‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার’ কারণে ইসরায়েলের মালিকানাধীন জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে মালয়েশিয়া। গাজা উপত্যকায় অব্যাহত আগ্রাসনের জেরে দেশটি ইসরায়েলি পতাকাবাহী আর কোনও জাহাজকে ডক না করতে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা ও বর্বরতা’ চালাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের জিআইএম শিপিং কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। একই সঙ্গে ইসরায়েল অভিমুখী কোনও জাহাজ মালয়েশিয়ার বন্দরগুলোতে মালামাল বোঝাই করতে পারবে না বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আনোয়ার ইব্রাহিম ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং হামাসের ব্যাপারে সবচেয়ে স্পষ্টভাষী বিশ্বনেতাদের একজন। নভেম্বরে একটি সংসদীয় বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছিলেন, তার সরকার হামাসের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে।
মালয়েশিয়ার সরকার আজ বুধবার ঘোষণা করেছে, এসব নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে। হামাসের সাথে ইসরায়েলের বিরোধে আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসাবেই এটি কার্যকর হবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞাটি ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া যা মৌলিক মানবিক নীতিগুলিকে উপেক্ষা করে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যা এবং ক্রমাগত নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।
মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া দীর্ঘকাল ধরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে। নিকটবর্তী ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ এবং পাকিস্তানের মতো দেশটি ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় না। মালয়েশিয়ার পাসপোর্টে রয়েছে “ইসরায়েল ছাড়া সব দেশের জন্য বৈধ।” ইসরায়েলি পাসপোর্টধারীদের পূর্ব অনুমতি ছাড়া মালয়েশিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ।
এর আগে লোহিত সাগরে নিজেদের উপকূলে ইসরায়েল থেকে ও ইসরায়েল অভিমুখী সব জাহাজকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছে ইয়েমেন। এরই মধ্যে সেই ঘোষণা কার্যকরও করেছে ইয়েমেনের হুথি বাহিনী।
ফলে বিশ্বের বৃহত্তম কন্টেইনার মালবাহী সংস্থাগুলি অস্থায়ীভাবে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে তাদের জাহাজ পাঠানো স্থগিত করেছে। দূরপ্রাচ্য থেকে ইসরায়েলি আমদানি ও রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলার বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী হামাসের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বাহিনী লোহিত সাগরে জাহাজে আক্রমন বাড়িয়েছে। হুথির প্রতিরোধ বেড়ে যাওয়ায় ইসরাইল অভিমুখে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
পূর্ব-পশ্চিম বাণিজ্য রুটকে লক্ষ্য করে হুথির আক্রমণগুলি চালিত হচ্ছে। বিশেষ করে সুয়েজ খাল অঞ্চল। তেলবাহী জাহাজ সমূহ সময় ও ব্যয় বাঁচাতে সুয়েজ খাল ব্যবহার করতে হয়।
ভূমধ্যসাগরীয় শিপিং কোম্পানি এবং সিএমএ সিজিএমকে লোহিত সাগরের সামুদ্রিক করিডোর এবং মিশরের সুয়েজ খাল দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করতে বাধ্য করেছে হুথিরা। এটি ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
ডেনিশ শিপিং জায়ান্ট মারস্ক এবং জার্মান শিপিং কোম্পানি হ্যাপাগ-লয়েড লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে তাদের জাহাজ পাঠানো স্থগিত ঘোষণা করেছে। সূত্র: সিএনএন ও আল জাজিরা