জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশিষ্ট ৯ ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠানকে ২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
২৪ মার্চ, বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঞ্চে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক। স্বাধীনতা পদক প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
স্বাধীনতার পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দীন আহমেদ এবং আব্দুল জলিলের প্রতি বিরল সম্মান প্রদর্শন করে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে নেমে তাদের কাছে গিয়ে সম্মানজনক এ পদক তুলে দেন।নিজের হাতে গুণীজনদের পুরস্কার তুলে দিতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বহুদিন পরে মুক্তি পেলাম তো। আসলে করোনাভাইরাসের সময় তো এক রকম বন্দিখানায় ছিলাম। আজকে আমার ইচ্ছে ছিল এখানে এসে নিজের হাতে… স্বাধীনতা পুরস্কার এটাতো একবার দিতে পারিনি। কিন্তু বার বার তো এভাবে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারি না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি মনে করি যে এটা আমার জন্য অনেক সম্মানের, অন্তত পুরস্কারটা হাতে তুলে দিতে পারছি। তাই বহুদিন পরে এই অফিসে আসার সুযোগ পেলাম। আর এতদিন তো সেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনেই কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ করছিলাম। ’
স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
নিরবে-নিভৃতে যারা দেশ ও সমাজের জন্য অবদান রেখে যাচ্ছেন তাদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘দেশের অনেক জায়গায় অনেক মানুষ পড়ে আছেন যারা মানুষের সেবা করে নিজেদের উদ্যোগে। সেই ধরনের মানুষগুলোকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদেরকেও পুরস্কৃত করতে হবে।’
‘যারা মানুষের কল্যাণে অবদান রেখে যাচ্ছেন, দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন। হয়তো তারা কখনো প্রচারে আসেন না। তারা দৃষ্টি-সীমার বাইরে থাকেন। তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদেরকে পুরস্কৃত করা উচিত।’
এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন- স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম (মরণোত্তর), আব্দুল জলিল, সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস (মরণোত্তর) ও সিরাজুল হক (মরণোত্তর)।
চিকিৎসাবিদ্যায় বিশেষ অবদানের জন্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম এবং স্থাপত্য ক্ষেত্রে মরহুম স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেনকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং মুজিববর্ষে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের পাচ্ছে এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কার।
এর আগে ১৫ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ১০ ব্যক্তি এবং ১টি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করে। পরবর্তীতে সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মনোনীত মরহুম মো. আমির হামজার বিষয়ে বিতর্কিত তথ্য বেরিয়ে আসলে তার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরে মুজিববর্ষে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের নাম স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।