এম এ খালেক : অনেক দিন ধরেই যাবো যাবো করেও যাওয়া হচ্ছিল না। দু’/তিনবার সিলেট গেলেও তা ছিল অফিসিয়াল প্রোগাম। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সিলেটের উল্লেখযোগ্য স্পটগুলো ঘুরে দেখা হয় নি। বিশেষ করে রাতারগুল এবং জাফলং ভ্রমণ করা হয়নি। যদিও এই দু’টির অনেক সুনাম শুনেছি এবং মিডিয়ার কল্যাণে এসব স্পট সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই বলেন সিলেটে এলে নাকি পর্যটকরা আর ফিরে যেতে চান না। এক ধরনের মায়ার বাধনে জড়িয়ে যান। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর স্নিগ্ধ পরিবেশ পর্যটকদের যারপরনাই মুগ্ধ করে। বিভিন্ন সময় পর্যটকদের ভ্রমণ বৃত্তান্তের সঙ্গে এই সিলেটের পর্যটন স্পটের সুন্দর সুন্দর ছবি দেখেছি আর ভেবেছি কখন যেতে পারবো এই সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে।
অনেকটা হঠাৎ করেই সুযোগ এসে গেল। রমনা পার্কে নিয়মিত প্রাত: ভ্রমণ করেন এমন কিছু সংখ্যক সিনিয়র সিটিজেনের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন ‘গুড মর্নিং সোসাইটি’র সভাপতি প্রফেসর জহুরুল হক ভূইয়া জানালেন, গুড মর্নিং সোসাইটির একজন সদস্যের ছেলের বিয়ে হতে যাচ্ছে সিলেটে। সেখানে সবাইকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। আমি একবাক্যে সম্মতি দিলাম।
সিদ্ধান্ত হলো একজন নারী সদস্যসহ আমরা মোট ৮জন সিলেট যাবো। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখ বৃহস্পতিবার আমরা সিলেট গমনের জন্য ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ক্রয় করি। ট্রেন ছাড়ার নির্ধারিত সময় হচ্ছে বেলা তিনটা। নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুটা আগেই আমি এবং প্রফেসর জহুরুল হক ভূইয়া কমলাপুর রেলস্টেশনে উপস্থিত হই। এর কিছুক্ষণ পর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ (মো:বেলায়েত হোসেন, বজলুর রহমান ও তার স্ত্রী দিলারা রহমান, মহিউদ্দিন চৌধুরী, এসএম সালাহউদ্দিন, মো:হেলাল উদ্দিন) একে একে রেল স্টেশনে এসে উপস্থিত হলেন।
ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ানোই ছিল। আমরা নির্ধারিত আসনে উপবেশন করলাম। আমাদের অবাক করে দিয়ে নির্ধারিত সময়েই ট্রেন যাত্রা শুরু করে। ট্রেনের নাম কালনী এক্সপ্রেস। আগেই শুনেছিলাম, কালনী এক্সপ্রেস দ্রুতগমন করে এবং খুব বেশি স্টেশনে থামে না। ট্রেন বেশ দ্রুত গতিতেই চলতে শুরু করে। আমরা চারিদিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে এবং নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করতে করতে বেশ আনন্দেই চলছিলাম।
এমন সময় বিশাল দেহী বিকট দর্শন কিম্ভূতকিমাকার এক যুবক অত্যাশিতভাবে প্রফেসর জহুরুল হকের নিকট এসে অনেকটা হুমকির সুরে বলেন, আপনারা কেনো ফরিদপুর সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করলেন? আপনাদের আমি দেখে নেবো। আমাদের গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চেয়ে বলেন, সিলেটে আপনাদের সঙ্গে আমার আবারো সাক্ষাৎ হবে।
তিনি আরো বলেন, আপনাদের কথা-বার্তা আমি ভিডিও করেছি। আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তার এই অযাচিত আচরণে আমরা যারপর নাই বিস্মিত এবং হতবাক হয়ে যাই। এক পর্যায়ে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে যুবকের কথা কাটাকাটি হলে তিনি বলেন, আমার বাড়ি গোপালগঞ্জে। আমাকে কেউ কিছু বলতে পারবে না। তার এই উদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ ট্রেনের যাত্রীদের হতবাক করে। আনন্দে কিছুটা ছেঁদ পড়লেও আবারো আমরা গল্পে মেতে উঠলাম।
আমরা একসঙ্গে ৮জন সিনিয়র সিটিজেন একই সঙ্গে ট্রেন ভ্রমণ করছি এটা দেখে সম্ভবত যুবকটি আর আমাদের ঘাটাতে সাহসী হয়নি। সিলেট রেল স্টেশনে নেমে আমরা আর সেই যুবকের কোনো সন্ধান পাইনি। হতে পারে যুুবকটি মানসিকভাবে অসুস্থ্য অথবা বিকারগ্রস্ত। যা হোক আমরা সিলেট স্টেশনে নেমে আগে থেকেই ভাড়া করা গাড়িতে হোটেল ব্রিটেনিয়ায় উপস্থিত হলাম।
আগেই রুম বুকিং দেয়া ছিল। কাজেই কোনো অসুবিধা হয় নি। তখন রাত ১০ বাজে প্রায়। সেদিন রাতে আর কোথাও না গিয়ে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার গ্রহণ করে হোটেল গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরদিন অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্টে নাস্তা খেয়ে আমরা সাবাই মিলে রাতারগুল জলাবন দেখতে গেলাম।
বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে রাতারগুল জলাবনের অনেক ছবি দেখেছি। এবার নিজ চোখে তা দেখার সুযোগ হলো। পানি কম থাকায় অধিকাংশ গাছই ছিল ডাঙ্গায়। তবে বর্ষাকালে গাছগুলো যে পানিতে ডুবে থাকে তা ভালোভাবেই অনুধাবন করা যায়। এমন চমৎকার একটি জলাবন বাংলাদেশে আছে তা এখানে না এলে কারো পক্ষে সঠিকভাবে অনুধাবন করা সম্ভব হবে না।
তবে এখানকার ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। আগত পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। বর্ষাকালে রাতারগুল জলাভূমি পানিতে পূর্ণ থাকে। কিন্তু বর্ষা শেষে রাতারগুল প্রায় শুকিয়ে যায়। তাই নৌকা নিয়ে বেশি দূর ভ্রমণ করা যায় না। কিন্তু তারপরও নৌকা ভাড়া নেয়া হয় অনেক বেশি। নৌক চালকরা জোটবদ্ধ। তারা যে ভাড়া চাইবে তাই আপনাকে দিতে হবে। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।
আমরা প্রায় ঘন্টা দেড়ের রাতারগুল জলাভূমিতে নৌকা ভ্রমণ শেষে তীরে ফিরে এলাম। সেখান থেকে আমরা চলে এলাম সিলেটে। হোটের রুমে উপস্থিত হয়ে ফ্রেস হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা হযরত শাহজালাল (র:) মাজারে গেলাম জুম্মার নামাজ আদায় করার জন্য। নামাজ শেষে হোটেলে ফিরে এলাম। আসার পথে কিছু কেনাকাটা করলাম।
হোটেলে এসেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলাম। বিরাট এবং অত্যাধুনিক কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান হলো। আমরা সেখানে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে হোটেলে ফিরে এলাম। কিন্তু ক্লান্তিজনিত কারণে বিকেলে আর কোথাও না গিয়ে হোটেলেই বিশ্রাম নিলাম।
পরদিন সকালের নাস্তা সেরে আমরা জাফলং এবং তামাবিল সীমান্ত এলাকা দেখতে বেরিয়ে পড়ি। রাস্তায় যাবার সময় হরিপুর গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন করি। এই গ্যাস ফিল্ড বেশ কয়েক বছর আগে অগ্নিকাণ্ডে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা জাফলং যাবার পথে জৈন্তারানির বাড়ি দেখতে গেলাম। রাস্তার পাশেই জৈন্তা রানির বাড়ি। বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। শুধু বাউন্ডারি ওয়ালের ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট রয়েছে।
সেখান থেকে আমরা সরাসরি তামাবিল সীমান্ত এলাকা দেখতে গেলাম। সীমান্ত এলাকায় গিয়ে মনটা আনন্দে ভরে গেলো। এত সুন্দর লাগছিল যে ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। সেখানে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ হয়। কিছু দূরেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যদের দেখা গেলো।
সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর আমরা জাফলংয়ের দিকে চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা স্থানীয় গাড়ি চালকদের সমিতি অফিসে বসে চা পান করি। একজন গাড়ি চালক আমাদের নানাভাবে প্রভাবিত করছিলেন তার নির্দেশিত গাড়িতে ভ্রমণ করার জন্য। এ জন্য তিনি আড়াই হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তার দাবিকৃত টাকার পরিমাণ অনেক বেশি বলে মনে হলো। ফলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, নৌকা বা গাড়িতে ভ্রমণ করবো না। যতদূর সম্ভব আমরা পায়ে হেঁটে এলাকা ভ্রমণ করবো। সেভাবেই আমরা ৮জন সিনিয়র সিটিজেন পায়ে হেঁটে তীর থেকে নদীর তলদেশে নেমে গেলাম। নদীর স্বচ্ছ পানি দেখে মন জুড়িয়ে গেলো।
সেখানে নৌকায় ভ্রমণের সুযোগ থাকলেও সে সুযোগ আমরা গ্রহণ করিনি। বরং কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে তীরে চলে এলাম। অবশ্য তীরে উঠতে আমাদের বেশ কষ্ট করতে হয়। আমরা কিছু দূর হেঁটে উঠার পর বিশ্রাম নিতাম। আবারো হাঁটা শুরু করতাম। এভাবে বিশ্রাম নিতে নিতে আমরা এক সময় উপরে নদী তীরে উঠে আসতে সমর্থ্য হই।
উপরে উঠে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা সিলেট শহরে চলে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করি। গাড়ির চালক কাউচ মিয়া প্রস্তাব করলেন, এখান থেকেই দুপুরের খাবার গ্রহণ করার জন্য। কিন্তু আমরা তার প্রস্তাবে সম্মত হই নি। আমরা সিলেট শহরে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমাদের ইচ্ছা ছিল সিলেট শহরের পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার গ্রহণ করবো। আগেই শুনেছিলাম এই রেস্টুরেন্ট খুবই ব্যস্ত। এখানে খেতে গেলে বেশ কিছুটা সময় নিতে হয়।সিলেট শহরে ফিরে আসার পথে গাড়িতে থাকা অবস্থায় নানা বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল। বিশেষ করে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমাদের মধ্যে একজন ছিলেন মারাত্মক দলকানা ধরনের। তিনি বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দিয়ে চলছিলেন। তার বক্তব্যে মনে হচ্ছিল দেশে বোধহয় কোনো সমস্যা নেই। হঠাৎ একজন বলে বসেন, নির্বাচনের বিষয়ে কিছু বলেন। দিনের ভোট রাতে হয়েছে এটা কোন ধরনের উন্নয়ন?
এ কথা শুনে ভদ্রলোক প্রচন্ড রকম ক্ষেপে যান। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরবেও তো নির্বাচন হয় না। তাতে অসুবিধা কোথায়? তার এই বক্তব্যের পর গাড়িতে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আমি তাকে বলি, আপনি ইতিহাস ভালোভাবে পড়েন। তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনি পত্রিকায় লেখালেখি করেন বলেই কি ইতিহাস আমার চেয়ে বেশি জানেন। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, আর একটু হলেও হাতাহাতি শুরু হয়ে যেতো।
আমাদের মধ্যে এক শ্রেণির মানুষ আছেন যারা অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিতে শিখেন নাই। তারা মনে করেন, তারা যা বলছেন বা তারা যা বুঝেন সেটাই চূড়ান্ত। সত্যি অবাক হতে হয় এমন ধরনের মানুষের আচরণ দেখে। এই ভদ্রলোকের আচরণ আগেও লক্ষ্য করেছি। আমরা যখন সিলেট স্টেশনে নামলাম তখন তিনি রেলের একজন এ্যাটেনডেন্টের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন। তিনি অত্যন্ত উচ্চ স্বরে ছেলেটিকে গালাগাল করতে থাকলেন। এক পর্যায়ে তাকে অনেকটা আঘাত করার জন্য উদ্যত হলেন। আমরা কোনো মতে তাকে নিরস্ত্র করি। তার মতো একজন বয়স্ক মানুষের এমন আচরণ দেখে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যান। এমন ধরনের বিবেকহীন বাজে লোককে কোনোভাবেই ভ্রমণ সঙ্গি করা উচিৎ নয়। এতে পদে পদে বিপদের আশঙ্কা থাকে।
যা হোক আমরা পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে এসে উপস্থিতি হলাম। হোটেলে ঢোকার পরই বুঝতে পারলাম হোটেলে কেমন ভীড়। প্রচুর সংখ্যক মানুষের সমাহার। কোনো সিট খালি পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা কোনো মতে একটি বড় টেবিল দখল করে বসলাম। সেখানে যে খাবার পরিবেশন করা হলো তা বেশ উন্নত মানের এবং দামও তুলনামূলকভাবে কম। আমরা সবাই তৃপ্তি সহকারে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে হোটেলে ফিরে এলাম।
আগেই হোটেল থেকে চেক আউট করা হয়েছিল। ফলে আমরা হোটেল লবিতে বসে গল্প করতে শুরু করলাম। কিন্তু সময় যেনো আর কাটতে চায় না। বিকেল বেলা আমাদের সহযাত্রী মহিউদ্দিন চৌধুরী ভাইয়ের এক সহপাঠি, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক লিমিটেডের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার স্বস্ত্রীক হোটেলে আসেন। তারা আমাদের সঙ্গে অনেক ক্ষণ গল্প করলেন। আমরা তাদের পেয়ে যেনো কিছুটা বর্তে গেলাম। সিলেট সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা গেলো তাদের নিকট থেকে। তাদের সঙ্গে হাল্কা নাস্তা করলাম আমরা সবাই। সময়টা বেশ আনন্দেই অতিবাহিত হলো।
আমাদের নির্ধারিত বাসযাত্রা শুরু হবে রাত ১০টায়। তাই আমরা কিছুটা আগেই হোটেল থেকে বাস স্টেশনে উপস্থিত হলাম। এরপর যাত্রা শুরু হলো ঢাকার পথে। বাস একটানা চলছিল। মাঝে হবিগঞ্জে ২০ মিনিটের জন্য বিরতি দেয়া হলো। আমরা সেখানে নেমে চা-নাস্তা খেলাম। আবারো বাস ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। আমরা ভোর ৫টার দিকে ঢাকার কাকরাইলে নেমে পড়ি। এভাবেই সমাপ্ত হলো আমাদের দু’দিন দু’রাতের সিলেট ভ্রমণ।
👉ডায়নামিক ওয়েবসাইট দিয়েই গড়ে তুলুন আপনার প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি। সেবা দেয়ার জন্য সবসময় আপনার পাশে আছে ‘ভার্সডসফট’।
সিলেট ভ্রমণকালে আমাদের প্রত্যয় জন্মে যে এই অঞ্চলের মানুষ সাধারণভাবেই অত্যন্ত বিত্তবান এবং তারা প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। সিলেটের অনেকেই বিদেশে অবস্থান করেন বিধায় তাদের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো। সিলেটের মানুষের মধ্যে হোটেলে খাবার গ্রহণের প্রবণতা অন্য যে কোনো অঞ্চলের মানুষের চেয়ে বেশি। বিষয়টি নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিকেএসএফ আর চেয়ারম্যান ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদের আলাপ হলে তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলের মানুষ সবাই বিত্তবান এটা ঠিক নয়। যারা বিদেশে থাকেন তাদের অনেকেই এলাকায় এসে বড় বড় বাড়ি নির্মাণ করেন। কিন্তু বৃহৎ বাড়ির পাশেই দরিদ্র মানুষের ছিন্ন ঘর প্রত্যক্ষ করা যায়। সিলেটের মানুষের মাঝে বিত্তবান এবং বিত্তহীনের ব্যবধান খুবই বেশি। আর যারা বিদেশে থাকেন তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশে এলে বাড়িতে অবস্থান না করে হোটেলে থাকতেই পছন্দ করেন। তারা হোটেলেই খাবার গ্রহণ করেন। ফলে হোটেলগুলোতে সব সমযই প্রচন্ড ভীড় লেগে থাকে।
প্রবাসী সিলেটিরা যে অর্থ দেশে প্রেরণ করেন তা শিল্প খাতে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়া গেলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ অর্থই বাড়ি নির্মাণ বা এ ধরনের অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমারা কয়েকজন সিনিয়র সিটিজেন মাঝে মাঝেই দেশের বিভিন্ন জেলা ভ্রমণে যাই। করোনার কারণে আমাদের সেই ভ্রমণ কার্যক্রম কিছুটা বন্ধ রয়েছে। তারপরও চেষ্টা করি কিভাবে ভ্রমণে যাওয়া যায়। ভ্রমণ নানা কারণেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভ্রমণের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে জ্ঞানার্জন করা যায়। বই-পুস্তক পড়ে অথবা কারো নিকট থেকে বর্ণনা শুনে যে জ্ঞানার্জন করা যায় তা কখে নাই পরিপূর্ণ নয়। একমাত্র ভ্রমণের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান। তাই প্রত্যেকটি সামর্থ্যবান মানুষেরই উচিৎ নিয়মিত ভ্রমণ করা।
কথায় বলে, মানুষ চেনা যায় এক সঙ্গে ভ্রমণ এবং আর্থিক লেনদেন করলে। ভ্রমণের সময় কিছু বিষয় সতর্কতার সঙ্গে পরিহার করা উচিৎ। উচ্চ স্বরে কথা বলা একজন ভ্রমণকারির জন্য কোনোভাবেই উচিৎ নয়। কথায় বলে, ‘ফলবান বৃক্ষ এবং জ্ঞানবান মানুষ আপনা থেকেই নত হয়।’ এমন কোনো বিষয়ে আলোচনা করা উচিৎ নয় যা অন্যকে আহত করে। আমি যা জানি তাই সঠিক অন্যের জানাটা ভুল এমন ধরনের অহমিকাপূর্ণ ভাব নিয়ে কারো সঙ্গে তর্ক করা কোনোভাবেই উচিৎ নয়।
ভ্রমণকালে খাবার গ্রহণ এবং শয্যা গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যের সুবিধাকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ। শুধু নিজের স্বার্থ বিবেচনা করলে চলে না। অবশ্য কয়েকবার এক সঙ্গে ভ্রমণ করলেই মানুষের চরিত্র অনুধাবন করা যায়। যারা ভ্রমণ করবেন তাদের একটি বিষয় সব সময়ই মনে রাখতে হবে, পর্যটন স্পটে তিনি বড়ই অসহায়। বিপদে পড়লে কেউ তাকে সহায্য করতে এগিয়ে আসবে না। তাই স্থানীয়দের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কোনো কারণেই কারো সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে কথা বলা বা বাজে ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারণ মানুষের পরিচয় তার আচরণের মধ্যেই নিহিত। কাজেই সব সময় বিশেষ করে ভ্রমণকালে আচার আচরণ অবশ্যই পরিশীলিত এবং ভদ্র হওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার