ঢাকা কলেজের হোস্টেলে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারা থাকে তা চিন্তা করলে গা হিম হয়ে আসে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এক সময় ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৬৩-১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকা কলেজের হোস্টেলে ২১৬ নম্বর রুমে থাকতেন।
২৫ এপ্রিল, সোমবার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি লিখেছেন, ‘কিছুদিন ধরে কেন যেন মন টানছিল আমার ছাত্রজীবনের অনেক সুখস্মৃতি জড়িত ঢাকা কলেজের নর্থ হোস্টেল একবার ঘুরে আসব। কলেজে পড়ার দু’ বছর ১৯৬৩-১৯৬৫ সনে হোস্টেলের যে ঘরটিতে একটানা থেকেছিলাম, দোতলার সেই ২১৬ নম্বর ঘরটিতে এখন কারা থাকে, কিভাবে থাকে জানতে ইচ্ছা হচ্ছিল। ভেবেছিলাম তাদের সাথে বসে একটু স্মৃতিচারণ করে আসবো। কিন্তু তা বোধহয় আর হল না। ’
স্ট্যাটাসে এই অর্থনীতিবিদ লিখেছেন, ‘সাংবাদমাধ্যমগুলোয় কয়েকদিন ধরে ঢাকা কলেজের ছাত্র আর নিউ মার্কেটের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সংবাদ নিয়ে শিরোনাম হচ্ছে। একজন নিরীহ পথচারী কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ছবি দিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন বেরিয়েছে। জীবজগতের মধ্যে মানুষই যে সবচেয়ে নৃশংস হতে পারে এই জানা কথাটা নিজের চেনাজানা পারিবেশের মধ্যে নতুন করে ঘটতে দেখলে মনে ধাক্কা লাগে। বিশেষ করে যখন অভিযুক্তদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। অবশ্য এ ধরনের ঘটনার সংবাদ নতুন কিছু নয়, এতদিনে গা-সওয়া হয়ে যাবার কথা। এই সেদিনও তো বুয়েট-এর ছাত্র আবরারকে ছাত্রাবাসের ভেতরেই দলীয় ছাত্র সংঘটনের কর্মীরা নৃশংস ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। যে ছাত্রসমাজকে দিয়ে আমরা দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরীর স্বপ্ন দেখছি, তাদের মধ্যে কী ধরনের হিংস্র দানবদের আমরা লালন পালন করছি।’অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন, ‘আর একবার হোঁচট খেলাম যখন দেখলাম যে সংবাদে অভিযুক্ত ছাত্রদের নর্থ হোস্টেলের আবাসস্থল হিসেবে যে দুটি রুমের নাম এসেছে তার একটি ২১৮; হোস্টেলের ইস্ট উইং-এ আমার তখনকার ঘরের এক ঘর বাদ দিয়ে এ ঘরটি। আমার সময়ে এ ঘরে যে ছাত্ররা থাকত তারা আমার এক কালের খুব কাছের মানুষ; সবাই পরবর্তী জীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন- একজন বুয়েটে শিক্ষকতা শেষে অবসরে গেছেন, আরেকজন বুয়েট থেকে পাস করার পর একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে সর্বোচ্চ পদ থেকে অবসর নিয়েছেন, আরেকজন কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির শিক্ষকতা করে সেখানেই বসবাস করছেন। হোস্টেলের সব ঘরের বাসিন্দাদের সম্বন্ধেই এরকমটি বলা চলে। কারণ, ঢাকার বাইর থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করা সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররাই ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকত। সেসব ঘরগুলোতে এখন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারা থাকে চিন্তা করলে গা হিম হয়ে আসে। বলা বাহুল্য অধিকাংশ ছাত্ররা পরিস্থিতির নিরুপায় শিকার মাত্র।’