সাঈদ চৌধুরী
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের ছয় মাস হলো আজ। শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে সেখানে বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তুতি চলছে। দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জাগরিত হয়েছে জনমনে।
নতুন প্রজন্মের অতিশয় দৃঢ় শপথের সামনে ফ্যাসিস্ট সরকার বেশিদিন টিকতে পারেনি। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে-বিপ্লবে পতন হয়েছে ‘একনায়কতান্ত্রিক’ শাসনের। স্থলাভিষিক্ত হয়েছে বৈষম্যহীন ছাত্র-সমর্থিত সরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দেশের স্বাধীনতার আখ্যান পুনর্গঠন করার খবর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। বিশ্বব্যাপী এই মিডিয়া হাউসের প্রায় ৩ হাজার কর্মীর মধ্যে ৪০টি দেশের ৭০০ জন সাংবাদিক রয়েছেন।
‘উই আর ট্রাইং টু মেক হিস্টরি রাইট’: বাংলাদেশ রিরাইট ইটস পাস্ট- শিরোনামে সোমবার প্রকাশিত এফটি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে শেখ হাসিনাকে উৎখাতকারী ছাত্র বিদ্রোহের জন্মভূমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে হাসিনার প্রয়াত পিতা, স্বাধীনতার নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়ালচিত্র বিকৃত করা হয়েছে। তার ছবিতে লাল রং মেখে ছাত্র-জনতা এবং তাকে “ফ্যাসিবাদের প্রতীক” বলে অভিহিত করা হচ্ছে। মুজিবের ধানমণ্ডি ৩২ এর বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবের ম্যুরাল এবং ‘মুজিব কর্নার’ ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বিদ্রোহে অংশ নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র মোহাম্মদ আবু বাকের মজুমদার এফটিকে বলেছেন, “আওয়ামী লীগ গল্প, কবিতা এবং শিল্পকর্মের মাধ্যমে একটি মিথ্যা মুজিববাদী আদর্শ তৈরি করেছে। তাই আমরা ইতিহাসকে সঠিক করার চেষ্টা করছি। অর্থাৎ বাংলাদেশ তার অতীত ঢেলে সাজাচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-ছাত্রীগণ এখন বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় আখ্যানের উপর ঐকমত্য অর্জন করার প্রয়াস চালিয়েছে। তাদের নেতৃত্বাধীন কর্মসূচিতে দেশের ননতুন প্রজন্ম আশাবাদী হয়ে উঠেছে। তারা বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম এবং পুলিশ-সহ নতুন সরকারের ব্যাপক সংস্কারকেও সমর্থন করছে। “ফ্যাসিবাদী” আওয়ামী লীগ তার দমনমূলক শাসনামলে যেখানে মবচেয়ে বেশে জনঞাল সৃষ্টি করেছে বলে ঘোষণা করেছেন ড. ইউনূস।
২০২৪ সালের চতুর্থ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের পিছনের প্রচ্ছদে শেখ হাসিনার ছবি ছিল, এখন আগস্ট বিপ্লবের ছবি এবং স্লোগান রয়েছে। এভাবে হাসিনার ছবি এবং উক্তি পাঠ্য বইয়ের পিছনের প্রচ্ছদে স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হত, এর পরিবর্তে তার শাসনের অবসানের সময় প্রদর্শিত গ্রাফিতির চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি হল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। হাসিনার সরকার কর্তৃক মুদ্রিত স্কুল পাঠ্যপুস্তকে মুজিবকে জাতির পিতার ঘোষণা দিয়ে একক মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। ২০২৫ সালের আপডেটে অন্যদের অবদানের কথাও যুক্ত হয়েছে। এমনকি জিয়াউর রহমানের চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতা সম্প্রচারের উল্লেখ রয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাফকাত মুনির বলেছেন। “১৯৭১ কেবল একজন ব্যক্তির নয়”। বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন, “গত ১৫ বছরে কী ঘটেছিল এখন তা প্রকাশ পাচ্ছে: জোরপূর্বক গুম, গোপন নির্যাতন কক্ষ, খুন করে তাদের মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে,” যা ফ্রান্সের একাডেমি ফ্রাঁসেজের সমতুল্য। “এখন মানুষ সেই গল্পগুলো আবিষ্কার করছে।”
* সাঈদ চৌধুরী দৈনিক সময় ও মানব টিভি সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক