মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটোকে বিভক্ত করার যে ষড়যন্ত্র করেছিলেন তা ব্যর্থ হয়েছে। সত্যি বলতে তিনি ন্যাটো মিত্রদের বিভক্ত করতে না পেরে অবাকই হয়েছেন। পুতিনের সামনে আরো অবাক হবার বাকি আছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ সফরের সময় এসব কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে পুতিন হাজার চেষ্টা করলেও ন্যাটোকে বিভক্ত করতে পারবেন না।’ আমরা ন্যাটো মিত্ররা একসাথে থেকেছি এবং একসাথেই থাকব। ইতিহাস দেখিয়েছে, ইউরোপে সংঘাতের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকার গুরুত্ব কতটা। আমরা দু’টি বিশ্বযুদ্ধের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ইউরোপে স্থিতিশীলতা আমাদের স্বার্থের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে গোটা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দোহা ফোরামে জেলেনস্কির বক্তব্য: ইউক্রেনের জেলেনস্কি কাতারের বার্ষিক দোহা ফোরামে এক ডজনেরও বেশি বিশ্ব নেতাদের একটি ফোরামে ভার্চুয়াল ভাষণ দিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এই ফোরামে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি মস্কোকে পুরোপুরি একঘরে করতে এবং রাশিয়ার তেল ও গ্যাস বয়কট করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি কাতারের মতো গ্যাস সমৃদ্ধ দেশগুলোকে পদক্ষেপ নিতে এবং রুশ গ্যাস ও তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে আহ্বান জানান। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কাতার যদি এমন কিছু করতে চায় তবুও ইউরোপের জ্বালানি চাহিদার ৩০ শতাংশও পূরণ করা প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে রাশিয়া এই চাহিদা পূরণ করছে।
পুতিনের ধমকের পর হার্ট এটাক!: ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা অ্যান্টন গেরাশচেনকো দাবি করেছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এক ফেসবুক পোস্টে এমন দাবি করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ইউক্রেনে অভিযানে ব্যর্থতার জন্য পুতিন শোইগুকে অভিযুক্ত করে ধমক দেয়ার পর তিনি এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১১ মার্চ থেকে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে সশরীর জনসম্মুখে আসতে দেখা যায়নি।
ইউক্রেন যুদ্ধে জড়াবে না বেলারুশ: বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেছেন, ইউক্রেনে গিয়ে যুদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা বেলারুশিয়ান কর্তৃপক্ষের নেই। এ নিয়ে ছড়ানো ‘ভুয়া খবরের’ বিষয়ে শীতল প্রতিক্রিয়া দেখানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার গণমাধ্যমের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বেলারুশের বার্তা সংস্থা বেলটিএর বরাত দিয়ে রাশিয়ার তাস এ কথা জানিয়েছে। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি হাজার বার বলেছি, ইউক্রেন যুদ্ধে জড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।’
ব্যাপক হত্যার অভিযোগ: রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে অগণিত মানুষকে হত্যার অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২৬ মার্চ শনিবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে এমন অভিযোগ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এই অমানবিক যুদ্ধ থামাতে মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। টুইটে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, এক মাস আগে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অগণিত ইউক্রেনীয়কে হত্যা করেছে ক্রেমলিন। বাস্ত্তচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। হাজার হাজার রাশিয়ানও হতাহত হয়েছে। এই অমানবিক যুদ্ধ অবশ্যই থামাতে হবে। এর আগে গত ২১ মার্চ ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের ‘স্পষ্ট প্রমাণ’ রয়েছে বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র।
অগ্রযাত্রা থমকে গেছে: কিয়েভের দিকে রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা থমকে গেছে। রুশ সেনারা ইউক্রেনের অন্যত্র যুদ্ধের দিকে মনোনিবেশ করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যম এপি’র সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে নিজের নাম প্রকাশে রাজি হননি তিনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, আপাতত কিয়েভ দখলের লক্ষ্যে স্থল হামলার বদলে ইউক্রেনের পূর্ব ডনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে রাশিয়া।
‘১৬ হাজার সেনা মারা গেছে’: রাশিয়া এ পর্যন্ত ১৬ হাজার সেনা হারিয়েছে, এমন দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। নিজের সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ভিডিওবার্তায় এ দাবি করেন তিনি। ভিডিওতে জেলেনস্কি বলেন, ‘নিহতদের মধ্যে উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারাও আছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনও রুশ জেনারেল কর্নেল বা অ্যাডমিরালের মৃত্যুর খবর পাইনি। অপরদিকে, ন্যাটোর দুই সামরিক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা নিহতের সংখ্যা সাত হাজার থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও একই ধরনের সংখ্যার দাবি করেছেন।
বাইডেনের বৈঠক: পোল্যান্ডে ইউক্রেনের দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রাশিয়ার হামলার পর এটাই ইউক্রেনের কোনো উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাইডেনের সরাসরি বৈঠক। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। জানা গেছে, শুক্রবার থেকেই বাইডেন পোল্যান্ডে অবস্থান করছেন। পোলিশ প্রেসিডেন্টে দুদার সঙ্গেও তিনি বৈঠক করছেন।