জীবনের আছে একটি লক্ষ্য, উদ্দেশ্য। এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে যুক্ত জীবনের মূল্যবোধ, অনুধ্যান, আদর্শ। এসবের মর্মমূলে থাকে উপলব্ধি, বিশ্বাস। কিন্তু এগুলোকে আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করব? তার স্বরূপ, প্রকৃতি, ভালো-মন্দ ইত্যাদি কিভাবে খোলাসা করব? এই রপ্তকরণের যে পথসন্ধান, তা দার্শনিক মামলা। মানে আমরা দর্শনের দুনিয়ায় ঢুকে পড়েছি, যেখানে আমরা খুঁজছি আকার বা মর্ম, ভালো বা মন্দ, উচিত বা অনুচিত, তত্ত¡ ও বিশ্লেষণ।
এই যে আমাদের অনুসন্ধান, এর প্রবল হাতিয়ার হলো শিক্ষা। যেখানে জ্ঞান নেই, শিক্ষা নেই, সেখানে ভালো-মন্দ বিচারের শৃঙ্খলা নেই। নেই কোনো তত্ত¡তালাশ। তার মানে, জ্ঞান, শিক্ষা ও তত্ত¡জ্ঞান পরস্পরনির্ভর। শিক্ষা বাদ দিয়ে দর্শন তার পথপরিক্রমায় সমর্থ নয়। শিক্ষা আমাদের মধ্যে নিহিত সম্ভাবনা গঠন করবে, বিকশিত করবে, বাস্তবায়নের দিশা নির্দেশ করবে। সে মূল্যবোধ প্রস্তাব করবে এবং তার উপর তদন্ত চালাবে। সে কল্যাণের অনুসন্ধান করবে এবং অকল্যাণকে মোকাবেলার আলো সরবরাহ করবে, দক্ষতা জোগাবে।
দর্শনও একই কাজ করতে চায়। কাজটির জন্য তার দরকার উপাদান। শিক্ষা সেখানে হাতিয়ারের ভ‚মিকা পালন করে। মূল্যবোধ গঠনে চাই শিক্ষা, মূল্যবোধের বাস্তবায়নেও চাই শিক্ষা। শিক্ষা প্রতিভাকে বিকশিত করে, বাস্তবে রূপায়িত করে। মন্দকে পরাজিত করা এবং উত্তমতাকে নিশ্চিত করার পথ নির্মাণ শিক্ষা ছাড়া অসম্ভব। ফলে দর্শনের গতিমান ও ব্যবহারিক হাজিরি শিক্ষার মধ্যে যে অর্থে সক্রিয়, তা অন্যত্র অনুপস্থিত। দার্শনিকতা তাই ব্যাপক অর্থে শিক্ষকতা।
জীবন ও জগতের অস্তিত্বগত ব্যাখ্যা এবং মৌলিক প্রশ্নগুলোর সুরাহার সন্ধানে দর্শনমগ্নতা মূলত মানবজাতিকে অনবরত সাবালকত্ব দেয়ার চেষ্টা। যা দিন শেষে একটি আদর্শকে নির্দেশ করে এবং জীবনের জন্য মহত্তে¡র রূপরেখা প্রস্তাব করে। যা ব্যক্তিকে প্রভাবিত ও প্ররোচিত করে এমন জীবন ও সমাজের জন্য, যা কল্যাণ ও আদর্শকে অঙ্গীকার করবে। এর মানে পরিষ্কার। শিক্ষা হাজির করে লক্ষ্য ও প্রত্যয়। একসেট মূল্যবোধ তার সাথে থাকে যুক্ত। এর উপর দাঁড়ায় দক্ষতার স্থাপত্য। যার চূড়ায় আছে পরম ও সর্বজনীন কল্যাণ। তার গোটা কাঠামোতে বিস্তারিত থাকে এরই উপায়-উপকরণ, নির্দেশনা ও সামর্থ্যরে সরবরাহ।
শিক্ষার দর্শন আসলে ফলিত দর্শনের একটি শাখা, যা তদন্ত করে শিক্ষার প্রকৃতি নিয়ে, লক্ষ্য নিয়ে এবং এর সাথে যুক্ত সমস্যাবলি নিয়ে। সে পরীক্ষা করে শিক্ষাতত্তে¡র ধারণা এবং অনুমানসমূহ। একটি আন্তঃবিষয়ক ক্ষেত্র হিসেবে শিক্ষাদর্শন প্রেরণা গ্রহণ করে যা দর্শনের অন্তরে এবং বাইরে থাকা বিচিত্র শাখা থেকে। যার মধ্যে আছে নীতিশাস্ত্র, রাজনৈতিক দর্শন, মনোবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান। সমস্ত কিছুর সমবায়ে মানবজীবনকে পাঠ করে প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে দার্শনিক নীতিপ্রয়োগ করতে চায় শিক্ষাদর্শন। এর অর্থ হলোÑ শিক্ষা দর্শন বর্জিত হতে পারে না। আবার দর্শন শিক্ষাকে বাদ দিয়ে চলতে পারে না। কিন্তু দর্শনের চরিত্র ধ্যানের, শিক্ষার চরিত্র কর্মের।
উভয়ের সমন্বিত সক্রিয়তার জন্য প্রয়োজন দর্শন ও শিক্ষার সুসামঞ্জস্যপূর্ণ যৌক্তিক হাত ধরাধরি। যা শিক্ষার প্রশ্নে সব রকম দার্শনিক তত্ত¡ ও শৃঙ্খলার জোগান দেবে এবং যাবতীয় সমস্যায় দার্শনিক পদ্ধতির প্রয়োগ নিশ্চিত করবে। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে নিশ্চিত, তৈরি হবে উপযুক্ত পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা। দর্শন কাজ করে শিক্ষার সাথে যুক্ত সব ডালপালায়। শিক্ষায় যে শিখন পদ্ধতি ও কৌশল আবিষ্কার করা হয়, তা ঘটে দার্শনিক পদ্ধতি প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। শিক্ষাকাঠামোর সমস্ত কিছুর ভিত্তি গঠিত হবে তত্ত¡ীয় ঐক্যসূত্রে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে কাজের অনেকগুলো ধাপ। যার মধ্যে আছে :
১. অনুধ্যানধর্মী কর্মধারা : ভাবনার স্বাধীন সামর্থ্যরে বিকাশ এবং চিন্তা করতে শেখানো শিক্ষার অন্যতম প্রতিশ্রæতি। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞানের বিষয়াবলি তাকে দেয় তথ্য ও তত্ত¡জিজ্ঞাসা। এগুলোকে আরো বিন্যস্ত করে শিক্ষার রূপরেখা খাড়া করা হয়। এসব রূপরেখা সব জায়গায় একই রকম হয় না। এতে স্থান-কাল ও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। একে বিচেনায় রেখে সময়ের অগ্রসর জ্ঞানীয় বাস্তবতা এবং জাতীয় সামর্থ্যরে সর্বোন্নত বিকাশ ইত্যাদি অভিপ্রায়কে বাস্তবে আকার দানের জন্য শিক্ষা দর্শনের চিন্তন ও অনুধ্যানমূলক কর্মধারা সম্পন্ন করতে হয়।
২. সমন্বয়ধর্মী কর্মধারা : চিন্তনের কাজগুলো তো একই খাতে বইবে না। বহুমুখী ও বহুত্বপ্রবণ হবেই। কিন্তু তাদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। আধ্যাত্মিকতা ও জাগতিকতা এবং বিভিন্নমুখী সংস্কৃতির ইতিবাচক বিকাশ ও মানুষ হিসেবে ব্যক্তি-সমাজ এবং তাদের জীবনের উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটাতে হবে সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে।
৩. দিকনির্দেশক কর্মধারা : এই যে শিক্ষাকেন্দ্রিক চিন্তার বহুধর্মিতা, তা জীবন যাপনের নানামাত্রিক অভিব্যক্তির ফসল। চিন্তা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের ফসল। এর সাথে যুক্ত থাকে বহুমুখী সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চাহিদা। থাকে পারস্পরিক সঙ্ঘাত-দ্ব›দ্ব। বিচিত্রমুখী কেন্দ্রিকতা সমাজকে করে বিচ্ছিন্ন। ফলে এখানে দিক-নির্দেশক সূত্র ও এক কেন্দ্রিকতা দরকার। যা বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত ও বিবদমান প্রবণতাগুলো ঐক্যসূত্র ও শৃঙ্খলায় আনবে।
৪. বিচারিক ও বিশ্লেষণধর্মী কর্মধারা : শিক্ষা ভাষাকে অবলম্বন করে। শব্দ ও পরিভাষা মধ্যস্থতা করে। এর মধ্যে থাকে নানা মাত্রা ও অবধারণ। এসবের বিষয়গত ও আকারগত যথার্থতার বিচার ও নিরীক্ষা জরুরি। কাজটি করে শিক্ষাদর্শন। সে যাচাই করে এমন সব জ্ঞানীয় সিদ্ধান্ত যা শিক্ষার সাথে যুক্ত। এগুলোর যথার্থতা পরখের পাশাপাশি জ্ঞানীয় এই আলাপ যে ভাষায় সম্পন্ন হচ্ছে, তার তদন্ত করে। তার অর্থের অস্পষ্টতা দূর করে। আরেকটি জটিল কাজ করতে হয় তাকে। সেটি হলো জ্ঞানীয় বিবৃতিগুলো নিজের পক্ষে যেসব তথ্য হাজির করে এবং বিপক্ষের মত খণ্ডনে যেসব বয়ানকে বিন্যস্ত করে, তার উপর তদন্তকর্ম। সে সবের মর্মবস্তু যাচাই ও মূল্যমান বিচারের আওতায় আনা তার কাজের অন্যতম দিক।
৫. আদর্শিক রূপায়ণের কর্মধারা : দিন শেষে শিক্ষার লক্ষ্য হলো কল্যাণ, মানবকল্যাণ। শিক্ষা নিশ্চিত করবে মূল্যবোধ। যার থাকবে ধর্মীয়, নৈতিক, সামাজিক ও নান্দনিক অঙ্গীকার। মূল্যবোধ আচরণীয় বাস্তবতায় প্রতিফলিত হবে এবং করণীয়-বর্জনীয়র ধারা ও মাত্রাকে প্রতিষ্ঠা দেবে। মানুষের কী করা উচিত বা কোন আচরণ নৈতিকভাবে সঠিক সে সম্পর্কে আদর্শিক প্রশ্নগুলোর মীমাংসা থাকবে শিক্ষাব্যবস্থায়।
৬. মূল্যায়ন ও নির্দেশনাধর্মী কর্মধারা : শিক্ষাদর্শন মূল্য ও আদর্শগুলোর মুখোমুখি হয়। এমন সব চিন্তাভাবনা, আশা-আকাক্সক্ষা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সে মূল্যায়ন করে, যা মানুষের সামগ্রিক আচার-ব্যবহার ও কার্যাবলিকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের আচরণ পরিচালনাকারী নীতি ও মানদণ্ডগুলো কিভাবে সর্বজনের কল্যাণকে প্রতিফলিত করবে, কিভাবে উত্তমতাকে সর্বসাধারণের জন্য ফলবান করা যায়, তার সম্যক রূপ ও প্রস্তাব মূল্যায়ন করবে শিক্ষাদর্শন।
৭. সংগঠন ও নেতৃত্ব নির্মাণের কর্মধারা : কেবল চিন্তা-অনুধ্যান ও দার্শনিক মামলায় শিক্ষাদর্শন আটকে থাকবে না; বরং সে এমন প্রক্রিয়াকেও সংগঠিত করবে, যা শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এর সাথে যুক্ত সবাইকে উৎসাহিত হতে সাহায্য করে। সে সংগঠিত করে নেতৃত্ব। এর মধ্য দিয়ে মানুষের সক্ষমতা ও দক্ষতার সীমা প্রসারিত হয়, তার ব্যক্তিত্ব গঠন হয়। যা সমস্যা সমাধানে একটি সামগ্রিক বা সংগঠনমূলক নেতৃত্বের জন্য ব্যক্তিত্ব তৈরি করে। জীবনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দিকগুলোকে সে গঠনমূলক প্রক্রিয়ায় পাঠ ও বিবেচনার মধ্য দিয়ে কাজ করবে। রাজনৈতিকতা ও সমবেত কর্মপ্রক্রিয়ার জন্য যে সহজাত নেতৃত্ব, তার দক্ষতাকে আকার ও বিকাশদান শিক্ষাদর্শনের অন্যতম অন্বেষা।
৮. এককের দৃষ্টিকে সমষ্টির দৃষ্টিতে উন্নীত করার কর্মধারা: ব্যক্তিকে সমষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন করার যে প্রবণতা, শিক্ষাদর্শন তার বিপরীতে অবস্থান নেবে। কারণ ব্যক্তির বিকাশ সমষ্টির মধ্যে। আত্মসর্বস্ব ব্যক্তিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ কখনো ব্যক্তিকে বিকাশ দেয় না। ফলে সমষ্টির সমুদ্রে ব্যক্তির জলকণা কল্লোলিত হবে। এই সমষ্টি আবার ক্ষুদ্র ও অসহিষ্ণু জাতীয়তাবাদ নয়; বরং সে বিশ্বজনীনতাকে অবলম্বন করবে। যেন ব্যক্তি বিশ্বকে নিজের মধ্যে আবিষ্কার করে। সে সব মাধ্যম ও প্রক্রিয়ায় যে জিনিসকে চাইবে তা হলোÑ যথার্থ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশ। ইসলাম যে শিক্ষাদর্শন হাজির করে, তারও লক্ষ্য একই। এই শিক্ষাদর্শনের সূচনাবিন্দু জীবন-জিজ্ঞাসার জবাবের মধ্য দিয়ে বিকশিত। আল কুরআনের প্রথম নাজিল হওয়া আয়াতগুচ্ছে আল্লাহ তায়ালার ঘোষণাÑ ‘পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি (সব কিছু) সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত দিয়ে। পড়ো এবং তোমার প্রতিপালক সর্বাপেক্ষা বেশি মহানুভব। যিনি কলম দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন, মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’
এর মানে পরিষ্কার। মানবজাতির উদ্দেশ্যে মহানবীর সমীপে আগত ওহির প্রথম নির্দেশ হলো ‘পড়’। এই যে পাঠ, অধ্যয়ন, আত্মআবিষ্কার, আত্মগঠনের পথের প্রস্তাব, সেই পথে সে যাত্রা করবে কার নির্দেশনায়? এ জন্য যে পাঠ, তা আসলে কী? কী পড়বে সে? কেন পড়বে? কার জন্য পড়বে? কিসের মাধ্যমে সে শিখবে? সূরা আলাকের প্রথম অবতরণ করা পাঁচ আয়াত এসব প্রশ্নের জবাব, যা আমাদের শিখিয়েছে আত্মিক ও জৈবিক চাহিদার সর্বোত্তম পরিচর্যার মাধ্যমে মানবতার সর্বোচ্চ উন্নয়ন সম্ভব। এরই মধ্য দিয়ে বিবদমান বিচিত্র দর্শন ও চিন্তার মূল্যমান যাচাই হবে, ঐক্য সংগঠিত হবে এবং তার দিকনির্দেশনার মূল সত্তা হলেন সৃষ্টিকর্তা। অতএব মানুষ পড়বে তার প্রভুর নামে, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। জীবনের সূচনা কোথা থেকে? মানুষের আগমন ও জীবনের আয়োজন কোন সূত্রে চলমান? এখানে তার উদ্দেশ্য ও কর্ম কী ও কেমন? তার জবাবি নির্দেশনা এখানে হাজির। অতএব আদর্শ, মূল্যবোধ ও জীবনাবেদনের একটি চরিত্রকে সে আলিঙ্গন করবে। তা আল্লাহর মহান প্রতিপালন নীতির সাথে যুক্ত।
সেই নীতির অধীনে মানুষ যেহেতু আল্লাহর খলিফা, তাই তার নেতৃত্ব ও সংগঠন সর্বজনীন কল্যাণ ও পরম প্রভুর অভিপ্রায়ের পবিত্রতাকে অবলম্বন করবে। সে পড়বে গোটা জীবন ও জগত। সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা আল্লাহর সৃষ্টিসমগ্র হলো অধ্যয়নের বিষয়। সেটি প্রাণের মধ্যে, প্রকৃতির মধ্যে বিস্তারিত।
মানুষ শিক্ষার মাধ্যমে নিখিলের সেই ঐক্যসূত্র ধারণ করবে, যা আল্লাহর একই সুন্নাত-ফিতরাত বা নীতি-প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হচ্ছে। সে এই প্রক্রিয়ায় নিখিলের সাথে একীভ‚ত হবে এবং সমস্ত পথ ধরে আল্লাহর আনুগত্য করবে। এরই আলোকে সে শিক্ষার দিকনির্দেশক, বিচারিক ও সাংগঠনিক কর্মধারাকে পরিচালনা করবে। সে বিশ্বঐক্যের বিধানসমূহ জানবে, যা তার আত্মা ও দেহ উভয়ের চাহিদা মেটাবে। যে দেহ আলাক থেকে সৃষ্ট।
শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত জিজ্ঞাসাগুলোও এখানে জবাব আকারে হাজির। কারণ কুরআন বলে দিচ্ছে শিখন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনার ধারা এবং ধরন। মানুষ শিখবে তার সমস্ত সত্তা দিয়ে, সব ইন্দ্রিয় এবং বাহ্যিক-অভ্যন্তরীণ উপাদান দিয়ে। তার অন্তর্গত সমস্ত সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে সে শিখবে। কিন্তু সেই শিক্ষার বিষয়বস্তু কী হবে? কুরআন বলছেÑ ‘মানুষ যা জানে না, তাই শিখবে। সমস্ত কিছু।’ সমস্ত অজ্ঞতার অন্ধকারকে সে জ্ঞানের আলো দিয়ে অতিক্রম করবে। সে শিখবে এমন সব কিছু, যা তার আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক জীবন পরিচালনার সব রকমের দক্ষতা সরবরাহ করবে। দেহ, মন এবং আত্মার সাথে যুক্ত সমস্ত প্রয়োজন সর্বোন্নত ও সর্বোত্তম প্রক্রিয়ায় পূরণের জন্য সে অনবরত জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয় ঘটাবে। ফলে ইল্ম (জ্ঞান) ও আমল (কর্ম) ইসলামের শিক্ষাদর্শনে সব সময় পাশাপাশি এবং পরস্পরের যৌথতা এখানে বাধ্যতামূলক। সামগ্রিক কল্যাণের সংগঠনে সে আপন দৃষ্টিকে সবার দৃষ্টিতে পরিণত করার জন্য সমস্ত মুনকার (ক্ষতিকর বিষয়) এর বিরুদ্ধে লড়বে, সমস্ত মারুফকে (কল্যাণী বিষয়) সর্বত্র প্রতিষ্ঠা দিতে শিক্ষাকে বানাবে প্রধান হাতিয়ার।
* মুসা আল হাফিজ কবি, গবেষক