অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। ১৩ জানুয়ারি, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফ দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে দু’টি জাহাজ। ‘এমভি পারিজাত’ ও ‘এমভি রাজহংস’ নামের এ জাহাজ দু’টিতে যাত্রী ছিলো ৬১০ জন।
নাফ নদীতে নাব্যতা সংকট এর কারণ দেখিয়ে চলতি পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছিল প্রশাসন। পাশাপাশি মিয়ানমারের সাথে সংঘর্ষের কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিলো। এ কারণে টেকনাফ থেকে কোনো জাহাজ এতদিন সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চলাচল করতে পারেনি।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ জানান, “চলতি পর্যটন মৌসুমে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। আজ (১৩ জানুয়ারি, শুক্রবার) সকাল সাড়ে দুটি জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। আগামী শনিবার থেকে অন্যান্য জাহাজগুলো নিয়মিত চলাচল করবে।”
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ান জানান, “সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবেশের কিছু শর্তসাপেক্ষে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরে অন্যান্য জাহাজগুলো সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চলাচল করতে পারবে।”
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, ‘পর্যটন মৌসুমের আর মাত্র দুই মাস সময় বাকি আছে। এই দুই মাসে আমরা পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণের আনন্দ দিতে চাই। টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে অনেক শিক্ষার্থী ভ্রমণ করে। আবার অনেক অসচ্ছল লোকজনও সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে চায়। জাহাজ মালিকদের আমরা অনুরোধ করবো যারা অক্ষম তাদের টিকিটমূল্য বিবেচনা করতে। সর্বোপরি আমরা আশা রাখছি, পর্যটকরা নিরাপদে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবে।”
সেন্টমার্টিন হোটেল-রিসোর্ট মালিক আব্দুল মালেক বলেন, চিরতরে এই নৌ-পথ বন্ধ করে রাখার কৌশলে নেমেছে একটি সিন্ডিকেটগ্রুপ। যার ফলে প্রায় ৪ মাস ধরে নাব্যতা সংকট দেখিয়ে জিম্মি করে রেখেছিলো এই নৌ-পথ। যুগযুগ ধরে যে নাফ নদী আর বঙ্গোপসাগর দিয়ে জাহাজ চলতো, ঠিক সেই পথ দিয়েই আজ (১৩ জানুয়ারি, শুক্রবার) আবারও জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। ভিন্ন কোনো সমুদ্র পথ কিংবা নাফ নদী দিয়ে জাহাজ চলছে না। এই নৌ-পথে রাস্তা একটাই। আমরা গত চারটা মাস ধরে চিৎকার করে করে বলে আসছি, এই পথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বড়-বড় জাহাজ প্রতিনিয়ত চলছে। আমাদের পর্যটকবাহী জাহাজও চলতে পারবে। কে শুনে কার কথা? কর্তাদের কানে যা পৌঁছাতে ৪ মাস সময় লেগেছে। মামলা গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত। বিজয় হয়েছে তোফায়েলের (তোফায়েল ভাই)। স্বস্তি ফিরেছে ৩ লক্ষ্য অসহায় কর্মজীবী মানুষের। আজ কোথায় গেলো আপনাদের নাব্যতা সংকট? একদম ক্লিয়ার কথা- এটা নাব্যতা সংকট নয়! কর্তাবাবুদের টাকার সংকট ছিলো মাত্র।
এর আগে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় দ্বীপবাসী ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতি। এমনকি টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ দ্রুত চালু না হলে গতবছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনের সকল আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, দোকানপাটসহ সকল যানচলাচল বন্ধ থাকবে বলেও তারা এসময় ঘোষণা দেন।
বক্তারা বলেন, দ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। বছরে মাত্র ৪ মাস পর্যটন ব্যবসা করে যে আয় হয় সেটি দিয়ে বাকি সময় অতিবাহিত করতে হয় তাদের। এখন নাব্যতা সংকটের অজুহাতে টেকনাফ রুট থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ করায় পর্যটক সীমিত হয়ে গেছে দ্বীপে। ফলে আয় রোজগার কমে গেছে এখানকার মানুষের। এই অবস্থা চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে দ্বীপে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে বলে দাবী তাদের।
এসময় দ্বীপের স্থানীয় জনগণকে বিভিন্ন ব্যানারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ব্যানারে লেখা ছিলো “আমাদের মুখে আহার দিন আমাদেরকে বাঁচতে দিন”। এসময় অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সিন্ডিকেট করে সেন্টমার্টিনের পর্যটন শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে। যা দ্বীপবাসী কিছুতেই হতে দেবেনা।