হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী, সিলেট থেকে :
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জানাযা সিলেট নগরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে রবিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মা-বাবার পাশে রায় নগরস্থ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
নামাজে জানাযায় মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জানাজা পরিচালনা করেন সিলেটের প্রবীণ মাওলানা মুহিবুল হক গাছবাড়ি। এ সময় মাদ্রাসা মাঠ ছিল লোকে লোকারণ্য।
জানাযার আগে মন্ত্রী, এমপিসহ মুহিতের সহকর্মীরা তার স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমার বড় ভাই, আমার নেতা। আমার কাজের প্রধান তদারককারী ছিলেন। আমি তার নেতৃত্বে কাজ করেছি।‘তিনি আদর্শ ব্যক্তি ছিলেন। সৎ ও নির্লোভ ছিলেন। সংস্কৃতি, সাহিত্য, ক্রীড়া সবক্ষেত্রেই তার বিচরণ ছিল। তিনি আমাদের প্রজন্মের আদর্শ।’
বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘মুহিত ভাইয়ের মৃত্যুতে আমরা অভিভাবক হারালাম। দেশের মানুষ একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ হারাল।’
সিলেট-৬ আসনের হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মুহিত ভাই। তিনি আমার দুই বছরের সিনিয়ার। আমরা একসঙ্গে এমসি কলেজে পড়তাম। তিনি একটি সফল জীবন যাপন করে গেছেন। জীবন নিয়ে তিনি তৃপ্ত ছিলেন।
মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি ও সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহিদ বলেন, ‘তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের আদর্শ। বাংলাদেশ তার এক রত্নকে হারাল।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘আবুল মাল মুহিত সিলেটের ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। তাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।’
হবিগঞ্জের এমপি আব্দুল মজিদ খান বলেন, ‘মুহিত ভাইয়ের মৃত্যু কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়, একজন কীর্তিমান মহাপুরুষের মহাপ্রয়াণ। তার আদর্শ আমরা অনুসরণ করব।
সব শেষে পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মুহিতের অনুজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে মোমেন বলেন, ‘কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে তাকে আপনারা ক্ষমা করে দেবেন। তার কোনো দেনা থাকলে আমি পরিশোধ করব।‘আমরা যেনো উনার মতো সততার সঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে জনগণের মঙ্গলে কাজ করতে পারি এই দোয়া করবেন।
আরও বক্তব্য রাখেন সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট-২ আসনের এমপি মুকাব্বির খান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ সহ অনেকে।
জানাজায় সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসকসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
জানাজার পর মুহিতের মরদেহ নগরের রায়নগরে পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার বাবা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ এবং মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।
এর আগে, শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে মুহিতের মরদেহ বহনকারী ফ্রিজার ভ্যান সিলেটের পথে রওয়ানা হয়ে রাতে নগরের হাফিজ কমপ্লেক্সে এসে পৌঁছায়। সেখানে মরদেহ গ্রহণ করেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
এদিকে, সাবেক অর্থমন্ত্রীর মরদেহ সিলেটে পৌঁছার আগে থেকেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা ধোপাদিঘীরপাড় হাফিজ কমপ্লেক্সে ভিড় করেন। এসময় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে বাসার আঙ্গিনা।
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যের নানা জটিলতা ও লিভার ক্যানসারে ভুগছিলেন। তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়। এরপর শুক্রবার রাতে হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। মুক্তিযুদ্ধে দেশের পক্ষে অনন্য অবদান রাখা দেশের এই কৃতি সন্তান ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। ১১ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। মুহিতের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।