বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে ওসমান সজীবের মিস্ট্রি থ্রিলার উপন্যাস ‘মুহাম্মদ’। লেখক ওসমান সজীব বলেন, দীর্ঘদিনের স্বপ্নের কাজ তার এই ‘মুহাম্মদ’।
বইটি ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। এই বিষয়ে পাঠ অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন কথাসাহিত্যিক আখতার মাহমুদ। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশে বইটা বের হলে ‘মুহাম্মদ-এন্ডিং এক্সপ্লেইনড’ শিরোনামে অনেক আলাপ বেরিয়ে যেত। সৌভাগ্যবশত বইটা প্রকাশের আগেই পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। বই হয়ে বেরুনোর পরও নেড়েচেড়ে দেখেছি বারবার। ওসমানকে কিছুটা চঞ্চল প্রকৃতির মনে হওয়ায়, ‘মুহাম্মদ’ উপন্যাসিকাটাকেও ধরে নিয়েছিলাম হালকা উপভোগ্য পেজটার্নার কিছু একটা। যেহেতু শুরু থেকেই বইটা পাঠকের মনোযোগ ধরে ফেলে। আর আকারে ছোট হওয়ায় কোনো বিরতি ছাড়াই একবসাতেই পড়ে শেষ করা যায়।
তিনি আরও বলেন, শুরুতে হালকা জনপ্রিয় ঘরানার বই মনে হলেও পাঠ শেষে বুঝতে পারি ‘মুহাম্মদ’ মাত্র সাতাত্তর পৃষ্ঠায় বিশ্বের অতীত থেকে বর্তমান চিত্র পর্যন্ত তুলে আনে। তুলে আনে সভ্যতার দ্বন্দ্ব এবং আদর্শের জন্য মহাকাব্যিক লড়াইয়ের চিত্র। ‘মুহাম্মদ’ পাঠে আমার চোখে প্রাচীন থেকে বর্তমানের ইতিহাস এক ঝলকে পার হয়ে যায় যেন।
বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা রয়েছে- “আপনার বাবা রাতে ছদ্মবেশে বের হত। চারদিকে কেবল শুনতে পেত মুহাম্মদের জয়গান। যারা প্রশংসা করত তাদের হত্যা করত। ফরমান রাজি করেছিল মুহাম্মদের নাম কেউ উচ্চারণ করলেই মৃত্যুদণ্ড। ফিসফাস করে মুহাম্মদের জয়গান কেউ করছে এই সন্দেহও তাদের হত্যা করেছে। বীভৎস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। মানুষ মুহাম্মদের নাম উচ্চারণ করতে ভুলে গেল। তখন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসতে লাগল। পুরো রাজ্যে ছেয়ে গেল সেই পাখি দিয়ে। সেই পাখির নাম কেউ বলতে পারল না। আগে কেউ দেখেওনি! কোথা থেকে এই পাখিরা এলো? কেউ কেউ বলল এই পাখি স্বর্গীয় পাখি। মুহাম্মদের নাম উচ্চারণ করায় সম্রাট নিরীহ মানুষদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তার প্রতিশোধ নিতে এই স্বর্গই পাখিরা এসেছে। মানুষ যখন মুহাম্মদের প্রশংসা করেছিল তখন আপনার বাবার পাগল হওয়া বাকি ছিল। স্বর্গীয় পাখি এসে পাগল বানিয়ে দিয়ে গেছে। সেই স্বর্গীয় পাখিরা কেবল একটা শব্দই উচ্চারণ করত। উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে কেবল ডাকত মুহাম্মদ… মুহাম্মদ…। আপনার বাবা পাখি হত্যা করার নির্দেশ দিল। রাজ ফরমান জারি করল। পাখি হত্যা করতে পারলে রাজকোষাগার থেকে মোটা অংকের অর্থ পাবে। সবাই পাখি নিধনে লেগে গেল। অবস্থা হলো আরো খারাপ। এত এত পাখি আসতে লাগল যে প্রজারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল পাখি হত্যা করতে করতে। রাজকোষাগার শূন্য হওয়ার অবস্থা হয়। পাখিদের মুহাম্মদ ডাকাটা বন্ধ করতে পারল না। আপনার বাবা আ*ত্মা*হত্যা করল। আ*ত্ম*হত্যার জন্য মুহাম্মদই দায়ী। মুহাম্মদকে হত্যা করবেন না? বাবার হত্যার প্রতিশোধ নেবেন না?”
বইটিকে বলা হচ্ছে বিশ্ব রাজনৈতিক। তবে বইটি একক রাজনৈতিক কোনো বই নয়। বইটিকে অনায়াসে মোটিভেশনালও বলা যায়। কীভাবে বিপদ ও কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করতে হয়, তার একটা শিক্ষা বইটি দেয়।
বইটিকে ওয়ার ক্যাটাগরিতেও অনেকাংশে ফেলা যায়। কারণ, বইটির প্রথম থেকে শেষ অবধি যুদ্ধ, যুদ্ধের প্রস্তুতি, যুদ্ধের ফলে ঠিক কী হতে পারে, তাও বিস্তারিত বলা হয়েছে।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও বইটিকে দেখা যায়। ঈমানি শক্তি বৃদ্ধিতে বইটা যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি হাজারো কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্বাস রাখার শিক্ষা এতে রয়েছে। বইটিকে নির্ধিদ্বায় ফ্যান্টাসি ঘরানায়ও ফেলা যায়। কিছু কিছু এলিমেন্ট এমন এসেছে, যা কেবল ফ্যান্টাসিতেই সম্ভব।
বইটি পড়তে গিয়ে বারবার এ প্রশ্নটা মাথায় আসবে, গল্পটার সময়কালটা কোন সময়ের? সত্যি বলতে যা মনে হয়েছে, প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় অবধি।
আবার অন্যভাবে বলা যায়, পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিন পর্যন্ত সময়কালকে সেট করা যায়। নির্দিষ্ট কোনো ফ্রেমে সময়কালকে বন্দি করা হয়নি।
বইটি অনেক গভীর তাৎপর্য নিয়ে লেখা। অনেকগুলো লেয়ার মিলিয়ে একটা মাল্টি-লেয়ার বানানো হয়েছে। বইটা আমাকে অনেক্ষণ ভাবিয়েছে। মনে হয়েছে আবার পড়লে আরও কোনো নতুন অ্যাঙ্গেলে ভাবব।
ন্যায়-অন্যায়, ধর্ম-জাত-বর্ণ, শাসক শ্রেণির শোষনের অন্তর্নিহিত কারণ এসব লেখক এই ছোট্ট উপন্যাসটিতে যথেষ্ট মুনশিয়ানার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাবুক পাঠকরা নির্ধিদ্বায় পড়তে পারেন বইটি।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় চিলেকোঠা পাবলিকেশনের ৫৭৭ স্টলে। প্রচ্ছদ করেছেন পথিক রায়হান। বইটির মূদ্রিত মূল্য ২৯০ টাকা।