মহাকবি, নাট্যকার, বাংলা সনেটের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার প্রধানতম কাণ্ডারি। যশোর জেলার কপোতাক্ষ তীরের সাগরদাঁড়ি গ্রাম তার জন্মভূমি বলেই বিশ্ববিখ্যাত। তার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন জমিদার এবং কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল।
মাইকেলও ছিলেন ব্যারিস্টার। ১৮৬৭ সালের গোড়ার দিকে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেছিলেন। সাফল্য আসেনি এ পেশায়। ১৮৭০ সালে আইন পেশা ছেড়ে মাসিক এক হাজার টাকা বেতনে গ্রহণ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের অনুবাদ বিভাগের পরীক্ষকের চাকরি। দুই বছর চাকরির পর এতেও থাকা হলো না। মধুসূদন আবার আইন পেশায় ফিরে যান। কিন্তু সাফল্য অধরাই থেকে গেছে।
যদিও বাংলা ভাষার প্রধান এক কবি হিসেবে ততক্ষণে তিনি বাংলা, ভারতসহ বহির্বিশ্বে বরিত হচ্ছিলেন। কলকাতায় তিনি থাকতেন যে বাড়িতে, সেটা হলো ৬ লাউডন স্ট্রিট। বাড়িটির মাসিক ভাড়া ছিল তখনকার বিচারে বিপুল; ৪০০ টাকা। এখানে বেশ বিলাসী জীবন শুরু করলেন কবি। বাসায় আধুনিক সব আসবাব, ঝাড়বাতি, বিলাতি তৈলচিত্র, প্রিয় কবি ও নাট্যকারদের আবক্ষ মূর্তি। অতিরিক্ত মদ্যপান আর ধূমপানে বিধ্বস্ত কবি যা কিনেছেন, সবই ধার করা টাকায়।
শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ-ব্যাধি। মুটিয়ে গেছেন অল্প বয়সেই। নামকরা ডাক্তার পামারের চিকিৎসায়ও উন্নতি হয়নি কোনো। হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান হওয়ার কারণে জমিদার পিতা তাকে বঞ্চিত করেছেন সব সম্পদ থেকে। পরিত্যাজ্য হয়েছেন হিন্দু সমাজ থেকেও। পাওনাদারদের তাড়া তার পিছে লেগেই থাকত। একজন ব্যারিস্টার হিসেবে তার এ দারিদ্র্য ছিল অনেকের কাছে দুর্বোধ্য।
কিন্তু মধুকবি মক্কেলের হাত থেকে অনেক সময়ই গুনে টাকা নিতেন না। উপার্জনের জন্য দরকার যে পেশাদারি মনোভাব, তা ছিল না তার। মামলা চালিয়েছেন, কিন্তু ফি নেননি, এমন ঘটনা দু’চারটি নয়, শত শত। রোজগার প্রায় শূন্যের কোঠায়। পাওনাদাররা এখন আসে দল বেঁধে। মাস্তান নিয়ে আসে কেউ কেউ।
এ পরিস্থিতিতে একটি মামলা পরিচালনার ডাক পেলেন ঢাকা থেকে। সময়টি ১৮৭১ সালের সেপ্টেম্বর। কবি ভাবলেন, ঢাকা যদি তার জীবিকার জন্য সদাশয় হয়। কলকাতায় যেমন তার বদনাম, সেখানে তেমনটি নেই। সেখানে আইনজীবীদের প্রতিযোগিতাও কম। রুগ্ন কবি ঢাকায় এলেন দু’চোখে ভালো কিছুর জ্বলন্ত প্রতীক্ষা নিয়ে। আরমানিটোলায় থাকতেন আর্মেনীয় ব্যবসায়ী, জমিদার নিকোলাস পোগোজ। কবিকে তিনি নিজের বাসায় আমন্ত্রণ করলেন। কবি উঠলেন পোগজ ভবনে। পোগজ ইতোমধ্যে ঢাকায় খুব প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। ১৮৪৮ সালে তিনি নিজের বাসার নিচতলায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পোগজ স্কুল। ঢাকার প্রথম বেসরকারি স্কুল এটি। নাম ছিল পোগজ অ্যাংলো-ভারনাকুলার স্কুল। সেখানে আয়োজন করা হলো কবির সংবর্ধনা।
আরেকটি সংবর্ধনার আয়োজন করে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। ঢাকা প্রকাশ মিলনায়তনে আয়োজন হয় তৃতীয় সংবর্ধনার। এতে ঢাকাবাসীর তরফে কবিকে দেয়া হয় এক মানপত্র। সম্ভবত তা লিখেছিলেন কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষ। সভায় অনেকেই বক্তব্য রাখেন। এক যুবক কবিকে লক্ষ করে বলেন, আপনার জ্ঞান ও সৃষ্টিকর্মে আমরা গৌরবান্বিত হই, আবার আপনি ইংরেজ হয়ে গেছেন ভেবে দুঃখিত হই। যদিও আপনার প্রত্যক্ষ সান্নিধ্য সে দুঃখকে অহেতুক প্রমাণ করে।
জবাবে কবি বলেছিলেন, ‘আমি কেবল বাঙালি নই, আমি তো বাঙাল। সে কথা যেন ভুলে না যাই, সেজন্য আমার শোবার ঘরে রেখেছি একটি আয়না। আয়নাটি বলে দেয় যে, আমি কৃষ্ণকায়!’
ঢাকার প্রতি কবির শ্রদ্ধা ছিল প্রগাঢ়। এখানে যে সম্মান পেলেন কবি, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লেখেন এক সনেট; যার শিরোনাম ঢাকাবাসীদিগের অভিনন্দনের উত্তরে। ঢাকার প্রতি জ্ঞাপন করেন প্রগাঢ় শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।
ঢাকার প্রতি তার শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের ভাষা আমাদের ইতিহাসের অনেক গভীরে নিয়ে যায়। ঢাকার প্রতি তাচ্ছিল্য ছিল কলকাতার অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীর। যেহেতু অখ্যাত এক ক্ষুদ্র ব্যবসাকেন্দ্র ঢাকা হঠাৎ করে শহরে রূপান্তরিত হয়েছিল এবং বাংলার কেন্দ্র হতে চাচ্ছিল।
কিন্তু ঢাকা কেন্দ্রীয় গুরুত্ব লাভ করেছিল নিজস্ব কারণে। বাংলার রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকার প্রতিষ্ঠার পথে মোগলরা রেখেছিলেন মূল ভূমিকা। রাজনৈতিক গুরুত্ব বিচারে তারা এর নগরায়ন করেন। নদীবহুল পূর্ববঙ্গ মোগলদের শাসনে ছিল ১৭ শতকের প্রথম দিক অবধি। বাংলা ছিল বিদ্রোহপ্রবণ। মোগলরা চাইতেন বাংলার শেষ সীমানা অবধি সীমানার সম্প্রসারণ। কিন্তু বাধা ছিলেন এখানকার স্বাধীন পাঠান রাজারা, বিদ্রোহী জমিদাররা। তাদের দমাবার জন্য অবস্থানগত বিচারে ঢাকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ এলাকায় ছিল নানা কৌশলগত সুবিধা। একে মোগলরা কেন্দ্রীয় নগর করে তুলল সুবাদার ইসলাম খান চিশতির মাধ্যমে।
সুফি খান্দানের এ কর্মবীর ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের বন্ধু, খেলার সাথী, বদরউদ্দীন চিশতির পুত্র এবং ফতেহপুর সিক্রির শায়খ সেলিম চিশতির পৌত্র। অল্প বয়সেই তিনি বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। উচ্চপদস্থ আমিররা বাধা দিলেও সম্রাট তাকে উপযুক্ত মনে করলেন। বিদ্রোহী বাংলাকে বশে আনতে জাহাঙ্গীরের পিতা আকবর বহু চেষ্টা করেছেন। ১৫৭৬ থেকে ১৬০৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে প্রায় ১২ জন দক্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে বাংলায় পাঠালেও ফলাফল এসেছে সামান্যই। সেখানে ৩৮ বছর বয়স্ক ইসলাম খানকে বাংলায় প্রেরণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক ছিল। কারণ এখানে শুধু বিদ্রোহ ছিল না; পর্তুগিজ ও মগদের উঠতি শক্তি বাংলার নানা অঞ্চলে ধ্বংসের বাজনা বাজাচ্ছিল। তাদের কার্যকরভাবে প্রতিহত করাটা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ পরিস্থিতিতে ইসলাম খানের সামরিক দক্ষতা ছিল সামান্যই। যদিও ঢাকায় আসার আগে বিহারের সুবাদার ছিলেন তিনি।
ইসলাম খান ঢাকায় আসেন ১৬১০ সালে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান অনুযায়ী ১৬ জুলাই ১৬১০ সালে ঢাকাকে সুবাহ বাংলা বা বাংলা প্রদেশের রাজধানী ঘোষণা করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের নাম অনুসারে এর নাম হয় জাহাঙ্গীরনগর। এর আগে বাংলার রাজধানী ছিল ভারতের ঝাড়খণ্ড প্রদেশের সাহেবগঞ্জ জেলার রাজমহলে।ঢাকাকে রাজধানী করার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাকে সংহত করেন ইসলাম খান, বিদ্রোহ দমন করেন, পর্তুগিজ-মগ-মারাঠাদের মোকাবেলায় শক্তিশালী পদক্ষেপ নেন। সেই যে ঢাকা রাজধানী হলো, তারপর অনেকবার তার রাজধানীর মান খর্ব করা হলেও প্রতিনিয়ত ঢাকা নিজের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। ১৭ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকা একটি বৃহৎ এবং সমৃদ্ধিশালী নগরে পরিণত হয়। তার সম্প্রসারণ বাড়তে থাকে দ্রুতই। অনেকের মতে, সমৃদ্ধিকালে এর জনসংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় নয় লাখ। বুড়িগঙ্গার তীর ধরে প্রায় ১০ মাইল আর ভেতর দিকে প্রায় আড়াই মাইল পর্যন্ত প্রসার লাভ করে শহরটি। ঢাকায় তৈরি হতো ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে রফতানির জন্য বিশেষ নকশার রকমারি বস্ত্রসামগ্রীর এক উল্লেখযোগ্য অংশ। তার গুরুত্ব শুধু বাংলার কাছে নয়, গোটা উপমহাদেশের কাছে ছিল এক বাস্তবতা।
তবে সে গুরুত্ব গ্রাহ্য ছিল না কলকাতার বাবু বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশের কাছে। তাদের বিচারে ঢাকা আভিজাত্যের অধিকারী হতে পারেনি। কিন্তু মাইকেল মধুসূদন ঢাকার আভিজাত্যকে উচ্চকণ্ঠে উচ্চারণ করলেন। ঢাকাকে অভিহিত করলেন বঙ্গ অলঙ্কার বলে, ফুলবৃন্তের ফুল বলে, রাজাসনের রাণী বলে।
তিনি যখন ঢাকার মহিমা উচ্চারণ করেন, তখন যেন প্রতিবাদ করেন তাদের, যারা ঢাকার মধ্যে লক্ষ্মী দেখতেন না। এই লক্ষ্মী না দেখা মানুষদের চেহারা আমরা দেখেছি ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকা যখন আরেকবার রাজধানী হলো, তখন কলকাতাকেন্দ্রিক প্রতিক্রিয়ায়। কিন্তু মাইকেল ঢাকায় দেখেন-
প্রতি ঘরে বাঁধা লক্ষ্মী (থাকে এইখানে)
নিত্য অতিথিনী তব দেবী বীণাপাণি।
যেহেতু বেদে বা পুরাণে ঢাকা অনুল্লিখিত, অতএব এর সম্মান অনেকের কাছে ছিল গৌণ। মধুসূদন যেন তারই প্রতিবাদ করলেন।
নাহি পাই নাম তব বেদে কি পুরাণে,
কিন্তু বঙ্গ-অলঙ্কার তুমি যে তা জানি
পূর্ব্ব-বঙ্গে। শোভ তুমি এ সুন্দর স্থানে
ফুলবৃন্তে ফুল যথা, রাজাসনে রাণী।।
ঢাকায় আসতে পারাটা মাইকেলের কাছে ছিল ঈশ্বর প্রদত্ত সৌভাগ্য।
তার ভাষায় :
‘পীড়ায় দুর্ব্বল আমি, তেঁই বুঝি আনি
সৌভাগ্য, অর্পিলা মোরে (বিধির বিধানে)।
তব করে, হে সুন্দরি!’
মাইকেলের ঢাকা হচ্ছে ভাগ্যবতী। যেখানে ঈশ্বরের বসুন্ধরা সাজাবার প্রজ্ঞার অভিপ্রকাশ ঘটেছে। ঢাকাকে হারাতে চান না ‘বিপজ্জালে’ জর্জরিত কবি। কামনা করেন ঢাকা যেন তাকে ঘৃণা না করে :
‘যুগে যুগে বসুন্ধরা সাধেন মাধবে,
করিও না ঘৃণা মোরে, তুমি, ভাগ্যবতী।’
ঢাকা কবিকে ঘৃণা করবে কেন? ঢেলে দিয়েছিল প্রগাঢ় ভালোবাসা। কবির মহাকাব্য মেঘনাদবধ অনুকরণে কাব্য লিখতে শুরু করেন তখনকার ঢাকার কবি হিন্দু হিতৈষিণী পত্রিকার সম্পাদক হরিষচন্দ্র মিত্র। সে কাব্যের নাম ছিল কীচকবধ কাব্য। ঢাকাকে নিবেদিত কবির সনেটটি প্রকাশিত হয় এখানকার বিভিন্ন পত্রিকায়। স্থানীয় সংস্কৃতিবান, সাহিত্যপ্রেমিক ও বিদগ্ধজন ঢাকায় কবির উপস্থিতির দীর্ঘায়ু চাইছিলেন। কবিও সেটা যে চাইছিলেন, তা তার কাব্যে স্পষ্ট। কিন্তু এ চাওয়া পূর্ণ হয়নি। আগ থেকেই অসুস্থ কবি আরো অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ম্যালেরিয়া ধরা পড়ল। কবির স্ত্রী হেনরিয়েটা আর সন্তানরা ছিলেন কলকাতায়। তাদের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। দশ দিন অবস্থান করে, রোগ ভোগে অবস্থা হলো অধিকতরো খারাপ। স্থায়ীভাবে প্র্যাকটিসের জন্য আদালতপাড়ায় দৌড়-ঝাঁপের অনুক‚লে ছিল না কিছুই। অতএব ফিরে গেলেন কবি কলকাতায়।
দুঃখ-ব্যাকুল ছিল কবির মন। ঢাকাকে নিয়ে রচিত সনেটে নিজের সমস্যাসঙ্কুল অবস্থাকে সমুদ্রে ডুবে যাওয়া পাহাড়চূড়ার সাথে তুলনা করেন। উল্লেখে আসে মৈনাক গিরি। যার আরেক নাম আদিনাথ পাহাড়। এটি মহেশখালী দ্বীপ এবং সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত। আদিনাথ পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরটি আছে সমুদ্রস্তর থেকে ২৮৮ ফুট উঁচুতে। কিন্তু কবির গোটা পাহাড়ই সাগরে তলিয়ে গেছে। তবে কারণ অজানা।
তাঁর ভাষায় :
কি হেতু মৈনাক গিরি ডুবিল অর্ণবে?
দ্বৈপায়ন হ্রদতলে কুরুকুলপতি?
ঢাকার প্রতি মাইকেলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা যেমন ছিল, তেমনি মুসলিম মানস ও সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের প্রতি ছিল তার শ্রদ্ধা। বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ প্রহসনে হানিফা ও বিবি ফাতিমা চরিত্র যে প্রাণাবেগে উদ্দীপ্ত হতে পেরেছে, তা কৃত্রিমভাবে ঘটেনি।
মাইকেল যখন কিশোর, তখন তার জন্মভূমি সাগরদাঁড়ির নিকটবর্তী শেখপাড়া গ্রামে জনৈক মাওলানা সাহেবের কাছে গিয়ে ফারসি শিখতেন। শুনতেন পারস্যের কবিদের মনমাতানো গজল। ১৮৩১ সালে কলকাতায় খিদিরপুর স্কুলে এবং ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষার সাথে তিনি শিখেন ফার্সি ভাষাও।
ফারসি কবিতার লালিত্য তার মনের সেতারে আওয়াজ না তুলে পারেনি। সেখান থেকে কবিতা তাকে আচ্ছন্ন করতে শুরু করে। পরিণত পর্যায়েও ফার্সি তাকে আসক্ত করে রাখে। ফলে দেখি, ১৮৪৪ সালে কলকাতার Circulator পত্রিকায় তার ইংরেজি অনুবাদে প্রকাশিত হয় শেখ সা’দীর গজল। ODE নামে প্রকাশিত এ গজল দিয়েই শুরু হয় তার ইংরেজি সাহিত্যচর্চা।
মাইকেল ছিলেন মুসলিম সাহিত্য ও শিল্পকলার শুভার্থী ও রসজ্ঞ। জালাল উদ্দিন রুমীর কবিতাকে ঈষৎ পরিবর্তন করে তিনি লিখেন বিখ্যাত ‘রসাল ও স্বর্ণলতিকা’। ১৮৬১ সালে রচিত তাঁর বিখ্যাত আত্মবিলাপ এ আছে শেখ সা’দীর না’লায়ে ইয়াতিম এর প্রতিধ্বনি।
তিনি ইংরেজি, গ্রিক, ল্যাতিন ফরাসি ইত্যাদি ভাষা জানতেন। ইংরেজি ভাষায় তিনি সাহিত্য চর্চা করেছেন দীর্ঘকাল। কিন্তু বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক এ কবি ফার্সি কবিতার ঐতিহ্য ও মর্মবাণীকে দেখতেন ভক্তের নজরে। তিনি আক্ষেপ করেছেন, মুসলমানরা বাংলা ভাষায় কারবালার মতো উপাখ্যান নিয়ে কেন রচনা করেনি কোনো মহাকাব্য? আজ ঢাকা যখন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অবিসংবাদিত রাজধানী, তখনো মাইকেলের প্রাসঙ্গিকতা রয়ে গেছে সমানে। তিনি আত্ম-উন্মোচনের জন্য হাত বাড়িয়েছিলেন বিশ্বের বিস্তারে। কিন্তু আপন শেকড়কে অধিকার না করলে বৈশ্বিকতা অধিকার করা যায় না, সেটা আবিষ্কার করে স্বভূমের স্নেহের পরশে নিজেকে নবজন্ম দিলেন। এই ভূমি ও ভাষার সাথে সম্পর্কিত সুকৃত অতীতের প্রতিটি বর্তমান অভিব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানানোর বিশালতা তার ছিল।
ঢাকা মাইকেলকে ভুলে যেতে পারে না।
লেখক : কবি, গবেষকা। ই-মেল: 71.alhafij@gmail.com
আরও পড়ুন
কোথাও আগুন লাগলে সতর্কতার জন্য যা করবেন, যা করবেন না
আগুনে পুড়লে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ও আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার