পারস্যে’ নামের গ্রন্থে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন,
“অবশেষে হাফেজের সমাধি দেখতে বেরলুম। নূতন রাজার আমলে এই সমাধির সংস্কার চলছে। পুরোনো কবরের উপর আধুনিক কারখানায় ঢালাই-করা জালির কাজের একটা মন্ডপ তুলে দেওয়া হয়েছে। হাফেজের কাব্যের সঙ্গে এই একেবারেই খাপ খায় না। লোহার বেড়ায় ঘেরা কবি-আত্মাকে মনে হল যেন আমাদের পুলিশরাজত্বের অর্ডিনান্সের কয়েদী।
ভিতরে গিয়ে বসলুম। সমাধিরক্ষক একখানি বড়ো চৌকো আকারের বই এনে উপস্থিত করলে। সেখানি হাফেজের কাব্যগ্রন্থ। সাধারণের বিশ্বাস এই যে, কোনো একটি বিশেষ ইচ্ছা মনে নিয়ে চোখ বুজে এই গ্রন্থ খুলে যে কবিতাটি বেরবে তার থেকে ইচ্ছার সফলতা নির্ণয় হবে। কিন্তু আগেই গবর্নরের সঙ্গে যে বিষয় আলোচনা করেছিলুম সেইটেই মনে জাগছিল। তাই মনে মনে ইচ্ছা করলুম ধর্মনামধারী অন্ধকার প্রাণান্তিক ফাঁস থেকে ভারতবর্ষ যেন মুক্তি পায়।
যে পাতা বেরল তার কবিতাকে দুই ভাগ করা যায়। ইরানী ও কয়জনে মিলে যে তর্জমা করেছেন তাই গ্রহণ করা গেল। প্রথম অংশের প্রথম শ্লোকটি মাত্র দিই। কবিতাটিকে রূপকভাবে ধরা হয়, কিন্তু সরল অর্থ ধরলে সুন্দরী প্রেয়সীই কাব্যের উদ্দিষ্ট।
প্রথম অংশ। মুকুটধারী রাজারা তোমার মনোমোহন চক্ষুর দাস, তোমার কন্ঠ থেকে যে সুধা নিঃসৃত হয় জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমানেরা তার দ্বারা অভিভূত।
দ্বিতীয় অংশ। স্বর্গদ্বার যাবে খুলে, আর সেই সঙ্গে খুলবে আমাদের সমস্ত জটিল ব্যাপারের গ্রন্থি, এও কি হবে সম্ভব। অহংকৃত ধার্মিকনামধারীদের জন্যে যদি তা বন্ধই থাকে তবে ভরসা রেখো মনে ঈশ্বরের নিমিত্তে তা যাবে খুলে।
বন্ধুরা প্রশ্নের সঙ্গে উত্তরের সংগতি দেখে বিস্মিত হলেন।
এই সমাধির পাশে বসে আমার মনের মধ্যে একটা চমক এসে পৌঁছল, এখানকার এই বসন্তপ্রভাতে সূর্যের আলোতে দূরকালের বসন্তদিন থেকে কবির হাস্যোজ্জ্বল চোখের সংকেত। মনে হল আমরা দুজনে একই পানশালার বন্ধু, অনেকবার নানা রসের অনেক পেয়ালা ভরতি করেছি। আমিও তো কতবার দেখেছি আচারনিষ্ঠ ধার্মিকদের কুটিল ভ্রূকুটি। তাদের বচনজালে আমাকে বাঁধতে পারে নি ; আমি পলাতক, ছুটি নিয়েছি অবাধপ্রবাহিত আনন্দের হাওয়ায়। নিশ্চিত মনে হল আজ, কত-শত বৎসর পরে জীবনমৃত্যুর ব্যবধান পেরিয়ে এই কবরের পাশে এমন একজন মুসাফির এসেছে যে মানুষ হাফেজের চিরকালের জানা লোক।