রেনেসাঁ সাহিত্য মজলিস ইউকের উদ্যোগে যুক্তরাজ্যে প্রবাসী কবি আলিফ উদ্দিন ও বাংলাদেশের বরেণ্য কবি মুকুল চৌধুরীর স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল ইস্ট লন্ডনের উডেহাম সেন্টারে সোমবার (১৯ মে ২০২৫) বিকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের সভাপতি সাংবাদিক ও কমিউনিটির নেতা কে এম আবুতাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক কবি শিহাবুজ্জামান কামালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় কমিউনিটির বিশিষ্টজন অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবী নেছারুল হক চৌধুরী।
কবি আলিফ উদ্দিন ও কবি মুকুল চৌধুরীর সাহিত্য নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক সময় ও মানব টিভি সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী। দুই কবির জীবন ও কর্ম সম্পর্কে স্মৃতিচারনমূলক বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট আইনজীবি ও সাবেক কাউন্সিলার ব্যারিষ্টার নাজির আহমদ, লেখক ও রাজনীতিক অধ্যাপক আব্দুল কাদের সালেহ, কবি ও সাংবাদিক আবু সুফিয়ান চৌধুরী, লেখক ও সলিসিটর মোহাম্মদ ইয়াওর উদ্দিন, সাংবাদিক রহমত আলী, লেখক আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, সাংবাদিক ও সংগঠক বদরুজ্জামান বাবুল, মাওলানা আবুল হাসনাত চৌধুরী, শেখ ফারুক আহমদ, হাজী ফারুক মিয়া, সাংবাদিক মাহবুবুল করিম শুয়েদ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, মুকুল চৌধুরী বাংলা কবিতায় নিজস্ব দৃষ্টি ও সৃষ্টির নতুন বাঁক নির্মাণ করেছেন। মত এবং পথ নিয়ে ভিন্নতা আনতে চেষ্টা করেছেন সজ্ঞানে, সচেতনভাবে। কবিতার কারিগর হিসেবে সেই আশির দশক থেকে সৌরভে গৌরবে এগিয়ে চলেছেন। তার কবিতায় উঠে এসেছে- আকাশ, নক্ষত্র, নদী, বৃষ্টি, পাহাড়, জ্যোৎস্না, গাছগাছালি, জীবন-জীবিকা, আশা ও ভালোবাসা। তার পংক্তিমালায় জ্যোতির্ময় কাব্যসত্তা বহমান। কবিতার আবেগঘন সবুজ জমিনে এক সরব পরিব্রাজক তিনি। চার দশকের অধিক বিরামহীন হেঁটে হেঁটে মাড়িয়েছেন কবিতার নতুন নতুন দেশ ও প্রদেশ। মুকুল চৌধুরীর সৃজনবিশ্বে দৃশ্যমান ভাবের সমুদ্র। আধ্যাত্ম-মরম, মানুষের মানচিত্রে মুক্তির যুদ্ধ, প্রিয়তমার গান্ধর্ব ঘ্রাণ, উম্মার সোয়াশো কোটি হাহাকার। অস্পষ্ট বন্দর থেকে মাটির ঘটনা কালের সবুজপত্রে মোড়া তার সকল সৃজনকর্মের ঋদ্ধ মলাটের মুখচ্ছবিগুলোও স্বকীয়-স্বতন্ত্র। নিরীক্ষা প্রয়াসের সার্থক পাপড়ি। আলাদা স্বরের গায়ক পাপিয়া। স্বতন্তরের স্বননে কোনটি শিকড়সন্ধানী। কোনটি আবেগমন্ত্রিত-ইতিহাস ঐতিহ্যে আত্মত্রাণের পথপদর্শক। কোনটি গার্হস্থ্য প্রেমের রাহসিক প্রস্রবন। কোনটি আধ্যাত্ম-হৃদয়ের অতল আশ্চর্য অনুভবে গরীয়ান। এ অনুভব বন্ধুর আধ্যাত্মিক পর্যটনে রূপান্তরিত। এ রূপান্তর শিল্পাত্মার যৌথতায় শব্দভূগোলেও অনন্য।
মূল্যবোধ সম্পন্ন লেখক কবি আলিফ উদ্দিন সম্পর্কে বলা হয়, তিনি ছিলেন সিলেটে এবং বিলেতের অত্যন্ত প্রিয় মুখ। সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের নির্বাহী সদস্য, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেটের আজীবন সদস্য এবং রেনেসাঁ সাহিত্য মজলিস ইউকের সাবেক ট্রেজারার ও সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কবিতার পাশাপাশি প্রবন্ধ-নিবন্ধে মনের কথা সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন। লেখকের ভাবনা ও জ্ঞিাসার পরিধি ছিল বিচিত্র ও ব্যাপক। সমসাময়িক বিষয়, প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষা, এমনকি হতাশাও মূর্ত হয়ে উঠেছে বইটিতে। পরকালের শান্তির অন্বেষায় তিনি লিখেছেন, যা ছুঁয়েছে পাঠক হৃদয়।
সভায় বক্তারা আরো বলেন, কবি আলিফ উদ্দিন ও কবি মুকুল চৌধুরী কাব্য জগতে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। কবিতায় সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন। উভয়ে তাওহীদবাদী লেখক ছিলেন। মননশীল লেখার মাধ্যমে তারা স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন। স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে সকলে মিলে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত শেষে মরহুমদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন মাওলানা আব্দুল কাদের সালেহ।