নৌকা বা হেলিকপ্টার দেখলেই ত্রাণের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বানভাসিরা

সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী সিলেট থেকে

সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি দ্রুত কমছে। কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা ধীরে নামছে। তবে এখনো অনেক স্থানে নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি। বাড়িঘরে ও নিচু এলাকা পানিবন্দী। যোগযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে বহু গ্রাম। ফলে বানভাসি মানুষ অকল্পনীয় দুর্ভোগে রয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও ত্রাণের তুলনায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা অনেকবেশি। যোগাযোগের বাইরে থাকায় বা দুর্গম হওয়ার ফলে বহু এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি।

এরইমাঝে ত্রাণের নৌকা বা হেলিকপ্টার দেখলেই পঙ্গপালের মতো ছুটে আসছে ক্ষুধার্ত মানুষ। টানা কয়েকদিন ধরে অনাহারে থাকায় তারা হাড্ডিসার হয়ে পড়েছে। ত্রাণ সংগ্রহের শক্তিটুকুও শরীরে অবশিষ্ট নেই, তবু তারা ছুটে আসছে একমুঠো খাবারের আশায়।

এদিকে বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে গেছে বহু এলাকার রাস্তাঘাট। তৈরি হয়েছে বিশাল খানাখন্দ। এসব সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে পানি নেমে গেলেও ওই এলাকাগুলো একপ্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। আর যে এলাকাগুলো পানিবন্দী, সেগুলো যেন একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) দুপুরে সুনামগঞ্জের বন্যার্তদের দেখতে আসেন সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমদ, পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমদ, র‌্যাব-এর মহাপরিচালক চৌধূরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তারা সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস সহ বিভিন্ন সংস্থা উদ্ধার তৎপরতা ও বিতরণ চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে সরকারের পাশাপশি বেসরকারিভাবে সহায়তা প্রদানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ অংশ নিচ্ছেন। প্রবাসীরাও যে যেমন পারছেন— আর্থিক সহায়তা করছেন। মিডিয়া অঙ্গনের তারকারাও এতে যুক্ত হয়েছেন। অনেকেই শুকনো খাবারের পাশাপাশি প্রসূতি মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাবার ও শিশুদের জন্য দুধের ব্যবস্থা করছেন। তবে ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক তৎপরতা থাকলেও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ রয়েছে।

যে ত্রাণ পাচ্ছে সে বারবার পাচ্ছে। অনেকেই একবারও পাচ্ছেনা। অনেক স্থানে মানুষ না খেয়ে আছে’ —এমন মন্তব্য করে সুনামঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন বলেন, তার নিজ এলাকা তাহিরপুরের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ কষ্টে আছে। যথাযথ দিকনির্দেশনার অভাবে ত্রাণ সঠিক জায়গায় পৌছাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে তিনি তার নিজ দল বিএনপির নেতাকর্মীদেরও সমালোচনা করে বলেন, তারাও এই কাজে দায়িত্ব নিচ্ছেন না।সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক লাইভে বলেছেন, দেশবিদেশ থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত তার কাছে প্রায় দেড়কোটি টাকা এসেছে। তিনি তা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ বলেন, ‘প্রাথমিক অবস্থায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে অনেক এলাকার খোঁজখবরও নেওয়া যায়নি। এখন সব এলাকার প্রকৃত সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা ত্রাণ বিতরণে নজর দিচ্ছি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী, যেখানে সবচেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষ আছেন, সেখানে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে বন্যাকবলিত সবাই সহযোগিতা পাবেন।’

এদিকে পানি কমার সাথে সাথে বেরিয়ে আসছে নানা ধ্বংসাত্মক চিত্র। অনেকগুলো এলাকায় পানির কারণে মৃত মানুষের লাশ দাফন করা সম্ভব হয়নি। পলিথিনে মোড়ানো লাশ কাঠের বাক্সে ভরে পানিতে ভাসিয়ে বেঁধে রেখেছেন স্বজনরা। ৬ দিন আগে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ গতকাল দাফন করা হয়েছে, এমন ঘটনাও আছে। এছাড়া বন্যার তোড়ে বহু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে, আসবাবপত্র ব্যবহারের অযোগ্য হয়েছে, ভেসে চলে গেছে গবাদিপশু। এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে না মৃতের সংখ্যা। তবে তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে কয়েক দশকের কোটা মোটামুটি নিশ্চিত, এমনটাই বলেছেন স্থানীয়রা।

এর আগে গত এপ্রিল ও মে মাসের বন্যা হাওর এলাকার কৃষকের বোরো ফসল তছনছ করে দিয়ে যায়। সেই ক্ষতির রেশ কাটতে না কাটতেই এবারের বন্যায় একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন অগণিত মানুষ। এবারের বন্যা সবচেয়ে বড় যুদ্ধ খাবারের যোগান। পাশাপাশি প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি, ঔষধ, ও জ্বালানি।

অন্যদিকে গত ২ দিনে বন্যা পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হওয়ায় সিলেট জেলার ১ লাখ ২৫ হাজার ১৩১ জন বন্যার্ত বাড়ি ফিরেছেন বলে সিলেট জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। এর ফলে চালু থাকা আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যাও কমেছে। কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বর্নি এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন অনেকেই।

প্রায় ১০ দিন পরে সিলেটে রোদের দেখা পেয়ে ঘরের জিনিসপত্র মহাসড়কের ওপরেই শুকোতে দিচ্ছেন মানুষ। শুকাতে দিয়েছেন অনেকে। পাকা দালান ছাড়া সবধরনের ঘরই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধান নষ্ট হয়েছে। টাকাপয়সাও ভেসে গেছে। অনেকেই এখন নিঃস্ব। সিলেট জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ তারিখ পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলা ও সিলেট সিটি করপোরেশনে মোট ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন আশ্রয় নেন। বুধবার পর্যন্ত ৫৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৫৩ মানুষ ছিল। ওইদিন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ১৩১ জন।

আরও পড়ুন
কোথাও আগুন লাগলে সতর্কতার জন্য যা করবেন, যা করবেন না
আগুনে পুড়লে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ও আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *