প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) বন্দিশালা ‘আয়না ঘর’ থেকে অক্ষত অবস্থায় মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। ২০১৬ সালের আগস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে আযমীকে আটক করে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছিল তার পরিবার।
সে সময় পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে সরকার। গুম হবার ৮ বছর পর এবার সরকার পতন হলে অক্ষত অবস্থায় আযমীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে ডিজিএফআই। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট ২০২৪) সকালে আযমীর মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
ছাত্র-জনতার গণবিস্ফোরণে সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করে গোপনে দেশ ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপরই অবিলম্বে গুম হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার দাবি তুলেন স্বজনরা। সোমবার রাতে ২০-২৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের কচুক্ষেত এলাকায় অবস্থান নেন। অতিদ্রুত পরিবারের কাছে স্বজনদের অক্ষত অবস্থায় হস্তান্তরের দাবি করেন তারা। এসময় ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারেও কিছু মানুষ তাদের সাথে অবস্থান নেন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সকালে মুক্ত করে দেওয়া হয় তাদের। যাদের মধ্যে ছিলেন আবদুল্লাহিল আমান আযমী। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেয়া হয়। তখন সেনাবাহিনীতে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ছিলেন।
২০১৬ সালের ২২ আগস্ট দিবাগত রাতে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে আটক করা হয়। তার ভাই লন্ডন থেকে ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ অভিযোগ করেন। জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইটে আমান আযমীকে আটকের অভিযোগ করে বলা হয়, সে দিন রাত ১২টার দিকে ঢাকার বড় মগবাজারের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে আটক করা হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী একাধিকবার দাবি করা সত্ত্বেও সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়।
মুক্ত হলেন ব্যারিস্টার আরমান
ব্রিগেডিয়ার আযমীর পাশাপাশি ‘আয়না ঘর’ থেকে মুক্ত হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মরহুম মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান। আজ মঙ্গলবার সকালে ব্যারিস্টার আরমানকে উত্তরা এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর পাশের একটি হাসপাতালে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিনি পরিবারের সদস্যদের খবর দেন। তারা এসে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান।
২০১৬ সালের ১০ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে মিরপুর ডিওএইচএসের ৭ নম্বর সড়কের বাসা থেকে সাদা পোশাকের কয়েকজন লোক কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেমকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ওই সময় বিতর্কিত আদালতে মীর কাসেম আলীর বিচার চলছিল। মীর কাসেম আলীর শেষ ইচ্ছা ছিল অতি স্নেহের পুত্র ব্যারিস্টার আরমান তার নামাযে জানাযায় ইমামতি করবেন। সে ইচ্ছাও পূরণ করা হয়নি।
গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার সংগঠন এবং কয়েকটি গণমাধ্যম দাবি করে আসছে, ডিজিএফআইয়ের ‘আয়না ঘরে’ বিরোধীমতের অনেক মানুষকে তুলে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
আয়না ঘর কি?
‘আয়না ঘর’ হল একটি গোপন আটক কেন্দ্রের নাম যা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা দ্বারা পরিচালিত হয়।
অভিযোগ রয়েছে যে ডিজিএফআই’র কাউন্টার-টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) আটক কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়ী। ধারণা করা হয়, এখানে কমপক্ষে ১৬টি কক্ষ রয়েছে, যেখানে একসাথে ৩০ জন বন্দী রাখার ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের ধারণা, ‘আয়না ঘর’ বাংলাদেশের ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত।