পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শাহবাজ শরিফ। গত ১১ এপ্রিল, সোমবার পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি।
জিয়ো নিউজের সূত্রে জানা যায়, শপথ নেওয়ার পর শাহবাজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে গত ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। এরপর বিরোধী জোটের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে সোমবার জাতীয় পরিষদে ১৭৪ ভোট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শাহবাজ। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে তাঁর ১৭২ ভোটের প্রয়োজন ছিল।
পিটিআই দলটির নেতা শাহ মাহমুদ কোরেশিকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন তিনি। জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোটাভুটি বর্জন করেন পিটিআইয়ের আইনপ্রণেতারা। পার্লামেন্ট থেকে গণপদত্যাগেরও ঘোষণা দেন তারা। এতে শাহবাজ কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
জাতীয় পরিষদে শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই তাকে ফোন দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে এরদোয়ান বলেছেন, শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় তিনি ‘খুবই খুশি’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনার (শাহবাজ) নেতৃত্বে পাকিস্তান-তুরস্ক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’ জবাবে শাহবাজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের সময় দুই দেশের আরও ঘনিষ্ঠতা প্রত্যাশা করেন তিনি। অভিনন্দন জানিয়ে ফোন দেওয়ায় এরদোয়ানকে ধন্যবাদও জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।এদিকে টুইটারে শাহবাজকে এক অভিনন্দন বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় মিয়া মুহাম্মদ শাহবাজ শরিফকে অভিনন্দন। ভারত সন্ত্রাসমুক্ত এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করে, যাতে আমরা আমাদের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের ওপর নজর দিতে পারি এবং আমাদের জনগণের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারি।’
এদিকে শাহবাজকে শপথ পড়ানোর আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শাহবাজ শরিফকে শপথ পড়ানোর কয়েক ঘণ্টা আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন দেশটির প্রেসিডেন্ট। এরপর চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
জিয়ো নিউজ সূত্রে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের টুইটে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি জানিয়েছেন তিনি অস্বস্তিবোধ করছেন। চিকিৎসক ভালোভাবে তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং কয়েক দিন বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।’
এসময় প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের চেয়ারম্যান সাদিক সাঞ্জরানি নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শাহবাজকে শপথ পড়ান।
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও ইমরান খানের অনুগত মনে করা হয়। কার্যত অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি থেকে শুরু করে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়ানো পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন ইমরান খানের অনুগতরা। প্রথমে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির আগমুহূর্তে পদত্যাগ করেন জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার। এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোটাভুটি বর্জন করেন আইনপ্রণেতারা। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়ানোর বিষয়টি অসুস্থতার কথা বলে এড়িয়ে যান প্রেসিডেন্টও।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে শাহবাজের মন্তব্যঃ
অন্যদিকে জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরপরই দেওয়া ভাষণে শাহবাজ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যদিও তারা ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চান, তারা জানেন, কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হবে না।
দুই দেশের জনগণের বিষয়গুলো অনুধাবন করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও চিকিৎসাসেবার মতো বিষয়গুলো যেখানে রয়েছে, সেখানে কেন আমরা নিজেদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষতি করছি?’
শাহবাজ বলেন, কাশ্মীরিদের চাওয়া অনুযায়ী কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে নরেন্দ্র মোদির এগিয়ে আসা উচিত। কাশ্মীরের জনগণের জন্য তাঁর সরকার সোচ্চার থাকবে বলেও নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।