মুক্ত করে নেয়ার জন্য ৩ ইসরাইলি বন্দীর আবেদন

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড গাজা উপত্যকায় তিন বয়স্ক ইসরায়েলির একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে ওই তিন বন্দি তাদেরকে মুক্ত করে নেয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

সোমবার রাতে হামাসের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক মিনিটের ওই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে।

‘আমাদেরকে এখানে বৃদ্ধ হতে দেবেন না’ শিরোনামের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিন ইসরাইলি বৃদ্ধ একটি অজ্ঞাত স্থানে রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে একজন কথা বলছেন।

তিনি হিব্রু ভাষায় বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগতে থাকা বেশ কয়েক ব্যক্তির সাথে তিনি আটক রয়েছেন যাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা অত্যন্ত বিপর্যয়কর।

ইসরাইলি বন্দি বলেন, আমরা হচ্ছি সেই প্রজন্মের মানুষ যারা ইসরাইল সৃষ্টির সাথে জড়িত ছিলাম। আমরাই ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গোড়াপত্তন করেছি। আমরা বুঝতে পারছি না আমাদেরকে কেন এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

তিনি দৃশ্যত ইসরাইল সরকারকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, আমাদেরকে এখান থেকে মুক্ত করে নাও। এর জন্য কী দাম দিতে হয় সেটি মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা এখানে ইসরাইলি বিমান হামলায় মারা যেতে চাই না। আমাদেরকে নিঃশর্তভাবে মুক্ত করে নাও।

ভিডিওর শেষাংশে তিন ব্যক্তি একসাথে বলে ওঠেন, ‘আমাদেরকে এখানে বৃদ্ধ হয়ে যেতে দেবেন না।’

সোমবার রাতে ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর ইসরাইলি কর্মকর্তারা ওই তিন পণবন্দির পরিচয় প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে ৭৯ বছর বয়সী যিনি কথা বলেছেন তার নাম চাইম পেরি। অপর দু’জন ইয়োরাম মেতজগার (৮০) এবং আমিরাম কুপার (৮৪)।

এদিকে ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর হামাসের হাতে আটক বন্দিদের পরিবারবর্গের সদস্যরা তাদের আন্দোলন আরো জোরদার করেছেন। তেল আবিবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটকারী আন্দোলনকারীরা অবিলম্বে তাদের বন্দিদের মুক্ত করে নেয়ার জন্য আরো জোর দাবি জানাতে শুরু করেছেন।

গত শুক্রবার গাজার উত্তরে শেজাইয়াতে অভিযানের সময় নিজেদের তিন জিম্মিকে ভুল করে হত্যা করে ইসরায়েলি সৈন্যরা। ইয়োতাম হাইম (২৮), সামের তালালকা (২২) এবং অ্যালন শামরিজ (২৬) নামের ঐ তিন ইসরায়েলি যুবককে গত ৭ই অক্টোবর ধরে এনেছিল হামাস।

অভিযানের সময় যখন এই তিন যুবককে গুলি করা হয়েছিল, তখন তাদের হাতে ঐ সাদা কাপড়টি ছিল। এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হলেও হত্যার নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ করে আসছে ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকরা।

এছাড়া এখনও যেসব ইসরায়েলি নাগরিকরা হামাসের কাছে জিম্মি রয়েছে, সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে মুক্ত করার জন্য ইসরায়েলের সরকারেও ওপর চাপ বাড়ছে। গাজা উপত্যকায় এখনও প্রায় ১২০ জন ইসরায়েলি হামাসের হাতে বন্দী রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরাইলি সেনা মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি হামাসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ভিডিওটিকে ‘অপরাধমূলক ও সন্ত্রাসী ভিডিও’ বলে বর্ণনা করেছেন। এর আগে হামাসের এ ধরনের ভিডিওকে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছে তেল আবিব।

হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইসরাইল ব্যাপক প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে গাজায় ১৮ হাজারের বেশি লোক নিহত এবং কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

নভেম্বরের শেষে ছয় দিনের যুদ্ধবিরতির সময়, ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে ১০৫ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সুত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, টাইম অব ইসরায়েল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *