মোঃ শোয়াইব আহমেদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির ঘোষিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’র সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন আবু সাদিক কায়েম। শিবিরের প্যানেল ডাকসুতে জয়ী হলে নারীদের নিরাপত্তা কেমন হবে, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির রূপরখো এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভবিষ্যত চিন্তাসহ নানা বিষয়ে ইত্তেফাক ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলেছেন ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম।
শিবির জয়ী হলে ক্যাম্পাসে নারীদের স্বাধীনতায় কোনো শঙ্কা তৈরি হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সাদিক কায়েম বলেন, শিবির ডাকসুতে জয়ী হলে নারীদের স্বাধীন চলাচলে বাধা আসবে— এটি সম্পূর্ণ একটি প্রোপাগান্ডা। আমাদের নেতৃত্বের উপর নারীরা আরও বেশি আস্থাশীল। আগের নির্বাচনগুলোতেও আমাদের প্রার্থীরা নারীদের থেকে বেশি সাড়া পেয়েছেন। যারা আমাদেরকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে পারছে না, তারা আমাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিথ্যা বিষোদগার করছে। আমরা চাই এই ক্যাম্পাসকে নারীদের জন্য আরও বেশি নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে তৈরি করতে। এটি আমাদের প্রতিজ্ঞা।
জোর দিয়ে তিনি বলেন, নারীরা আমাদের বোন, আমাদের মা। সুতরাং তাদেরকে যারা হ্যারেস (উত্ত্যক্ত) করছে তারা একেকজন কালপ্রিট, তারা একেকজন কুলাঙ্গার। তাদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একইসাথে শিবিরের উপর এভাবে একেকটি পক্ষ ব্লেম দিয়ে আলটিমেটলি কুলাঙ্গারদেরকে দায়মুক্তি দিচ্ছে। এই দায়মুক্তি যারা দিচ্ছে তারা খারাপ কাজ করছে। এই কুলাঙ্গারদের যাতে শাস্তির আওতায় আনা যায় সেজন্য আমরা ‘ডিজিটাল বক্স’ চালুর কথা বলেছি। যেখানে সকলে অভিযোগ দিতে পারবে এবং সকল হয়রানির নিষ্পত্তি হবে।
নারীদের আবাসিক সংকটের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন সাদিকে কায়েম। তিনি বলেন, এটা খুবই অপ্রত্যাশিত যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪ বছর পার করলেও আমাদের বোনদের আবাসিক সংকট এখনো নিরসন করতে পারিনি। তাদেরকে বাইরে মেসে থাকতে হচ্ছে। আমি মনে করি, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ সদিচ্ছার অভাব। তাই আমরা এই সংকট নিরসনে কাজ করতে চাই। আমাদের ছাত্র ভাইদের থেকে ছাত্রী বোনদের সমস্যা অনেক বেশি। তাই তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সাদিক বলেন, আমাদের ব্যাপারে আরেকটি প্রোপাগান্ডা রয়েছে অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে। আমরা বলতে চাই, অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছেও আমাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক ভালো। তারা আমাদের সাথে কথা বলছে, আলাপ হচ্ছে। আমি নিজেও ছোটবেলা থেকেই সকল ধর্মের বৈচিত্র্যের মধ্যেই বড় হয়েছি। আমি খাগড়াছড়িতে ছিলাম, সেখানে পাহাড়ি বন্ধু যারা চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছি, একসাথে স্কুলে গেছি। তাদের উৎসবে আমরা যেতাম, ঈদে তারা আমাদের বাসায় আসতো, তাদের বৈসাবি উৎসবে আমরা তাদের ওখানে যেতাম। বৈচিত্র্যের মধ্যে যে সৌন্দর্য সেটি ছোটবেলা থেকেই আমি দেখে এসেছি৷
শিক্ষার্থীরা কেন আপনাদের ভোট দিবে- এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিবির নেতা বলেন, জুলাইয়ের সবচেয়ে ক্রুশিয়াল সময়ে আমরা কাজ করেছি। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী এক বছরে আমরা অসংখ্য কাজ করেছি, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাকে মাথায় নিয়ে অনেক কাজ করেছি। এই কাজ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছি। আমাদের নেতৃত্বের উপর তারা আস্থা রাখতে চায়। এই স্বতঃস্ফূর্ত রেসপন্স, শিক্ষার্থীবান্ধব আমাদের যে চিন্তা এসব তাদেরকে অনেক বেশি আকর্ষিত করছে, তাই তারা আমাদের খুঁজে নেবে বলে আমি আশা করি।
আগামীর বিশ্ববিদ্যালয় কেমন দেখতে চান- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুনভাবে সংস্কারের লক্ষ্যে আমরা ৬৩ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ, গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষার মান, শিক্ষক মূল্যায়ন, শিক্ষক নিয়োগে মেধাকে গুরুত্ব দেওয়া, লাইব্রেরির সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং সকল ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে একসাথে কাজ করতে চাই। আমরা এমন আরও অনেকগুলো সমস্যা আইডেন্টিফাই করেছি, এগুলো সব সমাধান সম্ভব, শুধু প্রয়োজন নৈতিক সদিচ্ছা। আমি মনে করি আমাদের সেই সদিচ্ছা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘাটতি তো থাকবেই, কিন্তু আমাদের অনেক অ্যালামনাই আছে তারা এসব কাজে সাহায্য করতে পারে।