পাকিস্তানের সামনে অনিশ্চয়তার হাতছানি?

এশিয়া সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

মাসুম খলিলী : বিভিন্ন নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের জনপ্রিয় ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ইমরান খান এখন ক্ষমতার বাইরে। তার প্রতিপক্ষ প্রায় সব রাজনৈতিক দল মিলে একটি জোট সরকার করেছে দেশটিতে। এই পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক জোট ইমরান হটানোর সাধারণ অ্যাজেন্ডায় একমত হয়ে সংসদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে খানের প্রধানমন্ত্রিত্বের অবসান ঘটিয়েছেন। মুসলিম লীগ নওয়াজ সভাপতি শাহবাজ শরিফ নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। মন্ত্রিসভা গঠনের আগে জোটের চেয়ারম্যান মওলানা ফজলুর রহমান বলেছিলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদে তারা থাকবেন না। বসবেন বিরোধী আসনে। আর দ্রুততম সময়ে যেন নির্বাচন দেয়া হয়।’ শেষ পর্যন্ত অবশ্য তার দলের নেতারাও মন্ত্রী হয়েছেন।

নতুন জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার ব্যাপারে আগে থেকেই বারবার অনাগ্রহের কথা জানাচ্ছিলেন পিপিপির মূল নেতা আসিফ আলী জারদারি। তিনি মন্ত্রিসভায় না গিয়ে সরকারকে ‘সমর্থন’ করতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে তার দলের অন্য কিছু নেতা বলছেন সরকারের প্রত্যক্ষভাবে অংশ না হলে শাহবাজ সরকার দু’মাসও টিকতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত পিপিপিও মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছে। যদিও প্রথম দিন বিলওয়াল ভুট্টো শপথ নেননি। তবে তিনি পরবর্তী পররাষ্ট্র মন্ত্রী হবেন বলে জানান শাহবাজ শরীফ। জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মোত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম)-এর সাথেও জটিল টানাপড়েন শুরু হয়েছিল কেবিনেট গঠন নিয়ে, শেষমেশ তাদেরও দু’জন মন্ত্রী হয়েছেন। কেবিনেট গঠনে প্রভাবশালী কোনো পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে মনে হয়।

ইমরান সুনামি
ইমরান খান ক্ষমতা ছাড়ার পর বিভিন্ন শহরে যে বিশাল বিশাল সমাবেশ করে যাচ্ছেন তাতে এই পাঠান রাজনীতিবিদের প্রতি জনসমর্থনের সুনামি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হয়। সর্বশেষ তিনি করাচিতে রেকর্ড ভাঙা সমাবেশ করেছেন মধ্যরাত অবধি। ড্রোনের পরিসংখ্যান অনুসারে, এই সমাবেশে আড়াই লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে পেশোয়ার, তারও আগে ইসলামাবাদের সমাবেশেও বাঁধভাঙা জোয়ারের সৃষ্টি হয়। লাহোরের পরবর্তী সমাবেশে একই ঘটনা ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইমরান খান পাকিস্তানের জনগণের জন্য যে বয়ান বা বক্তব্য নির্ধারণ করেছেন সেটি পাকিস্তানিদের বড় অংশ গ্রহণ করছে বলে মনে হয়। করাচির সমাবেশ চলাকালে ডনসহ কয়েকটি মিডিয়া তাৎক্ষণিক জনমত জরিপ করেছে। সেখানে ৭৬ শতাংশ মানুষ ‘বিদেশী ষড়যন্ত্রে’ ইমরানের সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন। তারা শাহবাজ সরকারকে একটি বিদেশী শক্তির চাপিয়ে দেয়া ‘আমদানীকৃত সরকার’ বলেও মনে করেন। ইমরানের এই বিপুল জনসমর্থনের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, যুব সমাজের ৮০ শতাংশ ইমরান খানকে সমর্থন করছেন। তারা পাকিস্তানকে ‘প্রকৃত স্বাধীন’ করার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। পাকিস্তানে শতকরা ৬০ ভাগ যুব বয়সী হওয়ায় তাদের এই ব্যাপক সমর্থনের নানামুখী তাৎপর্য রয়েছে। ইমরানের বক্তব্যে আদর্শবাদিতা ও জাতীয়তাবাদ দুটির মিশ্রণ রয়েছে। এ দুটির সংমিশ্রণে ব্যাপক কোনো জাগরণ ২২ কোটি মানুষের একটি দেশে হলে তার ইতিবাচক সম্ভাবনা যেমন থাকে তেমনি বিচ্যুতির আশঙ্কাও থাকে।

