বৃটেনে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশী হাজার হাজার মানুষকে পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এই পরিকল্পনার পিছনে অবশ্য একটি কারণ রয়েছে। আর তা হচ্ছে মানবপাচারের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া এবং সে সঙ্গে ঐ চ্যানেলে আশ্রয়প্রার্থীদের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া। অবশ্য রুয়ান্ডায় পাঠানো হলেও সেখান থেকেই নাকি তাদের আবেদন পর্যালোচনা করা হবে। এই নীতি কার্যকর হলে তা বরিস জনসনের রক্ষণশীল সরকারের অভিবাসন প্রক্রিয়া কঠোর করার মানসিকতাই প্রতিফলিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, যে অল্প কয়েকটি বড় দেশ অভিবাসন প্রত্যাশীদের পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়েই তাদের ফিরিয়ে দিতে আইনের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাজ্য তাদের অন্যতম। অভিবাসন কঠোর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার ছিল ব্রেক্সিটের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়া জনসনের; অভিবাসন প্রত্যাশীদের অন্য দেশে পাঠানোর এ নীতি তার ঐ অঙ্গীকারের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এ পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এমন নীতি নেওয়া হলে তা অমানবিক ও শরণার্থী বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর লঙ্ঘন হবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা অন্য দেশগুলোকেও শরণার্থীদের তৃতীয় কোনো দেশে ‘অফশোরিং’ করতে ?উত্সাহিত করবে।
বৃহস্পতিবারের ভাষণে জনসন বলেছেন, তার এ পরিকল্পনায় আলবেনিয়া, ইরাক ও সুদান থেকে দীর্ঘ যাত্রার পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীকে অন্যত্র রাখার ব্যবস্থা হবে। তিনি চলতি বছর জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে এই নীতি কার্যকর হতে পারে বলেও জানিয়েছেন। জনসন বলেন, ‘যুক্তরাজ্য একটি সমান্তরাল অবৈধ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে পারে না। আমাদের সহানুভূতি অসীম হতে পারে, কিন্তু মানুষকে সাহায্য করার সক্ষমতা অসীম নয়।’
জনসনের এই পরিকল্পনার আওতায় যারা রুয়ান্ডার তথাকথিত ‘জরুরি ট্রানজিট’ কেন্দ্রগুলোতে যাবে তাদেরকে যুক্তরাজ্য বাদে অন্য কোনো দেশে পুনর্বাসন চাওয়া, নিজের দেশে বা যে দেশে আশ্রিত ছিলেন সেখানে ফেরত পাঠানো কিংবা রুয়ান্ডায় থেকে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এর বদলে যুক্তরাজ্য রুয়ান্ডাকে প্রায় ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার দেবে; যা শিক্ষা, বৃত্তিমূলক ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও ভাষা শিক্ষাসহ নানা উদ্যোগে ব্যয় করা যাবে। তবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কি হবে না, তা নির্ভর করছে পার্লামেন্টের বিবেচনায় থাকা একটি আইন পাশের ওপর।
আইনটি পাশ হলে, বৈধ ভিসা ছাড়া কিংবা সরকারঘোষিত ‘অনিয়মিত পথে’ যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেওয়ার ক্ষেত্রে সীমিত আইনি পথ থাকলে, তা এখানে থাকতে চাওয়া অনেকের আবেদন করার পথই কার্যত রুদ্ধ করে দেবে। পার্লামেন্টে জনসনের দলের ভালো সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় আইনটি পাশ হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। তবে এই পদক্ষেপ আইনি বাধার মুখে পড়তে পারে; যে কারণে আইন পাশ হলেও ‘রাতারাতি তা কার্যকর হবে না’ বলেই অনুমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর ধারণা, কঠোর অভিবাসন নীতি নিলেও আইনি বাধার মুখে পড়ে তা যেন থমকে থাকে তার ব্যবস্থা করে বামধারার লোকজন সেটি বাস্তবায়ন করতে দেয়নি—এমন দোষ চাপানোর পরিকল্পনা করছেন জনসন। জনসন এমন একটি নীতি নিতে চান যা বাস্তবায়ন করার দরকার পড়বে না, কিন্তু রক্ষণশীল সমর্থকদের আকৃষ্ট করবে, বলছে তারা। এর আগেও কয়েকটি দেশ অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিরস্ত করতে প্রায় একই ধরনের কৌশল খাটানোর চেষ্টা করেছিল।