ইশতিয়াক মাহমুদ
* বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমরান খান * পিটিআই এমপিদের পদত্যাগ * নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ * পদত্যাগ করবেন না প্রেসিডেন্ট আলভি
অনাস্থা ভোটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে এবং আমদানি করা সরকারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকরা। গত রোববার রাতে দেশটির অন্তত ৪০টি শহরে বিক্ষোভকারীরা দলে দলে রাস্তায় নেমে আসেন। পতাকা হাতে সেøাগানে সেøাগানে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। এদিকে, গতকাল ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের সকল সদস্য গণহারে পদত্যাগ করে জাতীয় পরিষদ থেকে ওয়াকআউট করেছেন। এরপরে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত শাহবাজ শরীফ।
রোববার রাতে পাকিস্তানে জনতার বিক্ষোভ ছিল অভূতপূর্ব। এর মধ্যে করাচি, পেশোয়ার, মালাখাণ্ড, মুলতান, খানেওয়াল, খাইবার, ঝাং, কোয়েটা, ওকারা, ইসলামাবাদ, লাহোর ও অ্যাবোটাবাদ শহরে বড় ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া বাজাউর, লাওয়ার দির, শাংলা, কোহিস্তান, মানসেহরা, সোয়াত, গুজরাট, ফয়সালাবাদ, নওশেরা, ডেরা গাজি খান ও মান্ডি বাহাউদ্দিনেও বিক্ষোভ হয়েছে। পাকিস্তানের কোনো নেতার জন্যই জনগণের এমন প্রাণঢালা সমর্থন আগে খুব একটা দেখা যায়নি। ইমরান খানও যোগ্য ক্যাপটেনের মতো তার সমর্থকদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া এ বিক্ষোভে ইমরান সমর্থকরা বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সেøাগান দেন। দেশজুড়ে পিটিআই আন্দোলনের এসব ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন ইমরান খান। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটি বলছে, যাতে তারা আন্দোলনের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে। ইমরান খান ও পিটিআই এর অফিসিয়াল ট্যুইটার অ্যাকাউন্টেও বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয়। যেখানে দেখা যায়, বিপুল সংখ্যক মানুষ দেশব্যাপী পতাকা হাতে নেমে এসেছেন। সবাইকে ইমরানের সমর্থনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সেøাগান দিতে দেখা যায়।
দেশব্যাপী বিক্ষোভ সফল করায় জনগণকে ধন্যবাদ জানান ইমরান খান। একাধিক ট্যুইটে তিনি দাবি করেন, দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। এর আগে ইমরান খান এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ‘১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়। কিন্তু শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ আবার পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। দেশের জনগণই সর্বদা তাদের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা করে।’
পিটিআই এমপিদের পদত্যাগ, নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন শাহবাজ শরীফ : পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) এর আইনপ্রণেতারা সংসদের নিম্নকক্ষ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার পর সোমবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফকে পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের সকল সদস্য গতকাল গণহারে পদত্যাগ করে জাতীয় পরিষদ থেকে ওয়াকআউট করেছেন। বিদেশি শক্তির আমদানি করা ‘চোর সরকারের’ সাথে কাজ করতে চান না পাকিস্তানের সদ্য ক্ষমতা হারানো দল তাহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) এমপিরা। এ কারণে তারা সকলে গণপদত্যাগ করেন। মূলত, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বিরোধী নেতা শাহবাজ শরিফের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থিতায় আপত্তি ছিল পিটিআই-এর।
গতকাল পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করার কথা ছিল। আর নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে সকল সদস্য উপস্থিত হন। কিন্তু অধিবেশন শুরু হওয়ার পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কোরেশি জানান, তারা গণহারে পদত্যাগ করবেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় তারা অংশ নেবেন না। তার এ ঘোষণার পর ডেপুটি স্পিকার কাসের সুরিও অধিবেশন ছেড়ে বের হয়ে যান। এখন তার জায়গায় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন মুসলিম লিগ-এন এর আয়াজ সাদিক।
তিনিই শনিবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি পরিচালনা করেন। এদিকে পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কোরেশিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন দিয়েছিল ইমরান খানের দল। কিন্তু তিনিও নির্বাচনের আগে জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগ করায় এখন শাহবাজ শরীফ একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন।
প্রেসিডেন্ট আলভি পদত্যাগ করবেন না : পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) ফেডারেল সরকারের পতনের পরে রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ইমরান খানকে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। তবে প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি আপাতত পদে বহাল থাকবেন এবং তিনি জানিয়েছেন, তার পদত্যাগ করার ইচ্ছা নেই।
পার্টির ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যথারীতি তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করে যাবেন এবং পিটিআই নেতৃত্ব কোনো আদেশ জারি করেনি বা তার পদত্যাগের কথা বিবেচনা করেনি। সূত্র আরো দাবি করেছে যে, পিটিআই প্রধান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যদি দলের নেতাদের সাথে পরামর্শ করে প্রেসিডেন্ট আলভিকে পদত্যাগ করতে বলেন তাহলে তিনি অফিস ছেড়ে যাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
যদি কোনো সম্ভাব্য ফেডারেল সরকার প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সাংবিধানিক পথ গ্রহণ করে, তবে দল পরিস্থিতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। নতুন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের অধীনে আরিফ আলভির পদে বহাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পিটিআই নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাকে সামনে রেখে তার অবস্থান নির্ধারণ করবেন। আপাতত ডক্টর আরিফ আলভি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট রয়ে গেছেন। সূত্র : ডন, ট্রিবিউন।