ইমরান খানের কর্মপদ্ধতি এখন অনেকটা ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ ধরনের। তিনি নানা সংশয়ের পরও দলীয় এমএনএদের গণপদত্যাগ ঘটিয়েছেন। আনুগত্য লাভের জন্য ‘হর্স ট্র্রেডিং’ থেকে দূরে থেকেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মধ্যরাত অবধি করাচির মতো সংবেদনশীল শহরে জনসভা করছেন যেখানে তিনি জাতীয়তাবাদী নেতাদের মতো ভাষণ দিয়ে বলেছেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের প্রকৃত স্বাধীনতার মূল্য আমার জীবনের চেয়ে অনেক বেশি। তিনি যে ধরনের আন্দোলন সারা দেশে সংগঠিত করছেন, জনমতের যে সুনামি তার পক্ষে সৃষ্টি হয়েছে, তাতে তার দলের ছেড়ে দেয়া শ’ দেড়েক আসনে উপনির্বাচন করা শাহবাজ শরিফের সরকারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। পাকিস্তানের সামরিক এস্টাবলিশমেন্টও এ ঝুঁকি নেবে বলেও মনে হয় না।

সম্ভবত এ কারণেই আসিফ আলী জারদারি শাহবাজ শরিফকে সরকার গঠনে সামনে এগিয়ে দিলেও সরকারের দায় কাঁধে নিতে চাইছিলেন না। এমনকি তিনি পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবার কথা বলে মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রাথমিকভাবে শুরু করার কথা বলেন জাতীয় ও প্রাদেশিক উভয় পর্যায়ে। পাকিস্তানের এই রাজনৈতিক খেলায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় ধরনের ডিনামিক্সই রয়েছে। অগতানুগতিক সৎ রাজনীতিবিদ হিসাবে খ্যাত ইমরান খান মুসলিম লীগ ও পিপিপি দুই দলের বিরুদ্ধে একই সাথে রাজনৈতিক লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। মওলানা ফজলুর রহমানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও রয়েছে সে সাথে। ফলে বড় ও মাঝারি রাজনৈতিক দলগুলো ইমরান ও পিটিআইকে তাদের অস্তিত্বের জন্য আঘাত হিসাবে বিবেচনা করেছে। আর ইমরানের সুনামি এখনকার সরকারি জোটকে বিরোধ পাশে রেখে শেষ পর্যন্ত সরকারে যেতে সহায়তা করেছে।

আন্তর্জাতিক ডিনামিক্স
এই অভ্যন্তরীণ ডিনামিক্সের সাথে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক হিসাব নিকাশ ও মেরুকরণ। বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমেরিকান প্রভাব বলয়ের অধীনে পুরো বিশ্বকে নিয়ে আসার একটি কৌশল গ্রহণ করে। এতে তাদের সামনে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড়ায় চীন ও রাশিয়া। পাকিস্তান স্নায়ুযুদ্ধের সময় চীন ও আমেরিকা দুটো দেশের সাথে সমান্তরাল সম্পর্ক বজায় রেখে আসছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একমেরু বিশ্বব্যবস্থা সৃষ্টি হলে ওয়াশিংটন ভারতকে তার মিত্র হিসাবে পেতে চায়। ভারতের সাথে চীনের দীর্ঘ সীমান্ত বিরোধের কারণে প্রতিপক্ষ হিসাবে চীনকে ঠেকাতে দিল্লিকে পাশে পাবে বলে আশা করেছিল পেন্টাগন। কিন্তু সোভিয়েতের উত্তরাধিকার রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের গভীরতা দিল্লির এত বেশি যে, সে সম্পর্ক ছিন্ন করে ওয়াশিংটনকে সেখানে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ফলে সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দিল্লি রাশিয়ার সাথে কৌশলগত সম্পর্কেই একাত্ম রয়ে গেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কোয়াড’ গঠনের উদ্যোগ কার্যত ব্যর্থ হয়।

ভারতকে কৌশলগত মিত্র হিসাবে পক্ষে পেতে ব্যর্থ হবার কারণে পাকিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর গুরুত্ব বেড়ে যায়। চীন-রাশিয়ার নিকটর্তী দেশ হিসাবে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক পুনর্গঠন জরুরি বিবেচনা করে ওয়াশিংটন। এক্ষেত্রে ইমরান খানের সরকারকে প্রতিবন্ধক হিসাবে চিহ্নিত করে পেন্টাগন। পেন্টাগন-রাওয়ালপিন্ডি বোঝাপড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক পুনস্থাপনে ইমরান খানের বিদায় অনিবার্য শর্ত হয়ে ওঠে। এর বিপরীতে, অবরোধ নিষেধাজ্ঞায় অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বকে দেশটির জন্য কল্যাণকর বিবেচনা করেনি গভীর ক্ষমতা বলয়।

