আব্দুল হক হাবিব ছিলেন চ্যারিটি কর্মে আদর্শ ব্যক্তিত্ব

প্রবাসী বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

বিলেতে বাংলাদেশীদের মধ্যে গুটি কয় মানুষের হাত ধরে চ্যারিটি সংগঠন সফলতা লাভ করেছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আব্দুল হক হাবিব। চ্যারিটি সংস্থা ইকরা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন চূড়ান্ত উদ্যমে। বাংলাদেশীদের পরিচালনায় দাতব্য সংস্থাগুলোর মধ্যে ইকরা ইন্টারন্যাশনালকে তিনি শীর্ষে নিয়ে এসেছিলেন। তার নেতৃত্বে কমিউনিটির গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশে এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ইকরার কর্মকান্ড সমাদৃত ও প্রশংসিত হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থকে তিনি কখনো অধিক্য দেননি। চ্যারিটি অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে সেবাকর্ম পরিচালনায় ও দারিদ্র নিরসনে ‘যোগ্য হকদার’ মানুষের কল্যাণে চালিয়েছেন প্রাণান্ত প্রয়াস।

২০০০ সালে আমি লন্ডন আসার পর ইকরার কাজের প্রচার ও প্রসারে যখন সহায়তা করি তখন মনোয়ার হোসাইন বদরুদ্দো, আব্দুল হক হাবিব, বদরুজ্জামান বাবুল, জিলু মিয়া, ইসলাম উদ্দিন, পারভেজ কুরেশী, মিজান বক্স, তোফায়েল আহমদ প্রমুখ বেশ সক্রিয় ছিলেন। অবশ্য আরো অনেকে জড়িত ছিলেন, সবার নাম এই মূহুর্তে মনে পড়ছেনা।

মানবাধিকার সংগঠক মনোয়ার হোসাইন বদরুদ্দোজা আমাকে এতে যুক্ত করেছিলেন। লন্ডনে যে ক’জন বাংলাদেশি সত্যিকারের মানবসেবী ও মানবাধিকার কর্মি হিসেবে দেশে-বিদেশে কাজ করেছেন তার মাঝে মনোয়ার ছিলেন কিছুটা ব্যতিক্রমী মানুষ। বর্ণবাদ বিরোধী প্রায় সকল ইস্যুতে তিনি সোচ্চার ছিলেন। মুসলিম দুনিয়ার যে কোন সমস্যায় তিনি কাতরাতেন। একজন মানবাধিকার রক্ষী বা হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার হিসাবে তার কার্যক্রম বাংলাদেশ ও বিলেতের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকতা লাভ করেছিল। হঠাৎ তিনি চলে গেলেন মহান মাবুদের কাছে।

এরপর আব্দুল হক হাবিব মনোয়ার বদরুদ্দোজার সফল উত্তরাধিকারী হিসেবে সংগঠনের হাল ধরেছিলেন। আমৃত্যু সে দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে সিলেটের টেকনিক্যাল রোডস্থ ইক্বরা প্রতিবন্ধী শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অসচ্ছল শারিরীক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস-উন-নুর ইকরা প্রতিবন্ধী শিশু হাসপাতালের এমডি এবং আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা ইকরা ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আব্দুল হক হাবিব কর্মজীবনে সর্বত্র সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে জন্ম-মৃত্যু ও বিবাহ নিবন্ধক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ছিলেন। এক সময় বার্কিং এন্ড ডেগেনহাম কাউন্সিলে নেবারহুড কো-অর্ডিনেটর হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।

তারও আগে সিটি সাইড রিজেনারেশনে চাকরি কালে স্থানীয় মানুষের কল্যাণে বিশেষ অবদান রেখেছেন। গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে বার্কলেস ব্যাংকে কাজ করেছেন। তখন থেকে প্রশিক্ষণের দিকে আকৃষ্ট হন। ইএমইপি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে ক্যাটারিং ইন্ডাস্ট্রিতে বিপুল সংখ্যক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি ছিলেন লন্ডন ট্রেনিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। একজন জনপ্রিয় প্রশিক্ষক হিসেবে হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়েছেন, যাদের অনেকই এখন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

আব্দুল হক হাবিব শিক্ষা জীবনে লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করেছেন। মানব সম্পদ উন্নয়নে বিশেষ করে প্রতিষ্ঠান সমূহের গুণগত ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিস্তর পড়ালেখা করতেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনার এবং টেলিভিশন টক শোতে এ বিষয়ে কথা বলতেন। এনটিভি ইউরোপে একটি টকশো পরিচালনা করে তিনি বেশ খ্যাতি কুড়িয়েছেন।

বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের সাহবাজপুর গ্রাম নিবাসী লন্ডন প্রবাসী আব্দুল হক হাবিব ব্রিকলেন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম হাফেজ আব্দুল মান্নান রাহিমাহুল্লার পুত্র। তিনি শাহবাজপুর উইমেন এডুকেশন ট্রাস্ট, বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট, দশঘর ইউনিয়ন প্রগতি ট্রাস্ট-সহ বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।

শনিবার (২০ জুলাই ২০২৪) মহান মাবুদের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন আব্দুল হক হাবিব। লন্ডনের নিউহাম হসপিটালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রা-জিউ-ন। মহান মাবুদের কাছে তার আত্মার মাগফিরাত ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ বাব্বুল আলামীন তাকে জান্নাতের উচ্চস্তরে আসীন করুন। আমীন।

* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথা সাহিত্যিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *