সাঈদ চৌধুরী
লন্ডন বারা অব বার্কিং এন্ড ডেগেনহাম কাউন্সিলের মেয়রের পক্ষ থেকে রোববার (১ সেপ্টেম্বর ২০২৪) বিশেষ চ্যারিটি ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে বার্কিং টাউন স্কয়ারে আয়োজিত মেলায় অংশ নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মেয়র মঈন কাদেরী সবাইকে সেখানে স্বাগত জানান।
আড়ম্বরপূর্ণ মেলায় ব্রিটেনের মূলধারার মানুষের পাশাপাশি এশিয়ান মানুষের উপস্থিতি নজর কেড়েছে। ছিলেন বাংলাদেশী মেয়র, কাউন্সিলর এবং বাংলাদেশি কমিউনিটি পুলিশ থেকে শুরু করে অফিসার, ভলান্টিয়ার ও ব্যবসায়ী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী শিল্পীরা দেশপ্রেম এবং জাতিগত নিজস্বতা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
মেলায় উপস্থিত হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। ইস্ট লন্ডন ও এসেক্স অঞ্চলের বারাসমূহ থেকে আসা স্বদেশী মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়ে অনেকেই ছিলেন আনন্দিত। মেলার মাধ্যমে সৃস্টি হয়েছে ভালোবাসা ও উদারতার মেলবন্ধন।
মেলায় বিভিন্ন পণ্য সামগ্রির স্টল ছিল। বিশেষ করে খাবারের স্টল। ঝাল চানাচুর, নারকেলের চিড়া, ডিমের ঝিনুক পিঠা, গুড়ের বাতাসা-সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার। সচারচর এসব খাবার পাওয়া যায় না। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সুস্বাদু।
গত কয়েক বছরে লণ্ডনের অনেক এলাকা থেকে বাড়ি বদলে বার্কিং এন্ড ডেগেনহামে এসেছেন কয়েক শতাধিক বাংলাদেশী পরিবার। এছাড়া বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী বাসা ভাড়া নিয়েছেন এই এলাকায়। মেলা উপলক্ষে তাদের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়েছে। ফলে এই মেলা আমাদের কমিউনিটির সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে অনেকগুলি অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত।
ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের চাষ শুরু হলে চা রফতানির কাজে সিলেটের মানুষ বিলেত যাত্রা শুরু করেন। এরপর জাহাজ শ্রমিক হিসেবে ব্যাপক হারে মানুষ বিলেত পাড়ি জমিয়েছেন। উচ্চতর পড়ালেখার জন্যও এসেছেন অনেকে। ভ্রমণ, কর্মসংস্থান এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নিয়ে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রবাসী হয়েছেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ব্রিকলেন বাংলা টাউন থেকে শুরু করে ইস্ট লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড বাংলায় হয়েছে। মসজিদ, দোকানপাট, হাসপাতাল, পার্ক সবখানে বাংলার ব্যবহার বেড়েছে। বার্কিং, ডেগেনহাম, নিউহাম, ওয়েস্টহাম, ক্যামডেন, বার্মিংহাম, ম্যানচেষ্টার, কার্ডিফ ও নিউক্যাসলের মতো এলাকাগুলোতে অনেক প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার নাম বাংলায় লেখা আছে।
ব্রিটেনে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা গড়ে তুলেছেন মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্টে বাংলায় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষা চর্চা হয় সমান্তরাল ভাবে। যেমনটি আজো ছিল।
বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাভাষী মানুষ যেখানেই সমাজবদ্ধ হয়েছেন, সেখানেই মুখরিত হয়েছেন নিজেদের সংস্কৃতি ও ভাষা চর্চায়। এভাবেই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বিশ্বময় বাংলাভাষা ও বাংলাদেশী সমাজ।
ভিডিও লিংক : https://www.facebook.com/100082959350902/videos/891185072871992
* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথা সাহিত্যিক