ইমরান খান কৌশলগত এই পরিবর্তনের প্রয়োজনে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে অ-রাজি ছিলেন না। তিনি চেয়েছিলেন একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসুক। সেই সরকার তিন মাসে নির্বাচন করার মতো পরিস্থিতি না থাকলে জরুরি অবস্থা জারি করে সময়কে দীর্ঘায়িত করতে পারে। ইমরান খান তার প্রকাশ্য বক্তব্যেও এটি উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, এস্টাবলিশমেন্ট থেকে পদত্যাগ, অনাস্থা ও নির্বাচন– এ তিন বিকল্পের প্রস্তাবে আমি নির্বাচন বেছে নিয়েছি। এস্টাবলিশমেন্ট ইমরান খানের অপশনকে গ্রহণ করলেও দূরবর্তী কোনো দেশের ফোনে বিরোধী জোটের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গভীর ক্ষমতা বলয় ভূমিকা রেখেছে বলে জানা যায়। আইএসপিআর’র বিবৃতিতে যতই বলা হোক যে, রাজনৈতিক ঘটনাবলির সাথে সামরিক প্রতিষ্ঠানের ‘কোনো যোগসূত্র নেই,’ সেটি গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। অন্তত যারা পাকিস্তানের রাজনীতিকে গভীরভাবে জানেন, তাদের কাছে কোনোভাবেই নয়।

ইমরানের ঝুঁকিপূর্ণ পথ

ইমরান এখন যে পথ বেছে নিয়েছেন এটি তার জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ একটি রাস্তা। তিনি করাচির মহাসমাবেশে সেটি উল্লেখও করেছেন। কিন্তু এর বিকল্প পথ হলো শরীফ-জারদারির সংসদীয় অভ্যুত্থানোত্তর সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের কাছে আত্মসমর্পণ করা। এই পথ হতো ইমরান খানকে জেলে নেয়া, মামলার পর মামলা দিয়ে তার দলকে প্রান্তিক অবস্থায় ঠেলে দেয়াকে মেনে নেয়া। এ ধরনের কথা ক্ষমতা গ্রহণের আগে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি ও মরিয়ম নওয়াজ একাধিকবার বলেছেন। সঙ্গত কারণে ইমরানের মতো একজন লড়াকু ব্যক্তি শেষ বল পর্যন্ত খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় নেমেছেন।

এখন ইমরানের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে থামিয়ে দেবার পরিণতি হতে পারে গৃহযুদ্ধের দিকে দেশটিকে ঠেলে দেয়া। ৮০ লক্ষাধিক পাকিস্তানি টুইট করে ইমরানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। কড়া জাতীয়তাবাদ ও এক ধরনের আদর্শবাদে উদ্বুদ্ধ এই বিপুল তারুণ্যকে দমিয়ে দিতে চাইলে তা সশস্ত্র রূপ নেবার আশঙ্কাও থেকে যায়। এমনিতেই পাকিস্তানের খায়বার পাখতুনখোয়ায় তেহরিকে তালেবান ও বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সশস্ত্র তৎপরতা রয়েছে। এই অবস্থায় শাহবাজ সরকার অথবা গভীর ক্ষমতা বলয় জবরদস্তি কিছু করতে গেলে বড় রকমের বিপত্তি ঘটতে পারে। আর এ নিয়ে সামরিক প্রতিষ্ঠান যে চাপের মুখে রয়েছে তা দুটি ঘটনায় স্পষ্ট হয়।

প্রথমত, হঠাৎ করেই আফগানিস্তানের দুটি প্রদেশে উগ্রবাদী দমনের নামে পাকিস্তানের বিমান হামলার জের ধরে আফগানিস্তানের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে পাকিস্তানে তেহরিকে তালেবান গোষ্ঠী। নতুন সরকার আমেরিকাকে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দিতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে। সেটি বাস্তবে ঘটলে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সাথে দূরত্ব তৈরি হবে। পাকিস্তানের সমাজ ও রাজনীতিতে তালেবানবিরোধী হিসাবে পরিচিতরা এখন সরকারের মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে। মওলানা ফজলুর রহমানকে এর কিছুটা ব্যতিক্রম বলা যায়। নাজিম শেঠি, হামিদ মীরসহ তালেবান বিরোধী লেখক বুদ্ধিজীবীরা কাবুুলের সাথে ইসলামাবাদের দূরত্ব তৈরি হবার মতো নানা লেখা লিখছেন।

যেকোনো কারণে আফগানিস্তানের তালেবান কর্তৃপক্ষের সাথে ইসলামাবাদের সংঘাত তৈরি হলে তা এই অঞ্চলে অনেক বড় অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানের অস্তিত্বের শেকড়কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এটি। আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, ইমরান খান অত্যন্ত সচেতনভাবে সামরিক প্রতিষ্ঠান ও বিচার বিভাগের প্রতি উত্তেজনাকরভাবে অভিযোগের আঙুল তোলা থেকে বিরত রয়েছেন। কিন্তু দেশের ভেতরে বাইরে বিভিন্ন স্থান থেকে সামাজিক গণমাধ্যমে সামরিক প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করার জন্য লেখালেখি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইএসপিআর থেকে এ ব্যাপারে সতর্কবাণীও উচ্চারণ করা হয়েছে। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষকের ধারণা, রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের শত্রুরা সামরিক প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। তারা জানে, পাকিস্তানে পরমাণু অস্ত্র ও নিরাপত্তার সর্বশেষ রক্ষক হলো সেনা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকার ওপর বর্তমান সঙ্কটকাল অতিক্রম করার ক্ষেত্রে অনেক কিছু নির্ভর করবে।

করাচিসহ সাম্প্রতিক জনসভাগুলোতে অনেককে ‘নো বাজওয়া’ প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। জনগণের মধ্যে তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বাজওয়া আগামী নভেম্বরে মেয়াদ পূরণ হবার পর আর সেনাপ্রধানের দায়িত্বে না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কোনো ব্যক্তির ভূমিকার জন্য সেনা প্রতিষ্ঠানের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরির বিষয়টি অনুচিত বলেই মনে করা হচ্ছে।

নতুন নির্বাচনের সম্ভাবনা

পাকিস্তানের জনমত দেখে গভীর ক্ষমতা বলয় স্বল্পতম সময়ে একটি নতুন নির্বাচনের দিকে যাবে বলে মনে হচ্ছে। বিরোধী যে জোট ইমরান সরকারের পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে সেই জোটের প্রধান মওলানা ফজলুর রহমান দ্রুত নতুন নির্বাচন দাবি করেছেন। সার্বিক পরিস্থিতিতে পিপিপি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও এমকিউএম-এর সহযোগিতা ছাড়া শাহবাজের পক্ষে দুই মাস সরকার চালানো কঠিন হতে পারে। ‘গভীর ক্ষমতা বলয়’ বিষয়টি উপলব্ধি করে পাকিস্তানের বৃহত্তর স্বার্থে ২০২২ সালের মধ্যে নতুন এক নির্বাচন ডাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সেনা প্রতিষ্ঠানে নতুন নেতৃত্বও আসতে পারে। নির্বাচনের বাইরে কোনো কিছুর চিন্তা করা হলে সেটি পাকিস্তান রাষ্ট্রের সামনে চরম কোনো অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে, যা দেশে বিদেশে কারো কাম্য হবার কথা নয় কোনোভাবেই।

শরিফের জোট সরকার এর মধ্যে একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এর মধ্যে প্রথমটি হলো, বিরোধীদের সাথে কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করা যেমনটি প্রধানমন্ত্রী শরিফ ইতোমধ্যেই করেছেন, কিন্তু এতে সাফল্য আসেনি। সরকারকে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা প্রাপ্তিসহ অবনতিশীল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হবে। সরকারে স্থিতি না এলে সেটি কঠিন হতে পারে। পাকিস্তানি তালেবান, যারা আফগান সীমান্তের উপজাতীয় অঞ্চলে ফিরে আসছে, তারা আবারও একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি হতে পারে।

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন সহিংসতায় রূপান্তরিত না হয় তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শরিফ এবং তার জোটের অংশীদাররা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কারকে প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন; এগুলো ভোটকে আরো স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করে মারাত্মক অস্থিরতার ঝুঁকি কমাতে পারে।

ইমরান খান নতুন সরকারের সাথে তার লড়াইকে রাস্তায় নিয়ে যেতে চান। শরিফের মতো ব্যাপকভাবে ভিন্ন মতাদর্শের দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট সরকারের মূল রাজনৈতিক ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন হতে পারে। এই মতানৈক্য নির্বাচনকে করে তুলতে পারে অনিবার্য, যার আলামত এখনই দেখা দিতে শুরু করেছে। এছাড়াও শরীফের নতুন সরকার মুদ্রাস্ফীতির হারকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে ভোটারদের কাছ থেকে ইমরান খানের মতো একই চাপের মুখোমুখি হতে পারে। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়েছে। রাজনৈতিক সংঘাত আরো সহিংস হয়ে উঠলে এবং নিরাপত্তা পরিবেশের আরো অবনতি হলে, সামরিক বাহিনীর প্রতি আবারও রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় হবার চাপ দেয়া হতে পারে। নতুন সরকার কিভাবে এই মাইনফিল্ডগুলোতে নেভিগেট করবে তা নির্ধারণ করবে পাকিস্তান এই রাজনৈতিক সঙ্কটের চলমান পৃষ্ঠা উল্টে পরবর্তী নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে যেতে পারবে কিনা।

mrkmmb@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *