মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় আমার বাংলাদেশ পার্টি- এবি পার্টির উদ্যোগে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. সুকোমল বড়ুয়া, সাংস্কৃতিক সংগঠক আরজুমান্দ আরা বকুল, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।
পার্টির আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব আনোয়ার সাদাত টুটুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক, মহান একুশে উদযাপন উপকমিটির আহবায়ক ও বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলাম।
স্বাগত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ভাষা আন্দোলনে এতো ত্যাগ তবু আজও বাংলা রাষ্ট্র ভাষায় পরিনত হয়নি। আদালত, শিক্ষা ব্যবস্থা, অফিস আদালত সহ সর্বত্র বাংলা এখনো উপেক্ষিত।
অনুষ্ঠানে প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে চেতনার নামে অনেক রাজনীতি হয়েছে, নানা অনুষ্ঠান হচ্ছে প্রতি বছর কিন্তু ভাষার চর্চার ক্ষেত্রে বলার মত কিছুই আমরা করতে পারিনি। তিনি বলেন, জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার একটি বড় অংশ হচ্ছে বিদেশি বইয়ের অনুবাদ। কিন্তু এদেশে অনুবাদ সাহিত্য খুবই দুর্বল এবং অপ্রতুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে রেফারেন্স বই হিসেবে উল্লেখ করার মত অনুদৃত কোন বই পাওয়া যায় না।
তিনি এর পেছনে কারণ হিসেবে আরও উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্বাধীন গবেষণা করতে দেয়া হয় না, বরং অযোগ্যরা ক্ষমতাবানদের পদলেহন করে সুবিধা ভোগ করে থাকে। ড. দিলারা চৌধুরী আরো বলেন, শহীদ মিনার যে শিক্ষা দেয় জাতি হিসেবে তা থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। আজ আমরা সবই মেনে নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করা হচ্ছে তাও আমরা মেনে নিচ্ছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডঃ সুকোমল বড়ুয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে বয়ান আজ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে তা আমাদের মুক্তি যুদ্ধের প্রকৃত চেতনা নয়। আজ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসও বিকৃত হচ্ছে। রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের সকল স্তরে বাংলা প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু রাষ্ট্রের ভাষা আজও বাংলা হয়নি।
সভাপতির বক্তব্যে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, একুশের চেতনা থেকে দূরে সরে গিয়ে আজ এদেশে সবক্ষেত্রে দূর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় ভরে গেছে। এমনকি স্কুলের পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস এবং উদ্যেশ্যমূলক বিষয়ের অবতারণা করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে সরকার।
দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, একুশের চেতনা ছিল অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেতনা। আজও এদেশে কথা বলার অধিকার নেই, সভা সমাবেশের অধিকার নেই, দেশ নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই। দেশ বাঁচাতে- অধিকার ফিরে পেতে একুশের চেতনায় আবার জেগে ওঠার আহবান জানান তিনি।
আরজুমান্দ আরা বকুল বলেন, বাংলা আমাদের মধুর ভাষা যা প্রাণ জুড়ায়। আমরা সবাই আশা করবো সবাই শুদ্ধ ভাষা চর্চায় এগিয়ে আসবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, যুবপার্টির আহবায়ক এবিএম খালিদ হাসান, অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এফসিএ, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, যুবপার্টির সদস্য সচিব শাহাদাতুল্লাহ টুটুল সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে শুদ্ধচিত্ত সাংস্কৃতিক সংসদ।