বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণের ভারে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়া পাকিস্তান জানিয়েছে, ‘খেলাপি’ তকমা এড়াতে আগামী এক বছরে সুদে আসলে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার তাদের পরিশোধ করতে হবে।
ডলার সংকটে থাকা দেশটির সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেলে তারপর বিদেশি ঋণ পুনর্গঠনে দাতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আশা করছে। তবে সামনের বছরগুলোতে যে ঋণ পাওয়ার আশা করছে পাকিস্তান, তার তুলনায় এখনকার ঋণের দায়ই বেশি।
স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তথ্যের বরাতে পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, আগামী এক বছরে ২ হাজার ১৯৫ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে পাকিস্তানকে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৩৪ কোটি ডলার আসল এবং বাকি ২৬০ কোটি ডলার পরিশোধ করবে ঋণের সুদ হিসেবে। যদিও আগামী এক বছরে কোনো বিদেশি ঋণ পাওয়ার আশা দেখছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এক মাসে ৩৯৫ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। পরের তিন মাসে আরো ৪৬৩ কোটি ডলার এবং শেষের আট মাসে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। অথচ পাকিস্তানের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ শোচনীয়ভাবে কমে ৩১০ কোটি ডলারে নেমেছে, যা দিয়ে তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয়ও মেটানো যাবে না।
পাকিস্তান কুয়েত ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির (পিকেআইসি) গবেষণা প্রধান সামিউল্লাহ তারিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে জানান, পাকিস্তান একটি মারাত্মক আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; আর সেজন্য প্রয়োজন ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ। চলমান আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। বৈদেশিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং আয় বাড়ানোর জন্য সমস্ত বিকল্পগুলো নিয়ে কাজ করা উচিত।
তারিক বলেন, ‘কীভাবে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে নিখুঁত পরিকল্পনা করতে হবে। প্রবাসী পাকিস্তানিদের আস্থা বাড়াতে হবে এবং পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রোশান ডিজিটাল অ্যাকাউন্টে (আরডিএ) লেনদেন নিরাপদ করতে দেশীয় অর্থনীতিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।’
অনাবাসী পাকিস্তানিদের বিনিয়োগ থেকে আরো বিদেশি মুদ্রা পেতে পাকিস্তান সরকার সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রশংসাপত্র ‘নয়া পাকিস্তান সার্টিফিকেট’ এ রিটার্নের হার সংশোধন করেছে বলে জানান তিনি।
পিকেআইসির গবেষণা প্রধান তার পরামর্শে বলেন, পাকিস্তান সরকারের উচিত বিদ্যমান ঋণ পুনর্গঠন করা, নতুন আইএমএফ প্রোগ্রামে প্রবেশ করা, আমদানি কমিয়ে রপ্তানি আয় বাড়ানো এবং সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে শ্রমিকদের রেমিটেন্স বৃদ্ধি করা।
পাকিস্তানের আগের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল ঋণ পুনর্গঠনের পরিবর্তে নতুন ঋণ নেওয়ার পক্ষে ছিলেন বলে জানান তারিক। ইসলামাবাদে চলমান আলোচনা শেষে সরকার আইএমএফের ঋণ পেতে সফল হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, পাকিস্তানকে আগামী সাড়ে তিন বছরে (ফেব্রুয়ারি ২০২৩-জুন ২০২৬) প্রায় ৮ হাজার কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আরিফ হাবিব লিমিটেডের গবেষণা প্রধান তাহির আব্বাস জানান, পাকিস্তান সরকারের উচিত বিদেশি ঋণ ‘পুনর্গঠন’ এর পরিবর্তে ‘রি-প্রোফাইলিং’ করা।
‘রি-প্রোফাইলিং’ এর মাধ্যমে সরকার চীন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বন্ধু দেশগুলোসহ দ্বিপক্ষীয় ও বাণিজ্যিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে চার পাঁচ বছর সময় পেতে পারে ঋণ পরিশোধের জন্য।