শময়িতা চক্রবর্তী | স্যমন্তক ঘোষ
সোমবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও। তবে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে সাংবাদিকের সামনে কোনো মন্তব্য করতে চাননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কূটনৈতিক প্রোটোকলের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, এবিষয়ে কোনো মন্তব্য তিনি করবেন না।
তবে বাংলাদেশ হাই কমিশনের তরফে বৈঠক নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে এই বৈঠককে সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবেই দেখানো হয়েছে। বিবৃতি বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ তাঁর কার্যালয়, নবান্ন-এ ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ এর কাছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সাথে বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক সুদৃঢ় করার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’ মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
তবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, পুশ ইন, তিস্তা ইত্যাদি বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, তা নিয়ে ওই বিবৃতিতে কোনো কথা বলা হয়নি। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে ভারতের প্রাক্তন আমলা তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ জহর সরকারের সঙ্গেও সৌজন্য বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। ডয়চে ভেলেকে জহর সরকার জানিয়েছেন, ”মূলত সৌজন্য বিনিময় হয়েছে। আমরা পূর্বপরিচিত। এমন কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করিনি, যা উভয়পক্ষকে বিব্রত করতে পারে।”
জহর জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের এই সাক্ষাৎ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তার মতে, ”পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অঙ্গরাজ্য হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই রাজ্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত আছে। এবং দুই অঞ্চলের মানুষই বাঙালি।” জহর জানিয়েছেন, গত অগাস্ট মাসের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতিতে পশ্চিমবঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মনে করা হচ্ছে, আগামী কিছু মাসের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর বাংলাদেশে স্থায়ী সরকার গঠিত হলে তার প্রভাব ভারতের তথা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও পড়বে।
জহরের মতে, ”আমরা এখনো জানি না সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশি কী চান? আমার মতে, বাংলাদেশের মানুষ মধ্যপন্থি সরকারের পক্ষে থাকবে। তা যদি হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে।” বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির সরাসরি প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের উপর পড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে চোখে পড়ে। এই সমস্ত কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহের বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন জহর সরকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক অভ্র ঘোষ মনে করেন, ”কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রমী। এখানে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্ব অনেকটা। ফলে এদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক কূটনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।” অভ্র ঘোষ মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের বৈঠক যে কেবলমাত্র সৌজন্যমূলক ছিল না, তা মমতার বক্তব্যেই স্পষ্ট। কেবলমাত্র সৌজন্য বৈঠক হলে মুখ্যমন্ত্রী ‘কূটনৈতিক প্রোটোকলে’র কথা বলতেন না। ডিডাব্লিউ