ইসলামী আন্দোলনের জন্য জেল ও ফাঁসি হতেই পারে : এটিএম আজহারুল ইসলাম

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ফ্যাসিবাদের চরম জুলুমের শিকার মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস পেয়ে বুধবার (২৮ মে ২০২৫) সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। শাহবাগ মোড়ে তাকে জনতার মঞ্চে সংবর্ধনা দেওয়ার পর তিনি মগবাজারস্থ জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে এটিএম আজহারুল ইসলামকে নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, মহানগরীর নেতাকর্মী, শহীদ পরিবারের সদস্যগণ, আইনজীবীগণ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় সদ্য কারামুক্ত সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, সম্মানিত আমীরে জামায়াত, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, উপস্থিত ভাই ও বন্ধুগণ, সাংবাদিক বন্ধুগণ আসসালামু আলাইকুম। আশাকরি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ শারীরিক ও দৈহিকভাবে ভালো আছি। আমি বয়সে বৃদ্ধ হলেও চিন্তা-চেতনায় এখনো শারীরিক ও মানসিকভাবে যুবক।
আমাকে আল্লাহ কেন বাঁচিয়ে রেখেছেন ৫ আগস্ট সকাল পর্যন্ত বুঝতে পারিনি। ধারণা করিনি আপনাদের সাথে দেখা হবে। আমি আন্তরিকভাবেই কামনা করতাম ২০১৯ সালে আদালত যখন আমাকে ফাঁসির হুকুম দিল, তখন একদম মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলাম আল্লাহর কাছে হাজির হওয়ার জন্য। এটাই জান্নাতে যাওয়ার সহজ পথ। এইজন্য সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে রেখেছিলাম। সবচেয়ে কষ্ট হলো পুরাতন আমলের ফাঁসির সেলের পাশেই প্রায় ১০ মাস ছিলাম। নিজামী ভাইকে ওখানে কিছুদিন রাখা হয়েছিল। উনি খুব কষ্ট করেছেন। তারপর আমি আসলাম সেখানে।

জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, এরপর আলহামদুলিল্লাহ ৫ আগস্টে স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি হল। ৫ আগস্টের সকাল পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল যেহেতু আওয়ামী লীগ ১০/২০ হাজার লোক হত্যা করে হলেও তারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবে। এদের সেই সুযোগও আছে। যাই হোক আমার কাছে রাজনীতির অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ৫ আগস্ট সকাল ৯টা/১০টার দিকে টিএসসির দিকে (তখন আইন-শৃঙ্খলা কিছুটা ঢিলা থাকায় মেমরি কার্ড প্রবেশ করত, ফলে মাঝে মাঝে খবর পেতাম) দেখলাম ছোট্ট একটি বাচ্চা ৫-৬ বছর হবে পাশে দাঁড়ানো পুলিশকে ঘুসি মারছে। আমি তখন বললাম এ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পরের ঘটনা আপনারা জানেন। আল-হামদুলিল্লাহ আজকে আমি মুক্ত হলাম।

তিনি আরও বলেন, আমি শুধু সংক্ষেপে বলতে চাই, কী জন্য আমি গ্রেফতার হলাম। আমি তো চুরি, ডাকাতি বা জমি দখল কোনো কিছুই করিনি। তবে অভিযোগটা হলো আমি ইসলামী আন্দোলন করি। যখন নিজামী ও মুজাহিদ ভাইসহ সবাই গ্রেফতার হলো এরপর প্রায় দেড় বছর আমি ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ছিলাম। তখনো আমি ধারণা করিনি যে, এ সরকার আমাকে গ্রেফতার করবে। তবে আমি ধারণা করছিলাম যে, আমি গ্রেফতার হবো। গ্রেফতার তো হয়েই গেলাম। গ্রেফতার হওয়ার পরে ১২/১৪টা মামলা দেয়ার পরে যখন আমি জামিনে বের হয়ে আসি, তখন আটকাতে পারল না। এরপরে শুনি আমাকে এই মামলা দিয়েছে। তখন আমার আস্থা ছিল এ মামলায় আমাকে কিছু করতে পারবে না। যখন আইন সংশোধন হলো তখন বুঝলাম যে এটা তো সাজানো নাটক? তখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকলাম। আল্লাহ ভরসা ভাগ্যে যা আছে সেটাই হবে ইনশাআল্লাহ। এরপর তো ফাঁসি থেকে মুক্ত হয়ে আপনাদের কাছে চলে আসছি।

এটিএম আজহার আরও বলেন, আমার অপরাধই ছিল ইসলামী আন্দোলন করা। আমি শুধু এটুকু বলব যে, ইসলামী আন্দোলন করার কারণেই। এটা যখন আমি প্রথম ইসলামী আন্দোলনে যোগদান করি, আমি মনে মনে ধারণা করি ইসলামী আন্দোলনের জন্য কষ্ট, জুলুম, নির্যাতন, জেল ও ফাঁসি হতেই পারে। এটা নিয়ে চিন্তা করি নাই। আমার যারা কর্মী, সহকর্মী ছিল তারাও জানেন। আমি কোনো সময় দুশ্চিন্তা করতাম না। ইসলামী আন্দোলনের করার কারণে শহীদ নিজামী ভাই, মুজাহিদ ভাই, কামারুজ্জামান ভাই, কাদের মোল্লা ভাই, মীর কাসেম আলী ভাই তাদের সরাসরি হত্যা করা হয়েছে। আর সিনিয়র কয়েকজন নেতা চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন। তাদের অপরাধটা কী ছিল। নিজামী ভাই ও মুজাহিদ ভাই মন্ত্রী ছিলেন; তাদের এক টাকার দুর্নীতির প্রমাণ কেউ দেখাতে পারে নাই। শুধু ইসলামী আন্দোলনের জন্যই তাদের হত্যা করা হয়েছে।

জামায়াত নেতা বলেন, ইসলাম-ই মুক্তির একমাত্র পথ। আমার ক্ষুদ্র বয়সে যতটুকু পড়াশোনা করেছি আমার কাছে মনে হয়েছে, দুনিয়াটা ইসলামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আপনি খেয়াল করবেন গ্রামের চেয়ারম্যানরা তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। দুর্বলদের কিন্তু ঘায়েল করে না। যার সমান শক্তি আছে তাকেই ঘায়েল করে। আজকে ইসলামের বিরুদ্ধে সকল শক্তি এক হয়েছে। তবে ইসলাম সত্যের উপর আছে; এই শক্তিকে দমাতে পারবে না। অতীতে তারা বহু ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। তাই আমি বলি, ইসলাম খরস্রোতা নদীর মত, খরস্রোতা নদী প্রবলভাবে চলতেই থাকে। যতই বাঁধ দেন না কেন, পানি জমা হয়ে বাঁধ ভেঙে তা প্রবল বেগে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেই। যেটা গত ৫ আগস্টে প্রমাণিত হলো। জামায়াতকে বেআইনি ঘোষণা করে তারা জামায়াতকে কী ঠেকাতে পেরেছে? না, পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আমাকে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াত অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে গ্রেফতার করা হলো। ঐ সময় যে জনশক্তি ছিল, এখন অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ এই ১৫ বছরে আপনারা প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেননি। এই জীবনে আমাকে অনেকে অনেক কথা বলবে কিন্তু সেই কথার সাথে আমি যদি আপস করি, তাহলে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমরা অবশ্যই ক্ষমতায় যেতে চাই, তবে যেনতেন প্রকারে না। আমরা ইসলামকে সাথে নিয়েই ক্ষমতায় যেতে চাই। ইসলামকে রেখে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। ইসলাম ছাড়া আমি হয়তো ক্ষমতায় যেতে পারবো, মন্ত্রী হতে পারবো কিন্তু ইসলাম তো ক্ষমতায় যাবে না। আমরা যে ইসলামী আন্দোলনের কাজ করতেছি তা তখনই স্বার্থক হবে, যখন ইসলামকে নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে পারবো। তখন তাদের শহীদ হওয়া স্বার্থক হবে যখন ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া যাবে। যারা দুনিয়ার জীবনের চেয়ে আখিরাতের জীবনকে প্রাধান্য দেয়, তারাই সত্যিকার ইসলামী আন্দোলন করার যোগ্য, তারাই আসল মুজাহিদ, তারাই আসল জিহাদের যোগ্য। আর তারাই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম।

দুনিয়াকে আল্লাহ ত্যাগ করতে বলেন নাই উল্লেখ করে এটিএম আজহার বলেন, দুনিয়া ভোগ করব তবে সেটা যেন ইসলামী আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত না করে। ইসলামের কাজ যখন আসবে, তখন দুনিয়ার কাজ ছেড়ে দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হব। এটার নামই হলো ইসলামী আন্দোলন। আমরা যখন এই জাতীয় লোক তৈরি করতে পারব, ইসলামের অগ্রযাত্রা তত বেশি অগ্রসর হবে ইনশাআল্লাহ। এটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ বলেন, ‘যারা দুনিয়ার জন্য কাজ করে আমি তাদের দুনিয়া দেই আর যারা আখিরাতের জন্য কাজ করে আমি তাদের আখিরাত দেই।’ আপনি সিদ্ধান্ত নেন কোনটার জন্য কাজ করবেন। মহান রব ভারসাম্য রক্ষার জন্য অন্য এক জায়গায় আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন, ‘হে রব! দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের কল্যাণ দান করুন।’ অকারণে দুনিয়ার পিছনে ছুটবেন না, আবার দুনিয়া ছেড়ে আখিরাতের পিছনেও ছুটবেন না। উভয়কে ব্যালেন্স করেই চলতে হবে। যাতে করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য এটা অগ্রগণ্য হতে পারে। আল্লাহ তাওফীক দিলে আপনাদের সামনে আরও কথা বলব। যারা আমাদের কাছ থেকে চলে গেছেন আল্লাহ তাদের শাহাদাত কবুল করুন, তাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন, জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। ৩৬ জুলাই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। যারা চিকিৎসারত আছেন তাদেরকে আল্লাহ স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরে আনুন। আমরা যেন সবাই মিলে এই দেশটাকে ইসলামের জন্য এগিয়ে নিতে পারি। অবশ্যই অবশ্যই আগামীর শতাব্দী হবে ইসলামের শতাব্দী।

এসময় আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের প্রিয় ভাইয়ের নসিহা শুনেছি। তার কথা প্রাণ ভরে আরও শুনবো। আমরা আমাদের ভাইয়ের জন্য দোয়া করি। শারীরিক ও মানসিকভাবে অবশ্যই তাঁর উপরে প্রচণ্ড চাপ গেছে; এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য ধারণ করার যে তাওফীক তাঁকে দান করেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করি। আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য ধারণ করার জাযাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তাঁকে দান করুন। আপনারা জানেন, জেলে থাকাকালীন অবস্থায় তাঁর পরিবার অনেকটাই ছিন্নভিন্ন। ছোট্ট মেয়েটা ছাড়া এখন দেশে আর কেউ নাই। একমাত্র ছেলে দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন অনেকের মত। এর মাঝে তিনি জেলে থাকা অবস্থায় ভাবীও (আজহার সাহেবের স্ত্রী) দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া যে, অন্তত তিনি তার স্ত্রীর জানাজায় হাজির হয়ে নিজে বিদায় দিতে পেরেছেন। আল্লাহ তায়ালা এইটুকু সুযোগ তাঁকে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ জীবনটা তাদের দু’জনের পরস্পরের উপর যে হক ছিলো; সঙ্গতকারণে আল্লাহর জন্য সে হক আদায় করা সম্ভব হয়নি। আল্লাহ যেন তাদেরকে আদালতে আখেরাতে একসাথে হাসর নসিব করেন। জান্নাতে আল্লাহ যেন আবার তাদেরকে একসাথে চমৎকারভাবে একত্রিত করে দেন, পরিবারের অন্যান্য সদস্যবর্গসহ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমরা অনেক জায়গায় যেতাম অনেকে জিজ্ঞাসা করতেন আজহার ভাইয়ের কী অবস্থা। উনার মুক্তি কবে হবে? কোনো ষড়যন্ত্র হবে কিনা? অনেক প্রশ্ন ছিল। আমরা বলতাম যে, সবকিছু আল্লাহ তায়ালার ফয়সালার উপর ছেড়ে দিয়েছি। তবে একটা জিনিস আমরা বিশ্বাস করি যে সমস্ত নেতৃবৃন্দ এক এক করে চলে গেলেন; কাউকে ফাঁসিতে পাঠিয়ে খুন করা হলো, কাউকে জেলে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হলো। আল্লাহ যেহেতু তার এই বান্দাকে জীবিত রেখেছেন, তাহলে নিশ্চয়ই এই বান্দার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সত্যকে পৃথিবীবাসীর সামনে পরিষ্কার করবেন। আল্লাহ তায়ালার লাখো শুকরিয়া যে আল্লাহ সেই কাজটিই করেছেন। এর মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়েছে যে, আমাদের কলিজার টুকরা সমস্ত নেতৃবৃন্দকে ঠান্ডা মাথায় বিশেষ উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যটা আর কিছু নয়। সেটা ছিল তারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিলেন। এটাই তাদের অপরাধ। আল্লাহ তায়ালাকে পরম পরাক্রমশালী এবং প্রশংসিত হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। সমস্ত পরাক্রমের মালিকও তিনি, সঙ্গত কারণেই প্রশংসা পাওয়ার মালিকও তিনি।

আমীরে জামায়াত বলেন, সম্মানিত নেতৃবৃন্দ চোখের সামনে তারা বুঝতে পারছিলেন যে, তিলে তিলে তাদেরকে ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এতটাই তাওয়াক্কুলের শক্তি, এতটাই সবর এখতিয়ার করার তাওফিক দান করেছিলেন যে, তারা কেউ এক সেকেন্ডের জন্যও মোটেই বিচলিত হননি। যারা দুনিয়া থেকে আগে চলে গেছেন আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার জান্নাতে তারা আছেন। কিন্তু ফাঁসির এই দণ্ড মাথার উপরে নিয়ে তিলে তিলে অপেক্ষা করা, বেঁচে থাকা; আল্লাহ তায়ালা যদি তাদের মনকে শক্ত না রাখেন, ঈমানের মজবুতি যদি দান না করেন, বান্দা যদি সবকিছু একেবারে আল্লাহর উপর ছেড়ে না দেন; তাহলে কোন মানুষের পক্ষে এটা হজম করা সম্ভব নয়।

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কোনো এক বিশিষ্ট লোক বলেছিলেন, যাদের রায়ের আদেশ প্রথম শোনানো হয়, তখন তারা অস্বাভাবিক আচরণ করেন। অভিশাপ দেন, কেউ গালি-গালাজ করেন। বাস্তবায়নের সময় তারা অনেকেই স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এজন্য আগে থেকে তাদেরকে মেডিকেল চেক আপ-এর মধ্যে সার্বক্ষণিক রাখা হয়। তবে শুধু জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ ব্যতিক্রম ছিলেন। তাদেরকে রায় শুনানোর পর থেকে রায় বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত এক মিনিটের জন্যও তাদের চেহারায় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। আল্লাহু আকবার। পরিবর্তন হয়নি এই কারণে যে, তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে ঐ আওয়াজ শুনে শুনে দুনিয়া থেকে যেতে চান। ‘হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার রবের দিকে ফিরে আস সন্তুষ্ট ও সন্তোষ ভাজন হয়ে।’ আমরা বিশ্বাস করি এই আওয়াজ শুনে শুনে তারা বিদায় নিয়েছেন। আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন এবং আমরা ধারণা করছি আল্লাহর প্রতিশ্রুত সেই জান্নাতে হয়ত তারা জায়গা পেয়ে গেছেন। আজকে এতটুকু পর্যন্ত আমরা শেষ করতে চাই। আরও কিছু প্রোগ্রাম আছে। তাঁর (জনাব আজহার) শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম প্রয়োজন। কয়টা দিন তাঁর সাক্ষাতের এবং তাঁর কাছে কিছু জানা শোনা থেকে সবর করলে ভাল হয়। এরপর তিনি আমরা আশা করি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আমাদের দেখা হবে, মোলাকাত হবে এবং আমরা একসাথে কাজ করব ইনশাআল্লাহ।

আমীরে জামায়াত বলেন, ইতোমধ্যেই ঢাকায় যে এলাকায় তিনি দীর্ঘ দিন সংগঠন পরিচালনা করেছেন, কাজ করেছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন আমাদের এই প্রিয় ভাইটিকে নিয়ে বড় পরিসরে প্রোগ্রাম করার মাধ্যমে ঢাকাবাসীর কাছে দোয়া চাইব। তিনি তাঁর জন্মস্থানেও যাবেন ইনশাআল্লাহ, যে সময় তিনি কমফোর্ট ফিল করবেন। সারা দেশের ন্যায় তাঁর নিজ এলাকাতেও সংগঠন বড় প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করবে ইনশাআল্লাহ। আমরা ইচ্ছা করেই তাঁর নিজ এলাকাকে প্রোগ্রাম করা থেকে বাদ রেখেছিলাম। আমরা পূর্বেই বলেছিলাম আল্লাহ চাহে তো আমাদের প্রিয় ভাইসহ রংপুরবাসীকে নিয়ে বড় পরিসরে প্রোগ্রাম করব। আল্লাহ উনাকে সাথে নিয়ে সেই প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করার তাওফীক দান করেন। আপনারা দোয়া করবেন, আমাদের এই আশাকে আল্লাহ তার বারাকাহ দিয়ে রহমত দিয়ে সাহায্য করেন। আমরা যেন আমাদের ভাইকে নিয়ে আল্লাহর দাওয়াত উত্তম পন্থায় মানুষকে সত্যের দিকে, কল্যাণের দিকে, দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির দিকে প্রাণভরে ডাকতে পারি। আল্লাহ যেন আমাদের সেই তাওফীক দান করেন। আপনারা শাহাবাগ থেকে আবার এখানে অনেক কষ্ট করে এসেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উত্তম জাযাহ দান করুন এবং আগামীর হক্ক কায়ের লড়াইয়ের জন্য আল্লাহ আমাদের বুক শক্ত করে দিন, প্রশস্ত করে দিন। আমাদের পা মজবুত করে দিন। আমাদের ভাইসহ সবাইকে হায়াতে তায়্যেবা দান করুন।

সবশেষে বিকালে জননেতা আজহারুল ইসলাম মগবাজার কাজী অফিস লেনে সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের কবর, আজমপুর কবরস্থানে সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও তাঁর স্ত্রীর কবর জিয়ারত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *