শুরু হয়ে গেছে হিজরি নতুন বছর। শুরু হয়েছে ১৪৪৪ হিজরি সাল। প্রতিটি মুসলমানের জন্য হিজরি সন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ হিজরি সনের সঙ্গে হজ, জাকাত ও রোজাসহ বহু বিধান জড়িত।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘লোকেরা আপনার কাছে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন, এটা মানুষ এবং হজের জন্য সময়-নির্দেশক। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৯)।
হিজরি সন শুরু হওয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্ষেপে আজকের এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হলো।
এক. পবিত্র কোরআনে হিজরি বর্ষের কথা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা পবিত্র কোরআনে হিজরি বর্ষের কথা উল্লেখ করেছেন। হিজরি সন মূলত চান্দ্র বর্ষ। কেবল হিজরি বর্ষ পৃথিবীতে বছর গণনায় চাঁদনির্ভর একমাত্র পঞ্জিকা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে নিশ্চয়ই মাসগুলোর সংখ্যা হলো ১২। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)
দুই. নতুন বছরের শুরুতে শুভেচ্ছা জানানো
নতুন বছরে শুভেচ্ছা জানানো মুসলিমরীতি। কারণ একে অপরের শুভাকাঙ্ক্ষী হওয়া ইসলামের নির্দেশ। ইসলামে কোনো ধরনের অশুভ চিন্তা ও কুলক্ষণের চর্চা নেই; বরং শুভ-কল্যাণ ও মঙ্গলের ধারণা রয়েছে। এক হাদিসে আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “ইসলামে সংক্রামক ব্যাধি আর কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই। তবে ‘ফাল’ (শুভ লক্ষণ) আমাকে আনন্দিত করে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ফাল’ কী? তিনি বলেন, ‘উত্তম বাক্য’।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৭৬)
বস্তুত শুভকামনা ও কল্যাণের চিন্তা পবিত্র কোরআনের শিক্ষা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমাদের অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তার চেয়ে উত্তম অভিবাদন করো অথবা তারই অনুরূপ করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৬)এ জন্য নবীজি (সাঃ) কারো অভিবাদনের জবাবে তিনি একটু বাড়িয়ে শুভকামনা জানাতেন। আর এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা বিপুল সওয়াব দেবেন বলেও সাহাবায়ে কেরামকে জানিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তিনিই সূর্যকে দীপ্তিময় ও চাঁদকে আলোকময় করেছেন এবং তার জন্য কক্ষপথ নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ০৫)
তিন. যেভাবে হিজরি সনের প্রচলন শুরু হয়
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রাঃ)-এর সময়কাল। তখন বসরার গভর্নর ছিলেন আবু মুসা আশআরি (রাঃ)। তিনি একবার খলিফার কাছে পত্রে লিখে বলেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আমাদের কাছে বহু পত্র আসে। পত্রগুলোতে তারিখ লেখা থাকে শাবান। কিন্তু তা কি চলতি বছরের, নাকি আগের কোনো বছরের- আমরা বুঝতে পারি না।’ তার চিঠি পেয়ে খলিফা উমর (রাঃ) দ্রুত জটিলতা দূরের উদ্যোগ নেন। (ইবনুল আসির, আল-কামিল ফিত-তারিখ : ১/৮)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে উমর (রাঃ) পরামর্শ সভার আহ্বান করেন। সভায় সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তিনি নবীজি (সাঃ)-এর ইন্তেকালের বছর থেকে; তালহা (রাঃ) নবুয়তের বছর থেকে; আর আলী (রাঃ) হিজরতের বছর থেকে বর্ষ গণনার প্রস্তাব দেন। পরে সবাই আলী (রাঃ)-এর প্রস্তাবকে যুক্তিযুক্ত মনে করে ঐকমত্য পোষণ করেন।’ (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি : ৭/২৬৮; আল-আইনি, উমদাতুল কারি : ১৭/৬৬)
বর্ষ গণনার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হিজরতের ১৭তম বছরের ১০ জুমাদাল উলা মাসে। মাস হিসেবে সমকালীন আরবে মহররম ছিল প্রথম মাস। পরিস্থিতি বিবেচনায় ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৪/৫১৭)
মুসলমানদের জীবন পরিচালনা হোক হিজরি সনের আলোকে। তাই আরবি নববর্ষ জীবনকে ঢেলে সাজানোর নতুন আত্মপ্রত্যয়ের কারণ হোক। হিজরি নববর্ষ ও যেকোনো নতুন বছরের শুরুতে আমরা পরস্পর শুভেচ্ছা জানিয়ে কল্যাণ কামনা করতে পারি। পাশাপাশি প্রিয় নবীজির (সাঃ) জীবনাদর্শ ও উত্তম চরিত্র-মাধুর্য ধারণের জন্য বছরজুড়ে সিরাত-সাহিত্য অধ্যয়নে সচেষ্ট হতে পারি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমাদের এই তাওফিক দান করুন।
আরও পড়ুন
কোথাও আগুন লাগলে সতর্কতার জন্য যা করবেন, যা করবেন না
আগুনে পুড়লে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ও আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার