দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। কেবল তুরস্কেই ১৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। বাকিরা সিরিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোয়ান বলেছেন, ভূমিকম্পের শুধু তুরস্কেই ১৫০০ জনের বেশি নিহত এবং ৫ হাজার ৩৮৩ জন আহত হয়েছেন। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে, মৃতের সংখ্যা কতটা বাড়বে তা অনুমান করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
ভয়াবহ এই বিপর্যয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪৫টি দেশ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এরদোয়ান।
এদিকে তুরস্কের এমন বিপদের দিনে সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তিনি এক টুইটে বলেন, সকাল থেকেই তুর্কি এবং সিরিয়ার বিপদের পড়া মানুষের খোঁজ খবর রাখছি। তাদের পাশে আমি আছি। যুক্তরাজ্য যেকোনো পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক শতাব্দীর মধ্যে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের একটি। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৮। এটি স্থানীয় সময় সোমবার ভোর সোয়া চারটার দিকে আঘাত হানে। গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে। এ সময়ে লোকজন ঘুমিয়ে ছিল।
ধ্বংস্তুপের নীচে অনেক লোক চাপা পড়ে আছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে বহু সরকারি ভবন ধসে পড়েছে। ভেতরে অনেক লোক আটকা পড়ে আছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। দেশটিতে ১৯৯৯ সালে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে ১৭ হাজার লোক নিহত হয়।
সিরিয়া ও তুরস্ককে সহায়তার প্রস্তাব পুতিনের:
মারাত্মক শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সিরিয়া ও তুরস্ককে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান উভয়ের সঙ্গে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্রতা রয়েছে।
সোমবার রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন এবং সাইপ্রাস। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে।
ভূমিকম্পের পর এরদোয়ানকে পাঠানো এক বার্তায় পুতিন অসংখ্য প্রাণহানি এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির এ ঘটনায় গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনায় আপনার যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন আমরা সেটা করতে প্রস্তুত আছি। প্রেসিডেন্ট আসাদকেও একধরনের বার্তা পাঠান পুতিন।
তিনি বলেন, ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে প্রিয়জনকে হারিয়ে যারা গভীর দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে আছেন, রাশিয়া তাদের সেই কষ্ট ভাগ করে নিচ্ছে এবং একই সঙ্গে সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে।
রাশিয়া আরো জানিয়েছে, উদ্ধারকর্মীদের নিয়ে তাদের দুটি ইলিউশিন-৭৬ উড়োজাহাজ তুরস্কে উড়ে যেতে এবং উদ্ধারকাজে হাত লাগাতে প্রস্তুত আছে। ১০০ উদ্ধারকর্মীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানায় দেশটির জরুরি মন্ত্রণালয়।
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সময় আসাদের পক্ষ নিয়েছিল রাশিয়া। এমনকি আসাদের পক্ষে সেখানে যুদ্ধেও করেছে রুশ বাহিনী। দেশটিতে রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশে খমেইমিম বিমান ঘাঁটি ও তারতুস বন্দরে রাশিয়ার শক্তিশালী নৌ-ঘাঁটি আছে। তবে ভূমিকম্পে সেগুলোর কোনোটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলেও জানিয়েছে রাশিয়া।