প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর গুণের কোনো সীমা পরিসীমা নেই। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন-এ, বি৬ ও বি২ ইত্যাদি, যা স্বাস্থ্যরক্ষার বিভিন্ন কাজে লাগে। অ্যালোভেরার বহু গুণের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই ওষুধসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ভেষজ উদ্ভিদটি। তবে ইদানিংকালে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে প্রচারণার ফলে তরুণদের মধ্যে এই উদ্ভিদ ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে অনেক। অনেকে অ্যালোভেরা না খেয়ে দোকান থেকে কিনে প্রসেসকৃত জেল ব্যবহার করে। এতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়।
এবার আসুন জেনে নেই অ্যালোভেরার অসাধারণ কিছু গুণাগুণ সম্পর্কে:
১. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে অ্যালোভেরার ঔষধি গুণের কোন তুলনা নেই। পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরল ও চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে।
২. অ্যালোভেরায় মিনারেল, অ্যামিনো অ্যাসিডসহ নানা পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। যা হাড় ও মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে।
৩. কিছু ক্ষতিকর পদার্থ দেহের মধ্যে প্রবেশ করে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করতে পারে। যা দেহের জন্য মোটেও ভাল কিছু নয়। এই সকল ক্ষতিকর পদার্থ দেহ থেকে অপসারণের জন্য নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করা জরুরি। অ্যালোভেরার জুস পান করলে দেহের ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করতে পারে না। আর যদি প্রবেশ করেও ফেলে, তাহলেও অ্যালোভেরার জুস পানে তা অপসারণ হতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার জুসের গুণ অপরিসীম।
৪. অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে। বিভিন্ন চর্মরোগ ও ক্ষত সারায় এটি। অনেক সময় প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় অ্যালোভেরা।
৫. অ্যালোভেরা দিয়ে রূপচর্চায় নানাবিধ উপকার রয়েছে। যেমন ত্বক গ্লো করা ও তারুণ্য ধরে রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। অ্যালোভেরায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের গভীরে পৌঁছে চামড়া থেকে বয়সের ছাপ দূর করে। পাশাপাশি এতে থাকা ভিটামিন এ, বি ও সি ত্বকের পুষ্টি জোগায়। আর তাই শুষ্ক ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা দারুণ উপকারি। দেশি বিদেশি বেশির ভাগ কসমেটিকসেই কিন্তু অ্যালোভেরা থাকে। আজকাল তো অ্যালোভেরার সাবান, ফেসওয়াশ, সানস্ক্রিন, বডি লোশন নানান কসমেটিকস হরহামেশাই পাওয়া যায়। আপনি যদি সেসব ব্যবহার করতে না চান তাহলে সরাসরি ত্বকে লাগাতে পারেন অ্যালোভেরা জেল। এতে ত্বক ভালো থাকবে এবং নানা সমস্যা মিটে যাবে।
৬. ঠোঁটের যত্নেও অ্যালোভেরার ভূমিকা রয়েছে। এক টেবিল চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারেন। ঠোঁটে লাগানোর পাঁচ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ঠোঁটের রঙ উজ্জ্বল হবে। এ ছাড়া ঠোঁট হবে নরম ও মসৃণ।
৭. ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন অ্যালোভেরা মাস্ক। মাস্ক তৈরি করতে এক চা-চামচ অ্যালোভেরার জেল ব্লেন্ড করে নিয়ে তার সঙ্গে এক চা-চামচ ওটমিলের গুঁড়া এবং আধা চা-চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণ মুখে ও গলায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখতে পারেন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একবার এ কাজ করলে ত্বকের মরা চামড়া দূর হয়ে যাবে।
৮. রোদে ঘোরার ফলে অনেকের ত্বকই রোদে পুড়ে যায়। সেই রোদে পোড়া দাগ দূর করতে দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এটি ত্বকে লাগিয়ে পনেরো মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি রোদে পোড়া দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের আর্দ্রতাও ধরে রাখবে।
৯. অ্যালোভেরার জুস ক্লান্তি দূর করে দেহকে সতেজ করে। নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস করলে দেহের ক্লান্তি দূর হবে এবং দেহ সতেজ ও সুন্দর থাকবে।
১০. ওজন কমাতে অ্যালোভেরার জুস অনেক বেশি কার্যকরী। ক্রনিক প্রদাহের কারণে শরীরে মেদ জমে। তাই অ্যালোভেরা জুসের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান শরীরের জমে থাকা মেদ দূর করে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই পুষ্টিবিদগণ এই সকল কারণে ডায়েট লিস্টে অ্যালোভেরা জুস রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
১১. চুলের যত্নেও দারুণ কাজ করে অ্যালোভেরা। এটি মাথার ত্বকের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে। খুশকিও দূর করে।
১২. চুল পড়া বন্ধ করতেও অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। নিজের হেয়ার ব্রাশের মধ্যে ভালো করে জেল লাগান। এরপর জেল মাখানো ব্রাশ দিয়ে চুল আচড়ান। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হবে।
১৩. অ্যালোভেরা মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। এমনকি ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগালে ব্যথা কমে যায়।
১৪. নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করলে হজম শক্তি বাড়ে। পরিপাক তন্ত্রের নানা জটিলতা সারাতেও সাহায্য করে অ্যালোভেরা। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে, যা হজমশক্তি বাড়িয়ে থাকে। অ্যালোভেরা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধেও অনেক ভাল কাজ করে।
১৫. অ্যালোভেরায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে। একই সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূ কর করতে সাহায্য করে। তাই অ্যালোভেরার জেল মাউথ ওয়াশ এর বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
১৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় অ্যালোভেরা। এটি দেহে সাদা ব্লাড সেল গঠন করে যা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।
১৭. সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পানে পেটের নানা সমস্যা দূর হবে। আর যদি সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকবে না। এছাড়া অ্যালোভেরা জুসে প্রায় ২০ রকম অ্যামিনো অ্যাসিড আছে যা ইনফ্লামেশন এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করে হজম, বুক জ্বালাপোড়া রোধ করে থাকে।
১৮. অ্যালোভেরার জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা উপশম করে থাকে। দাঁতে কোন ইনফেকশন থাকলে তাও দূর করে দেয়। নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ফলে দাঁত ক্ষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১৯. অ্যালোভেরা জুস রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে। ডায়াবেটিসের শুরুর দিকে নিয়মিত এর জুস খাওয়া গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুতরাং খাওয়ার আগে বা খাওয়ার পরে নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস পান করুন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
২০. অ্যালোভেরা হল অ্যান্টি ম্যাইকোবিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা জুস নিয়মিত পান করলে রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের টক্সিন উপাদান করে দূর করে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
২১. গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো ইমোডিন, যা স্তন ক্যান্সার ছড়ানো থেকে রোধ করে। এছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
২২. সুস্থ থাকতে নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খাওয়া উচিত। এটি হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্তর করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে দীর্ঘদিন হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।
আরও পড়ুন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার
১ thought on “দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা”