অনুবাদ : মাসুম খলিলী
এক. সর্বশক্তিমানের কাছে আমাদের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করতে এবং আমাদের কাজে আন্তরিক রাখতে প্রার্থনা করুন। ব্যক্তিগতভাবে কিছু করার চেষ্টা করুন। অন্যদের সামনে করা কাজে নির্দোষ হওয়ার প্রবণতা থাকে বেশি। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের ভাল কাজগুলিকে লুকিয়ে রাখতে বলা হয়েছে, যেভাবে আমরা আমাদের পাপগুলিকে লুকিয়ে রাখি।
দুই. সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্যদের দিকে তাকানো এবং তাদের জীবনযাত্রার জন্য আকুল হওয়া অনিবার্য মনে হয়। পরের বার যখন আপনি নিজেকে এটি করতে দেখেন, তখন থামুন এবং চিন্তা করুন যে আপনার জীবনের সাথে তাদের জীবন তুলনা করা ন্যায়সঙ্গত কিনা যখন আপনি তাদের জীবনের একটি অংশ দেখতে পাচ্ছেন যা তারা আপনাকে দেখতে চায়। আপনি পুরো ঘটনা মোটেই জানেন না।
পূনশ্চ
এক: যখনই আপনি কারও দোষ প্রকাশ করতে প্রলুব্ধ হন, থামুন এবং চিন্তা করুন। কল্পনা করুন যে আপনার একটি দোষ গ্রহণ করা এবং এটি সম্পর্কে পুরো বিশ্বকে বলাটা কেমন হবে! আপনি আপনার সাথে যা করতে চান না, তা অন্যের সাথে করবেন না।
দুই: যখন আপনাকে নিচে ফেলে দেয়া হয়, যাই হোক না কেন প্রতিবারই আপনাকে ফিরে আসতে হবে। হাল ছেড়ে দেওয়া কোন বিকল্প নয়। ধৈর্য ধরুন, চলতে থাকুন এবং কখনই পিছনে ফিরে তাকাবেন না। বড় আশীর্বাদ মহা অধ্যবসায়ের সঙ্গে আসে।
তিন: সর্বশক্তিমানকে কখনই ছাড়বেন না। আপনার পরীক্ষার সময় ধৈর্য ধারণ করুন। তিনি আপনার প্রার্থনার উত্তর দেবেন, আপনাকে সাফল্য দেবেন, আপনার অধ্যবসায়ের প্রতিদান দেবেন। মনে রাখবেন, কান্না থামবে, অপেক্ষার প্রহর শীঘ্রই শেষ হবে। আপনি অপেক্ষা করার সময় আপনার বিশ্বাস দৃঢ় রাখুন।
চার. বিশৃঙ্খলার সময়েও যে ভাল জিনিসগুলি ঘটতে পারে তা বিশ্বাস করা কখনই বন্ধ করবেন না। এটি হলো সর্বশক্তিমান কতটা দয়াময় তার পরিচয়; আপনি যখন কোন কিছু প্রত্যাশা করেননি তখনও তিনি তা দিতে পারেন। কখনও কখনও তিনি আপনার জন্য এমন দরজাও খুলে দিতে পারেন যা খোলার জন্য আপনি চেষ্টাই করেননি। এভাবে তার কৃপার তালিকাটি শেষ হবার মতো নয়। সর্বদা তাঁর সম্পর্কে যত ধরনের ভাল চিন্তা তাই করুন!
পাঁচ. সর্বশক্তিমান যেভাবে চান সেভাবেই সব কিছু ঘুরে যাবে। আপনি সব সময় যেভাবে ভাবেন সেভাবে নয়। কোনও সন্দেহ ছাড়াই তাঁকে বিশ্বাস করুন। শয়তান সব সময় আপনার মনে জগাখিচুড়ি চিন্তার উদয় ঘটাবে, ইবলিস কখনই ছুটি নেয় না। অতএব, সজাগ থাকুন এবং যিনি আপনাকে তৈরি করেছেন তার সাথে নিজেকে সর্বদা সংযুক্ত রাখুন।
ছয়. আপনি একের পর এক হতাশায় পড়ে যাচ্ছেন, এর অর্থ এই নয় যে এসব কিছু সামনে আর ভাল হবে না। সর্বশক্তিমানকে বিশ্বাস করুন। তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের সৌন্দর্য হ’ল তিনি আমাদের নিজের চেয়েও আমাদের সম্পর্কে বেশি ভাল জানেন। বিশ্বাস করুন যে, যা কিছু আসবে সব তাঁর নির্ধারিত নির্ভুল সময়ে আসবে!
দ্রষ্টব্য
পৃথিবী যখন আপন কম্পনে প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে। আর পৃথিবী যখন তার ভারসমূহ বের করে দেবে, এবং মানুষ বলবে, ‘এর কি হল?’ সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কারণ তোমার প্রতিপালক তাকে আদেশ করবেন। সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হয়। সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে, সে তা দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে, তাও সে দেখতে পাবে। (সুরা জিলজাল : ১-৮)
যদি জনপদের মানুষগুলো ইমান আনত এবং (আল্লাহকে) ভয় করত, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম। তবে কি জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাদের উপর আসবে রাত্রিকালে, যখন তারা থাকবে ঘুমে মগ্ন? জনপদের মানুষগুলো কি নির্ভয় হয়ে ধরে নিয়েছে যে আমার আজাব তাদের ওপর মধ্যদিনে এসে পড়বে না— তখন তারা খেল-তামাশায় মত্ত থাকবে। কিংবা তারা কি আল্লাহর কলাকৌশল থেকেও নির্ভয় হয়ে গেছে? অথচ আল্লাহর কলাকৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত জাতি ছাড়া অন্য কেউই নিশ্চিত হতে পারে না।’ (সূরা আরাফ : ৯৬-৯৯)
* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি
