টানা ছয় বছর দায়িত্ব পালন শেষে আগামী ২৯ নভেম্বর অবসরে যাচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। তার পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়রা তার শীর্ষ পদে থাকার ছয় বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন। পাকিস্তানি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, কামার জাভেদ বাজওয়ার স্ত্রী ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও হয়েছেন কোটিপতি।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পাকিস্তানি সাংবাদিক আহমেদ নুরানির করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনারেল বাজওয়ার মেয়াদকালে শূন্য থেকে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন তার স্ত্রী আয়শা আমজাদ। স্বামী সেনাপ্রধান হওয়ার আগে উল্লেখযোগ্য কোনও সম্পদ ছিল না তার। তবে বাজওয়ার ছয় বছরের মেয়াদে তিনি এখন হাজার হাজার কোটি রুপির মালিক। একই অবস্থা পরিবারের অন্য সদস্যদেরও।
ফ্যাক্ট ফোকাসের দাবি, ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাজওয়ার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের পরিমাণ এবং সেগুলোর ওপর দেওয়া ট্যাক্সের তথ্য প্রকাশ করেছে তারা।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানমূলক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, জেনারেল বাজওয়ার পরিবারের জ্ঞাত সম্পদের পরিমাণ ১২ দশমিক ৭ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি।
বাজওয়ার স্ত্রী আয়েশার ২০১৬ সালে কোনও সম্পদ না থাকলেও বর্তমানে তার ২ দশমিক ২ বিলিয়ন রুপির সম্পদ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজওয়ার পুত্রবধূ মানহুর সাবির মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বিলিয়নার বনে যান। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তার উল্লেখযোগ্য কোনও সম্পদ না থাকলেও পরের মাসেই দেখা যায় তিনি বিলিয়ন রুপির সম্পদের মালিক।
পুত্রবধূ মানহুর সাবিরের পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সম্পদের পরিমাণ রাতারাতি অস্বাভাবিক রকম বেড়েছে।
ফ্যাক্ট ফোকাস বলছে, বাজওয়ার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের রিয়েল এস্টেট ও তেল ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া জেনারেল সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশে তহবিল স্থানান্তরের মতো ঘটনা ঘটেছে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর প্রায় অর্ধেক সময়জুড়ে দেশটি শাসন করেছে সেনাবাহিনী। অনেক ক্ষেত্রেই নির্বাচিত সরকারের চাইতেও সামরিক বাহিনীকে অধিক ক্ষমতাবান মনে করা হয়। ফলে এই বাহিনীর বিষয়ে কোনও রিপোর্ট করাকে দেশটিতে অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় বলে মনে করা হয়।
এদিকে জেনারেল বাজওয়ার পরিবারের সদস্যদের এমন আর্থিক বিবরণী সামনে আসার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার। গোপনীয় ট্যাক্স নথি কিভাবে ফাঁস হলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেটিও খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার সেনাপ্রধানের পরিবারের সদস্যদের ট্যাক্সের তথ্য ফাঁসের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তরফে এ বিষয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বিষয়টি উল্লেখ করেছে।