মার্কিন সামরিক বাহিনী দেশটির আকাশে কয়েক দিন ধরে উড়তে থাকা সন্দেহজনক চীনা গোয়েন্দা বেলুনটি ভূপাতিত করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শনিবার বলেন, ‘আমরা সফলভাবে একে ভূপাতিত করেছি। আমাদের যেসব লোক কাজটি করেছে, তাদের প্রশংসা করতে চাই আমি।’
মার্কিন যুদ্ধবিমান বেলুনটি গুলি করে ভূপাতিত করে। এর আগে অপ্রকাশিত ‘জাতীয় নিরাপত্তার চেষ্টা’র কথা উল্লেখ করে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলের আশপাশে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় মার্কিন সরকার।
এক কর্মকর্তা জানান, একটি এফ-২২ যুদ্ধবিমান এআইএম-৯এক্স সাইডউইন্ডার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বেলুনটিকে আঘাত করে। এটি মার্কিন উপকূল থেকে ছয় নটিক্যাল মাইল দূরে পতিত হয়।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, আটলান্টিক মহাসাগরে মার্কিন পানিসীমার মধ্যে বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের কার্যক্রম চলছে। টেলিভিশন ফুটেজে দেখা যায়, বেলুনটি পানির দিকে নেমে আসার সময় ছোট একটি বিস্ফোরণ ঘটে।
মার্কিন প্রতিরকষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন প্রথম গুলি করে ভূপাতিত করার কথা ঘোষণা করেন।
বেলুনটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সর্বশেষ উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।
আরেকটি চীনা বেলুনের সন্ধান মিলেছে ল্যাতিন আমেরিকার আকাশে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানিয়েছে, ল্যাতিন আমেরিকার ওপর দিয়ে আরেকটি চীনা নজরদারি বেলুন উড়ে যাচ্ছে।
পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি এয়ার ফোর্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ল্যাতিন আমেরিকার ওপর দিয়ে একটি বেলুনের উড়ে যাবার খবর পাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন অনুমান করছি যে এটি আরেকটি চীনা নজরদারি বেলুন।’
এর আগে, শুক্রবার পেন্টাগনে সংবাদদাতাদের রাইডার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে যাওয়া বেলুনটি নজরদারির জন্য উড়ানো হয়েছে। আর এটা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। যদিও চীন বলতে চাইছে যে এই বেলুনটি উড়ানো হয়েছে আবহাওয়াবিষয়ক গবেষণার জন্য।
তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান। তবে এ কথা জানিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জাানেন যে এটা একটা নজরদারি বেলুন। তারা চীনা কর্মকর্তাদের ‘একাধিক স্তরে’ তাদের অসন্তুষ্টির কথাও জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বুধবার প্রথম বেলুনটি দেখতে পান উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মন্টানা রাজ্যের ওপর। সেখানে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিমান ঘাঁটির মধ্যে একটির অবস্থান। বেলুনটিকে অনুসরণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিমান পরিচালনা করায়, বুধবার মন্টানার বিলিংস বিমানবন্দরে কিছুক্ষণের জন্য বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শনিবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি ভাষা ব্যবহার করে বলেছে যে এটি ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরের একটি ঘটনা। চীনা পরাষ্ট্র মন্ত্রক, এই বলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিক ও গণমাধ্যমের সমালোচনা করেছে যে তারা চীনকে হেয় করতে ঘটনার সুযোগ নিচ্ছে।
এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘চীন সবসময় আন্তর্জাতিক আইন কঠোরভাবে মেনে চলে এবং সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র শুক্রবার নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভাসতে থাকা বেলুনটি আসলে চীনের। ঐ মুখপাত্র বলেন, এটি একটি বেসামরিক আকাশযান যা মূলত আবহাওয়া গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়। আর বেলুনটি ‘তার পরিকল্পিত গতিপথ থেকে সরে গিয়েছিল।’
মুখপাত্র আরো উল্লেখ করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় অনিচ্ছাকৃত প্রবেশের ঘটনায় চীন দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং তারা এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।
বেলুনটি চীনের বলে নিশ্চিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন যাত্রার কয়েক ঘন্টা আগে তার চীন সফর স্থগিত করেন।
ব্লিংকেন জানিয়েছেন, চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই-কে শুক্রবার এক ফোনালাপে তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় নজরদারি বেলুনের উপস্থিতি/যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ব্লিংকেন আরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখবে এবং পরিস্থিতি অনুকূল হলে তিনি বেইজিং সফর করবেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার বলেছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ব্লিংকেনের কোনো সফরের ঘোষণা দেয়নি। তবে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা তাদের নিজস্ব বিষয় এবং আমরা এটিকে সম্মান করি।’
সূত্র : আল জাজিরা ও ভয়েস অব আমেরিকা