যত গরু তত বিয়ে, সহিংসতাও গরু নিয়ে

আফ্রিকা
শেয়ার করুন

আবুল খায়ের

পৃথিবীতে রয়েছে নানা জাতি। বিচিত্র তাদের ভাষা, বৈশিষ্ট্য ও বর্ণ। প্রত্যেক জাতির রয়েছে ভিন্ন রীতিনীতি। যেমন দক্ষিণ সুদানে বিয়েতে গরু আলাদা গুরুত্ব বহন করে। বিয়ের উপযুক্ত কেউ বিয়ে করতে চাইলে তার কাছে গরু থাকতে হবে। বিয়েতে মেয়ের বাবাকে সর্বনিম্ন পাঁচটি গরু উপহার দিতে হয়। আর কন্যা যদি রূপে-গুণে অনন্যা হন, তাহলে তো কথাই নেই। কমপক্ষে ১০ থেকে ২০টা গরু দিতে হয়। তাই যথেষ্ট পরিমাণে গরু থাকলে সমাজে আলাদা মর্যাদা ও প্রতিপত্তি পাওয়া যায়। এমনও দেখা গেছে, কেউ কেউ ১০০ থেকে ২০০ গরু মেয়ের বাবাকে দিয়ে বিয়ে করছেন। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী যার যত গরু আছে, তিনি তত বেশি বিয়ে করতে পারবেন।

দক্ষিণ সুদানে যত সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, তার মূলেও রয়েছে এই গরু। নিজেদের মধ্যে প্রধান যুদ্ধ হয় গরু নিয়ে। এ কারণে নিজেদের চেয়েও তারা তাদের গরুরও বিশেষ যত্ন নিয়ে থাকেন। কিছু কিছু সম্প্রদায় তাদের গরু পাহারার জন্য স্বয়ংক্রিয় ভারী অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন। বিরাট শিংয়ের জন্য এই গরুকে গবাদি পশুর রাজা বলে ডাকা হয়। সুদানি একেকটা গরু আট ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

দক্ষিণ সুদানের মানুষের জীবন-জীবিকা গরু লালন-পালনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ১ হাজার কিংবা ২ হাজার গরু যার আছে, তিনিই প্রভাবশালী। একটা বিয়ে করতে হলে কমপক্ষে পাঁচটা গরু থাকতে হবে। তবে অনেকে গরু জোগাড় করতে না পেরে সারাজীবন বিয়ে করতে পারে না। কেউ কেউ এজন্য গরু জোগাড়ে অবৈধপন্থা অবলম্বন করে। এরপর ১০০ গরু থাকলে আরেকটা বিবাহ করতে পারবেন। অনেকের ২ থেকে ৩ হাজার গরু রয়েছে। দক্ষিণ সুদানের রাস্তাগুলো কাঁচা। রাস্তাও খুব বেশি নেই। ৫০০ কিংবা ১ হাজার গরুর পাল নিয়ে প্রদেশ থেকে যখন গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সামনে ও পেছনে একে-৪৭ দিয়ে পাহারা দেওয়া হয়। গরুগুলো স্বর্ণের চেয়েও দামি সম্পদে পরিণত হয়েছে।

অধিক পরিমাণে মাংস আর দুধ দেওয়ার কারণে চোরা শিকারিদেরও প্রধান লক্ষ্য এই গরু। এই গরুর শিং আর চামড়াও বেশ লোভনীয়। সব মিলিয়ে এসব গরু ছিনিয়ে নিতে পারলেই উচ্চমূল্যে বিক্রি করা সম্ভব। এ কারণে সংঘবদ্ধ চক্র রাস্তার পাশে জঙ্গলে ওত পেতে থাকে এবং সুযোগ বুঝে গোলাগুলি করে গরু ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে কে হামলা করেছে, কোন গোত্রের মানুষ জড়িত, সেগুলো চিহ্নিত করে প্রতিশোধ নেওয়া হয়। প্রতিশোধ নিতে গিয়ে অনেক মানুষকেও হত্যা করা হয়। এমনকি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *