নজরুলকে নিয়ে ভারতীয়দের রাজনৈতিক অভিলাষ ।। মাহবুব মোর্শেদ

মতামত সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

কথাসাহিত্যিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, একবার কলকাতার গড়ের মাঠে কাজী নজরুলের জনসভা হচ্ছিল। এতটাই ভিড় ছিল যে নজরুলকে দেখা যাচ্ছিল না। তিনি ভিড় ঠেলে নজরুলকে দেখার চেষ্টা করছিলেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন ছোটখাটো একজন ব্যক্তি পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে মাথা উঁচু করে নজরুলকে এক নজর দেখতে চেষ্টা করছেন। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, ওই ব্যক্তি আসলে কবি জীবনানন্দ দাশ।

জীবনানন্দ দাশের প্রথম কবিতার বই ঝরা পালক যারা পড়েছেন তারা ভালো করেই জানেন, তার ওপর নজরুলের কী গভীর প্রভাব পড়েছিল। কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের জন্ম একই বছর, ১৮৯৯ সালে। তবুও নজরুল ব্যক্তি ও কবি হিসেবে জীবনানন্দ দাশের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিলেন। পরে অবশ্য জীবনানন্দ দাশের কবিতা ভিন্ন পথ তৈরি করে নেয়। তবু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সামগ্রিকভাবে নজরুলের অবস্থান অনেক বড় পরিসরে বিস্তৃত।

শুধু বাংলা নয়, ভারতীয় অন্যান্য ভাষার সাহিত্যেও নজরুলকে খুবই আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
বাঙালি মুসলমান সমাজ নজরুলকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তুলনীয় বলে মনে করে। স্বাধীন বাংলাদেশ তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া একমাত্র নজরুলের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপক মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়।

নজরুলের সাহিত্য এর একটি কারণ, কিন্তু একমাত্র কারণ নয়। নজরুলের সাহিত্যের রাজনৈতিক তাৎপর্য বাঙালির ইতিহাসে অনেক বড় জায়গা জুড়ে আছে। ফলে তাকে জীবনানন্দের সঙ্গে তুলনা করে দেশ ও আনন্দবাজার গোষ্ঠী নতুন একটি ফাঁদ পেতেছে। বাঙালি মুসলমান সমাজ তাকে এতদিন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তুলনা করে এসেছে, দেশ তাকে জীবনানন্দের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছে। এটা একটা রাজনৈতিক অভিলাষ। রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের পাশে বাংলাদেশের অবনমনের সমান্তরালে ভারতীয়দের এই রাজনৈতিক অভিলাষ ব্যক্ত হতে শুরু করেছে।

*মাহবুব মোর্শেদ কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *