তিন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে ৯০ জন ফিলিস্তিনির মুক্তি

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর প্রথম দফায় তিন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তিকে দিয়েছে ইসরায়েল। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ফিলিস্তিনের সুপরিচিত রাজনৈতিক নেতা খালিদা জাররারও আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি শুরুর পর হামাস তিন জিম্মিকে গাজায় রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরা হলেন- ৩১ বছর বয়সী ডরন স্টেইনব্রেচার, ২৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ ইসরায়েলি দ্বৈত নাগরিক এমিলি ডামারি এবং ২৪ বছর বয়সী রমি গোনেন।

মুক্তির পর তাদের তেলআবিবের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তাদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল আছে বলে জানানো হয়।
তবে এমিলিকে তার মায়ের সাথে সাক্ষাতের সময় হাতের আঙ্গুলে ব্যান্ডেজ দেখা গেছে।

হামাস জানিয়েছে প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ৩০ জন করে ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে। শেষ মূহুর্তের বিলম্বের পর এবারের এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলো। তবে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে কারণ তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।

মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা কারা

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যে ৯০ জন ফিলিস্তিনি ফিরে এসেছেন তাদের মধ্যে ৬৯ জন নারী ও ২১ জন টিনএজ বয়সী ছেলে। হামাস জানিয়েছে এরা পশ্চিম তীর ও জেরুসালেমের। তাদের পশ্চিম তীরে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রিজন সার্ভিস।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে যারা মুক্তি পেয়েছেন তাদের সম্প্রতি আটক করা হয়েছিলো এবং তাদের বিচার বা শাস্তি দেয়া হয়নি। যুদ্ধবিরতির প্রথম দফায় ইসরায়েল ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিনিময়ে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দিবে বলে ইসরায়েল আশা করছে।

রাজনীতিক খালিদা জাররার মুক্ত

ফিলিস্তিনের সুপরিচিত রাজনৈতিক নেতা খালিদা জারার মুক্তি পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা এপি ও নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ খবর দেয়া হয়েছে।

পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্যা লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইনের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এই খালিদা জারার। গত এক দশকের মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই তিনি কারাগারে আসা-যাওয়া করছিলেন। এর আগে উস্কানি দেয়ার অপরাধে তাকে দণ্ড দিয়েছিলো ইসরায়েল। তার সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

পশ্চিম তীরে উল্লাস, শ্লোগান

রবিবার সারাদিন ধরে ফিলিস্তিনিরা মুক্তি প্রাপ্তদের স্বাগত জানাতে সমবেত হয়েছে পশ্চিম তীরে। বন্দিদের বহনকারী বাস যখন বৈতুনিয়া শহর অতিক্রম করছিলো তখন মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়েছে। তারা গাড়ীর হর্ন বাজিয়ে ও শ্লোগান দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। অন্যদিকে বাসের ভেতর থেকে মুক্তি প্রাপ্তরা হ্যাস্যোজ্জল ভঙ্গীতে ভি-চিহ্ন দেখিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে। তাদের সাথে রেড ক্রসের কর্মকর্তাদেরও দেখা গেছে।

গাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান সতর্ক করে বলেছেন গাজায় ভ্রমণ হবে চ্যালেঞ্জিং। জিম্মি ও বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া ‘সংঘাতে বিপর্যস্ত লাখ লাখ মানুষের জন্য আশা বয়ে নিয়ে এসেছে, বলছিলেন টেড্রোস আডানোম গেব্রিয়াসুস। “এই মূহুর্তটাই আমি আশা করছিলাম,” বলছিলেন তিনি। তবে তিনি বলেন ধ্বংসের মাত্রা ও জটিলতা বিবেচনা করলে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার হবে জটিল ও চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ।

‘ছয়শোর বেশি ত্রানবাহী ট্রাক গাজায়’

জাতিসংঘ জানিয়েছে ৬৩০টির বেশি ত্রানবাহী ট্রাক রবিবারই গাজায় প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে কমপক্ষে তিনশ ট্রাক গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের দিকে গেছে বলে জানিয়েছেন মানবিক বিষয়ক জাতিসংঘ আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার।
“নষ্ট করার মতো কোন সময় আমাদের হাতে নেই,” বলেছেন তিনি।

গাজা খাদ্যের জন্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গড়ে মাত্র ৪০টির মতো ত্রানবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছিলো। যদিও সংঘাতের আগে দৈনিক পাঁচশো ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছিলো। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী দৈনিক ছয়শো ট্রাক ত্রাণ নিয়ে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করবে। বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *