ট্রাম্প ও ভ্যান্সের সাথে বাগবিতণ্ডার পর হোয়াইট হাউজ ছাড়লেন জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক আমেরিকা সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সাথে হোয়াইট হাউজে ওভাল অফিসের বৈঠকে সংবাদ মাধ্যমের সামনেই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এর জের ধরে মি. জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউজ থেকে চলে যেতে বলা হয় এবং পূর্ব নির্ধারিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়।

মি. ট্রাম্প কথা কাটাকাটির সময় জেলেনস্কিকে কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য বলেন এবং একইসঙ্গে তিনি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন’ বলে অভিযোগ করেন। তবে মি. জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কোনো আপস করবেন না।

ওদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে কথা বলেছেন বলে তার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন। তিনি ইউক্রেনের প্রতি তার নিঃশর্ত সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

উত্তপ্ত ১০ মিনিটে ভেঙ্গে গেলো আলোচনা

জেলেনস্কির এবারের ওয়াশিংটন সফরে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওভাল অফিসের বৈঠকটি বাগযুদ্ধে পরিণত হয়, যার একদিকে ছিলেন মি. জেলেনস্কি আর অন্যদিকে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেডি ভ্যান্স।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের আশা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ইতিবাচক আলোচনা করে হোয়াইট হাউজ ছাড়বেন। এর মধ্যে খনিজ চুক্তিতে সই করবেন যা তার দেশের ভবিষ্যতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অংশীদারিত্ব দেবে এবং তিনি তার দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের জন্য আরও বেশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তাকে চাপ দেয়ার পর বিশ্ব গণমাধ্যমের সামনেই নজিরবিহীন এক পরিস্থিতিতে পড়লেন জেলেনস্কি।

ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পর শক্তিশালী সহযোগীর চাপ সত্ত্বেও পিছিয়ে গেলেন মি. জেলেনস্কি। ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলো যে বৈঠকে তিনি ‘অসম্মানজনক’ আচরণ করেছেন।

এই ঘটনার পর ট্রাম্প ও তার যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আগেই তাকে হোয়াইট হাউজ ছাড়তে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত খনিজ চুক্তিও আর হলো না। “যখন শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন ফিরে আসবেন,” ট্রাম্প লিখেছেন তার সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথে। জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র ও ওভাল অফিসকে “অপমান করেছেন” বলেও লিখেছেন ট্রাম্প।

জেলেনস্কিও এই ঘটনা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান সেখানে। পরে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার তিনি বলেন, প্রকাশ্যে যে বাদানুবাদ হলো সেটা ঠিক ছিল না, তবে ট্রাম্প ও তার সম্পর্কের পুনরুদ্ধার সম্ভব। “কারণ এই সম্পর্ক শুধু দুই জন প্রেসিডেন্টের মধ্যকার সম্পর্কের চেয়েও বেশিকিছু। আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ও আছে এখানে।”

যুদ্ধের শুরুর চেয়ে অবস্থা এখন ভিন্ন

যুদ্ধের শুরুর চেয়ে অবস্থা এখন ভিন্ন। হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র ক্যারোলাইন লিয়াভিট বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য অর্থ ব্যয় করতে করতে আমেরিকার মানুষ এখন ক্লান্ত।

“তিনি (জেলনস্কি) যুদ্ধের বাস্তবতা স্বীকার করতে অস্বীকার করেছন,” হোয়াইট হাউজের বাইরে সাংবাদিকদের বলছিলেন লিয়াভিট।

“বছরের পর বছর ধরে চলছে। তার দেশের মানুষ মরছে এবং যারা এতে অর্থ দিচ্ছে সেই আমেরিকার মানুষ অর্থ দিতে দিতে ক্লান্ত।”

তিনি বলেন, ২০২২ সালে যুদ্ধ যখন শুরু হয়েছিলো তার থেকে অনেকটাই ভিন্ন পরিস্থিতিতে আছেন জেলেনস্কি।

“তার হাতে কোনো কার্ড (বিকল্প) নেই। এগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে আছে,” বলছিলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আগের প্রশাসনের চেয়ে ট্রাম্পের অগ্রাধিকার ভিন্ন এবং তিনি যুদ্ধের অবসান চান।

‘জেলেনস্কির ক্ষমা চাওয়া উচিত’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন ইউক্রেনের নেতার ক্ষমা চাওয়া উচিত।

“তার এগুলোর মধ্যে এসে দ্বন্দ্বে জড়ানোর দরকার নেই। আপনি যখন আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলতে শুরু করবেন—এবং প্রেসিডেন্ট হলেন মধ্যস্থতাকারী, তিনি সারাজীবন এটা করেছেন,” বলেছেন তিনি।

রুবিও বলেন, “আপনারা বুঝতে পারছেন যে জেলেনস্কি হয়তো শান্তি চুক্তি চান না। তিনি বলেছেন তিনি চান, কিন্তু সম্ভবত তিনি চান না।”

ইউক্রেনীয় ডেলিগেশন চুপচাপ

ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের ডেলিগেশন একেবারেই চুপচাপ।

একটি অনুষ্ঠানে ভলোদিমির জেলেনস্কির যোগ দেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূ্তে সেটি বাতিল করা হয়েছে। যদিও খাবার পর্যন্ত সেখানে সার্ভ করা হয়েছিলো।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এখনও চেষ্টা করেছেন যা ঘটেছে তা নিয়ে কাজ করতে।

দিনটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছে।

ইউক্রেনের টিকে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের গুরুত্ব প্রমাণিত। জেলেনস্কি নিজেও তা ফক্স নিউজকে বলেছেন।

আজ শনিবারই তিনি লন্ডনের পথে রয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সাথে দেখা করার জন্য।

কিন্তু কিয়েভকে কঠিনভাবে ভাবতে হবে যে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র- যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কী করে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হবে।

তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেন পূর্ণশক্তিতে হামলা শুরু করে। ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি দুই লাখ রাশিয়ান সেনা ইউক্রেনে প্রবেশ করে।

কয়েকদিনের মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করে ফেলবেন বলে ওই সময় দাবি করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ন্যাটো সম্পসারণ ঠেকাতে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেও তখন দাবি করেন।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে লাখ লাখ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছেন। রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই পক্ষেরই হাজারও সেনা নিহত বা আহত হয়েছেন বলেও ধারণা করা হয়।

তবে আরও আগে, ২০১৪ সালে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী ইউক্রেনীয় অঞ্চল ক্রিমিয়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থি প্রেসিডেন্টের পতনের পর এই ঘটনা ঘটে।

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং ইউক্রেনকে সামরিক ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। বিবিসি ও সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *