এখনো বহু লোক আশ্রয়শিবিরে, জলে-স্থলে ত্রাণের বহর

সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী সিলেট থেকে

সিলেটের আকাশে রোদের ঝলকানি থাকলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ লেগেই আছে। ভারতের বরাক নদের মোহনায় শনিবার দুপুরে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ সময় কানাইঘাটে সুরমা নদী বিপত্সীমার ৬২ সেন্টিমিটার, অমলসীদে কুশিয়ারা ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেট নগরী ও সুনামগঞ্জে শহরের কাছে সুরমা নদী বিপত্সীমার নিচে নেমেছে। তবে কুশিয়ারাতীরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও মৌলভীবাজারের অনেক স্থানে মানুষের অবস্থা খুব খারাপ।

বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব। পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিভিন্ন জায়গায় বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে পানি বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। সিলেট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ১১ লাখ ১০ হাজার ট্যাবলেট, ৫ হাজার ৫০০ পানির জেরিক্যান বিতরণ, পাঁচটি ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে শুক্রবার পর্যন্ত ২৫ হাজার গ্যালন পানি দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন জানান, এসব প্ল্যান্ট ঘণ্টায় ৬০০-৭০০ গ্যালন পানি শোধন করতে সক্ষম। তিনি জানান, এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

২২ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি
এদিকে কোনো কোনো স্থানে বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামছে। তবে বাড়িঘরের অবস্থা খারাপ থাকায় অনেকেই আশ্রয়শিবির থেকে ঘরে ফিরতে পারছেন না। যারা ফিরেছেন, কারো চাল নেই, কারো ঘরের বেড়া, কারো ঘর ভেঙে পড়ার উপক্রম। অনেকের ভিটা শূন্য। এখনো ২ লাখ ৭৮ হাজার লোক আশ্রয়শিবিরে। সিলেট বিভাগীয় অফিস সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগে চলতি বন্যায় ২২ হাজার ১৫০টি ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিরূপণ হচ্ছে।

জলে-স্থলে ত্রাণের বহর
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে এখন ত্রাণবাহী ট্রাক-পিকআপের বহর। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, এসএমপি, জেলা পুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণে ভরা ছুটে চলা স্পিডবোট ও নৌকার বহর অন্যরকম অনুভূতি জাগায়। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বানভাসিদের সহায়তায় সর্বমহলের প্রচেষ্টা সত্যিই এক অনুপম দৃষ্টান্ত। সিলেট শহরের বড় বড় কমিউনিটি সেন্টারে দিন-রাত শুকনা খাবার বা রান্না করা খাবার প্যাকেট হয়ে হাওরের দিকে যাচ্ছে। তার পরও অনেক স্থানে ত্রাণের স্বল্পতার খবর আসছে। কারণ ঘরে অনেকের এক বেলারও খাবার নেই।এদিকে বিভাগীয় প্রশাসন ত্রাণসহায়তায় শৃঙ্খলা দিতে কমিটি গঠন করেছে, যাতে সবাই ত্রাণ পায়। বিআইডব্লিউটিএ নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যার্তদের সাহায্য ও সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকের দিকনির্দেশনায় বন্যা শুরুর পর থেকে নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

৩০ জন বাবুর্চি প্রতিদিন রান্না করছেন ১ হাজার জনের খাবার

সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি জুবিলি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে আরেক দৃশ্য দেখা যায় শনিবার সকালে। সারিবদ্ধ চুলায় বড় বড় ৩০টি হাঁড়িতে চলছে রান্না। পাঁচ জন বাবুর্চি ১০ জন কর্মী নিয়ে রান্না করে চলেছেন বন্যার্তদের খাবার। রান্না শেষ হলেই এক পরিবারের পাঁচজন খেতে পারেন এমন পরিমাণ খিচুড়ি ভরা হচ্ছে প্লাস্টিকের বাক্সে। প্রতিটি বাক্সে দেওয়া হচ্ছে পাঁচটি সেদ্ধ ডিম। এরপর ১ হাজার বাক্স বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেনাবাহিনীর কাছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেগুলো নিয়ে ছুটে যান প্রত্যন্ত গ্রামের বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে।

ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত সুনামগঞ্জের মানুষকে খাওয়ানোর জন্যই এই আয়োজন। এই আয়োজন করা হচ্ছে দুটি ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায়। তারা জানান, টানা এক সপ্তাহ জেলার বন্যার্ত ৪০ হাজার মানুষকে এক বেলা এভাবেই দেওয়া হবে এই খাবার। সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের খাবার বিতরণের এই উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রামের আলহাজ মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও আলহাজ হোসনে আরা মনজুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। এই ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম।

কার্যক্রমের সমন্বয়ে থাকা মোহাম্মদ পারভেজ জানান, তারা সুনামগঞ্জে এসেছেন বৃহস্পতিবার। শুক্রবার থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৪০ হাজার মানুষকে এক বেলা খাবার প্রস্ত্ততের প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী, লোকবলসহ সবকিছু চট্টগ্রাম থেকেই নিয়ে এসেছেন। শুক্রবার ১ হাজার মানুষের এক বেলার খাবারের বাক্স তুলে দেওয়া হয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে। সেগুলো সদর উপজেলার কাঠইর ও মোহনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বিতরণ করা হয়। শনিবার খাবার বিতরণের জন্য একই উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ও মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে নেওয়া হয়। গত ১৬ জুন থেকে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলে সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষ চরম খাদ্যসংকটে আছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দুর্গত মানুষকে নানাভাবে সহায়তা দিয়ে চলেছে।

আরও পড়ুন
কোথাও আগুন লাগলে সতর্কতার জন্য যা করবেন, যা করবেন না
আগুনে পুড়লে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ও আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *